শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ মণিরামপুর উপজেলার ডাঙ্গামহিষদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৯ বছর নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি না থাকলেও প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার যোগসাজসে জালিয়াতির মাধ্যমে কমিটি গঠন। ভূয়া কমিটির মাধ্যমে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে তড়িঘড়ি করে বিল্লাল হোসেনকে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত কমিটি না থাকলেও চলতি মাসে ১০ জুলাই বেতন বিলে স্বাক্ষর করেছেন ইউএনও জাকির হোসেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জনরোষে পড়ে। ক্ষিপ্ত এলাকাবাসী সোমবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে এসে বিক্ষোভ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্রে জানাযায়, উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গামহিষদিয়া-পাড়িয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা থাকার কারনে ২০১৫ সাল থেকে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন হয়নি। তবে মামলা নিষ্পত্তির পর যশোর শিক্ষা বোর্ড ২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ছয় মাসের জন্য একটি এডহক কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে সভাপতি করা হয় প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের ছোটভাই আনারুল ইসলামকে। কিন্তু এ কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ন হলেও এলাকায় বিরোধ দেখা দেওয়ায় আর কোন কমিটি গঠন করেনি। যে কারণে প্রতিমাসে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রতিস্বাক্ষর নিয়ে ব্যাংক থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন উত্তোলন করে আসছে। সর্বশেষ ১০ জুলাই জুন মাসের বেতনশিটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন প্রতিস্বাক্ষর করেন। ১৮ জানুয়ারী ২৪ইং তারিখে বিদ্যলয়ের নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করার জন্য প্রিজাউডিং অফিসার নিযুক্ত হন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা (বিআরডিপি) বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ। তিনি ২৩ জানুয়ারী কমিটি গঠনের জন্য তফসিল ঘোষনা করেন এবং ১৭ ফেব্রয়ারী ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন থাকে। এ দিকে চলতি বছরের ৩ আগষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার চাকুরি থেকে অবসরে যাবেন। যার কারণে তড়িঘড়ি করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সহায়তায় প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জালিয়াতির মাধ্যমে তার ছোটভাই আনারুল ইসলামকে আবারো সভাপতি করে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেন। এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে যাদের নাম অন্তরভুক্ত করা হয়েছে তারা কেউ এ বিষয়ে অবহিত নয়। শিক্ষক প্রতিনিধি আকরাম হোসেন, প্রমিলা রায়, তাপসী বিশ্বাস বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাদের নিয়ে কখনও মিটিং করেননি এমনকি কোন রেজুলেশনেও আমরা স্বাক্ষর করিনি। ২৭ জুলাই বিকেলে অতি গোপনে কতিথ নিয়োগবোর্ড করে প্রধান শিক্ষকের চাচাত শ্যালক বিল্লাল হোসেনকে সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে চাকুরি দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। জনরোষ থেকে বাচতে প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান নাটক শুরু করেছে বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক মোবাইল ফোনে জানান, এখনও কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
প্রিজাউডিং অফিসার বিশ্বজিৎ কুমার ঘোষ জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী অভিভাবক ও শিক্ষক প্রতিনিধি কোন পদে প্রতিদ্বদ্ধী প্রার্থী ছিলো না। ফলে বিনা প্রতিদ্বদ্ধীতায় সদস্যরা নির্বাচিত হয়েছে। এরপর সভাপতি নির্বাচনের জন্য গত ২২ ও ২৪ ফেব্রæয়ারী তারিখে দুই বার নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু নিধারিত দিনে মাত্র তিন জন সদস্য ছাড়া বাকিরা উপস্থিত হননি এমনি কি প্রধান শিক্ষকও উপস্থিত ছিলেন না। অপরদিকে নিয়োগবোর্ডের কর্মকর্তা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার নিয়োগ দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত ২৮ মার্র্চ তারিখে যশোর বোর্ডের অনুমোদনকৃত নিয়মিত কমিটির একটি কপি প্রদর্শনের পর নিয়োগবোর্ড সম্পন্ন করা হয়। এতে কোনপ্রকার অনিয়ম করা হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন বলেন, বিষয়টি জানার পর নিয়োগবোর্ড স্থগিত করে প্রধান শিক্ষককে হাজির করতে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আর কে-০২







