বিশেষ প্রতিনিধি : যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ নেতারা করছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে দুই সদস্যের কমিটির মেয়াদকাল সাড়ে চার বছরের মাথায় এসে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা নিয়েও শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পদ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
আগস্ট মাস শুরু হওয়ার আগের দিন আজ বুধবার (৩১ জুলাই)এই ‘পকেট কমিটি ঘোষনার তোর জোর শুরু হয়েছে বলে নেতা কর্মীরা অভিযোগ করেন। মেয়াদোত্তীর্ণ দুই সদস্যের কমিটি ভেঙে দিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনেরও দাবি জানান তৃণমূল আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়কে পূনরায় সভাপতি ও আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। সে সময় নবনির্বাচিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা মানেননি কেউই। জেলা কমিটি বারবার তাগিদ দিলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হন সভাপতি-সম্পাদক।
এর আগে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন স্বাক্ষরিত বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়। যেখানে স্বাক্ষর ছিল না জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে নানা বিতর্ক। এর দুইদিন পর ২ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের ধানমন্ডির অফিসে আহূত এক জরুরি সভায় কথিত ওই কমিটি বাতিল করা হয়।
শোনা যাচ্ছে আগে কখনো আওয়ামী লীগ করেননি, কিংবা বাঘারপাড়ার রাজনীতিতে কখনো দেখা মেলেনি; এমন ব্যক্তিকে সহসভাপতিসহ সম্পাদকীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হচ্ছে ।
অভিযোগ উঠেছে কমিটিতে নাম লেখাতে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে দেয়া হচ্ছে বড় বড় পদ। সহ-সভাপতি, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এক নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েকটি পদ বিক্রি হয়েছে মোটা অংকে। এক্ষেত্রে মানা হয়নি সিনিয়ার জুনিয়র। এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পদ বন্টন করেছেন বলে অভিযোগ করেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এছাড়া হাসান আলীর নিকট আত্মীয় কয়েকজনকে পদ দেয়া হয়েছে বলেও শোনা যাচ্ছে। হাসান আলীর দুই শ্যালক মারুফ হোসেন ও মনিরুজ্জামান তরুণ, ভাই ভাই ফুলমিয়াসহ নিকটাত্মীয় কয়েকজনকে অপ্রকাশিত ওই কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আবার এই কমিটিতে রাখা হচ্ছে না আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগে থাকা বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতাকে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
অপরদিকে দিকে সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায় তাঁর পছন্দের নেতাদের কমিটিতে স্থান দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে বাঘারপাড়ার রাজনীতিতে কোণঠাসা রনজিৎ রায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে আধিপত্য বিস্তার করে রাজনীতির মাঠে ফেরার চেষ্টা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, ‘ তৃণমূলের দাবি মেনে সম্মেলন না দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ নেতাদের মাধ্যমেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে আরও কয়েক বছর নেতৃত্বে থাকার বন্দোবস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। এতে নতুন নেতৃত্বপ্রত্যাশী তরুণ নেতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ হতে যাওয়া কমিটিতে কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ারও আশঙ্কা করছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে নাম লেখানোর বিষয়টি সত্য নয়’। যোগ্যতা অনুযায়ী কমিটিতে নাম দেয়া হয়েছে’।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায়ের সাথে যোগাযোগ চেস্টা করে হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।







