শফিয়ার রহমান, মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ মণিরামপুরে বেসরকারী মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসাগুলোর নিয়োগ বাণিজ্যের নেপথ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। এছাড়াও ম্যানিজিং কমিটি গঠন নিয়ে সুবিধা ভোগীদের লবিং গ্রুপিং এ শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত মান রশাতলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। নেতাদের মাঝে লবিং গ্রুপিং এর সুযোগে ফায়দা লুটছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার। আর এ সুবিধা নিতেই তিনি টানা ৬ বছর অবস্থান করছেন এ উপজেলাতে।
এমপিও ভূক্ত ১১৮ মাধ্যমিক ও ৬৪ মাদ্রাসার সৃষ্ট তিন পদে নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্ন কমীর বিপরীতে প্রায় ৫’শতাধিক কর্মচারী ছাড়াও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগ অব্যহত রয়েছে। এসুযোগে শিক্ষা কর্মর্কতা নিয়োগের বিভিন্ন অজুহাত দেখে আরো অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে, আর টাকা না দিলে বিল আসতে অনেক দেরি হয় বলে অভিযোগ নিয়োগকৃতদের।
সূত্র জানাযায়, বিকাশ চন্দ্র সরকার ২০১৮ সালে পহেলা আগষ্ট মণিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেণ। উপজেলায় এমপিও ভুক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১১৮ ও মাদ্রাসা ৬৪। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতি পদে ১৫ লাখ টাকা, প্রধান শিক্ষক ১০ লাখ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক ১০/১২ লাখ ছাড়াও ল্যাব সহকারী পদে ১৫ লাখ টাকা নেওয়া অভিযোগ উঠেছে। বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন অর্থ পেয়েছে এমন নজির চোখে পড়েনি। এসব নিয়োগের কিছু টাকা ম্যানেজিং কমিটির সুবিধাভোগীদের মাঝেই ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে। যোগদানের পর থেকে নিয়োগ বাণিজ্যের অর্থের নিধারিত একটি অংশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকারকে দিতে হয়। নিয়োগ বোর্ড করতে কর্মচারী পদে শিক্ষা অফিসারকে সর্বনিন্ম ১ লক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা দিতে হয়। চাহিদা মত অর্থ যোগান না দিতে পারলে বেতন বিল ধরানোর ক্ষেত্রে বিড়ম্বনাার শিকার হতে হয়। টানা ৬ বছরে এসব অর্থ দিয়েই তিনি যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকায় বিলাশ বহুতল ভবন বাড়ি নির্মানসহ নানা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছেন ওই কর্মকর্তা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে একাধিক মামলার বিবাদী হয়েছেন মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার। উপজেলার “বোয়ালীঘাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের” সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আলোচিত ভূয়া নিবন্ধনধারী শিক্ষক আব্দুল মালেক এর নিয়োগ নিয়ে ২৩ মে আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলার বাদী ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য উত্তরপাড়া গ্রামের মোস্তফা জামান মিলন। মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৫ লাখ টাকা বিনিময়ে ল্যাব সহকারী পদে নয়ন মন্ডল নামে একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ এনে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানের্জিং কমিটির সদস্য আলী আজম বাচ্চু বাদী হয়ে ৯ জুন আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় বিবাদী করা হয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকারসহ নিয়োগ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য ও কমিটি গঠন নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা দূর্বল অবস্থানে দিকে যাচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক শিক্ষক বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের এসব অর্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন কাজে আসছে না। বরং এক শ্রেণীর সুবিধা ভোগী ব্যক্তিরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। যে কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কমিটি গঠন করতেও হিমশিম খাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক সহ কমিটি গঠন কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয় গুলোর ম্যানের্জিং কমিটির ব্যক্তিরা ভাল প্রার্থীকে নিয়োগ না দিলে সেক্ষেত্রে শিক্ষা অঙ্গনে কিছুটা প্রভাব পড়ে। নিয়োগ বাণিজ্যের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি আগে নিয়োগ বাণিজ্য হত, তবে এখন হয় কিনা জানা নেই। মনিরামপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু বলেন, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন নিয়ে মামলা হয়েছে। অতি গোপনে নিয়োগ বোর্ড করা হয়েছে যা আপত্তিকর। আগামীতে এধরনের কর্মকান্ডের সুযোগ দেওয়া হবে না।
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, তিনি নিজেকে দুর্নীতি মুক্ত দাবী করে বলেন, নিয়োগে যারা বাণিজ্য করে তারা তো করেই। যেখানেই নিয়োগ আছে, সেখানে কমিটি করতে গেলেই মামলা। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদের নির্ধারিত মিটিংয়ে জুরালো ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এ উপজেলার ৭০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও ম্যানিজিং কমিটি গঠন নিয়ে মামলা হয়েছে। আর এসব মামলার কারণে শিক্ষা অঙ্গনে স্বাভাবিকভাবেই প্রভাব পড়ছে। এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহে। তবে যশোর শহরে নতুন একটি বাড়ি করে সম্প্রতি সেখানে বসবাস করছি।
আর কে-০২







