যশোর সদর উপজেলার বীরনারায়ণপুর গ্রামের সরকারি চারশ’ শতক জমি এখনো উদ্ধার হয়নি। এই জমিতে রাস্তা রয়েছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন থেকে মামলার করার নির্দেশনা দেয়া হলেও এক বছরের মধ্যে তা কার্যকর হয়নি। জিপি অফিসের গাফিলতির কারণে বিপুল পরিমাণ সরকারি এ সম্পত্তি উদ্ধার হচ্ছে না। ওই চারশ’ শতক জমি প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের নামে রেকর্ড করে নিয়ে ভোগ করছে প্রভাবশালী একটি চক্র। মামলা মোকাদ্দমা আর অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হবে না বলে এলাকায় প্রচার চালিয়ে এই চক্রটি সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে যারা চেষ্টা চালাচ্ছেন তাদেরকে শাসাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে বীরনারায়ণপুর ও শর্শুনাদহ গ্রামের হাজারো মানুষের যোগাযোগের পথটি রুদ্ধ হয়ে গেছে। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ, মানববন্ধন এমনকি জেলা প্রশাসনের নির্দেশনার পরও মামলা না হওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের পহেলা ডিসেম্বর যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জিপি বরাবর সহকারী কমিশনার সিভিলস্যুট শাখা থেকে একটি নির্দেশনা আসে। যেখানে উল্লেখ করা হয়, বীরনারায়ণপুর মৌজার সিএস ০১ খতিয়ানে ভাগাড় শ্রেণি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল ওই সম্পত্তি। এসএ দাগেও তা বিদ্যমান ছিল। কিন্তু আরএসএ ওই খতিয়ানের ২.২৭ একর জমির অস্তিত্ব পাওয়া না যাওয়ায় তা সরকারের খাস খতিয়ানে ফিরিয়ে আনার জন্যে এলএসটি অথবা দেওয়ানী মামলা করার অনুরোধ জানানো হয় ওইপত্রে। অথচ সেই নির্দেশনার এক বছর পার হলেও জিপি অফিস এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি। ইতিমধ্যে একজন জিপি পরিবর্তন হয়েছেন। তিনি তেমন কোনো কাজ করে যাননি বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ। এসেছেন আরেক জিপি। তিনিও আগের জিপির পথেই হাঁটছেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদের নামে রেকর্ড করিয়ে নিয়ে প্রায় আড়াই যুগ ধরে সরকারি এ রাস্তাটি দখল করে রেখেছে কয়েকজন চিহ্নিত প্রভাবশালী। ১৯৬২ সালের ম্যাপে যশোর সদর উপজেলার ১৪৩ নম্বর মৌজায় ২৬ নম্বর দাগে বীরনারায়ণপুর ঘোষপাড়ার মোড় থেকে আজিমুদ্দিনের লিচু বাগান পর্যন্ত চারশ’ শতক জমির ওপর সরকারি কাঁচা রাস্তা ছিল। এলাকার প্রভাবশালী ১২ জন ব্যক্তি গোটা রাস্তা দখল করে আবাদি জমি বানিয়েছেন। ওই এলাকার আজিমউদ্দিন, আলতাফ, আঞ্জু বেগম, চিত্র ঘোষ, রবীণ, শরিফুল ইসলাম, আব্দুর রব, নিয়ারি বেগম, বাবু, সন্তোষ, আনন্দ, সুভাষসহ ১২ জন ভুয়া রেকর্ড করে ওই রাস্তার মালিকানা দাবি করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, তারা ১৯৮৭ সালে সরকারি আমিন ছব্দুল ইসলামকে চাপ দিয়ে নিজেদের দরিদ্র আত্মীয়দের নামে রাস্তা রেকর্ড করিয়ে নেন। যাদেরকে দরিদ্র সাজানো হয় তারা হলেন, ওই এলাকার জয়নাল খাঁ, লুৎফর রহমান, জাহানারা বেগমসহ ছয়-সাতজন। পরবর্তীতে বিক্রি দেখিয়ে তারা ওই জমি দখলে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, প্রায় আড়াই যুগ ধরে বীরনারায়ণপুরের ওই রাস্তাটি না থাকায় সমস্যার শেষ নেই। এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ১৯৮৭ সালে রাস্তা দখলের পর ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পাননি। তারা এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিে জেলা প্রশাসকের ও ভূমি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে চলতি বছরের গত ১৫ অক্টোবর জিপি কাজী বাহাউদ্দীন ইকবালের সাথে কথা বললে তিনি জানান, করোনার কারণে মামলার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, দু’ সপ্তাহের মধ্যেই মামলা রেকর্ড হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। ফের তার সাথে যোগাযোগ করা হয় পহেলা নভেম্বর। তখন তিনি সাতদিন সময় লাগবে বলে জানান। এরপর কথা হয় ১০ নভেম্বর। তখনো মামলা হয়নি বলে জানান তিনি। বলেন, কাগজপত্র সবই তার বাড়িতে রয়েছে। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে মামলা হবে। এরপর কথা হয় ২৩ নভেম্বর। তিনি বলেন, জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ব্যস্ততার কারণে সম্ভব হচ্ছেনা। তবে, এ মাসেই মামলা রেকর্ড হবে। সর্বশেষ,পহেলা ডিসেম্বর তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে, কেন সময় লাগবে সে বিষয়ে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। এলাকাবাসী জানিয়েছে, সরকারি জমি দখলদার চক্রটি তাদের দখলে রাখতে বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ করছে। বিভিন্ন মহলে দেনদরবারও চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
বিশেষ প্রতিনিধি







