সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা জাকিয়া সুলতানা লাকি কেবল সুদখোর না, নিজে ওই গ্রামের গরিবের চাল উত্তোলন করে খাচ্ছেন। সহজ সরল মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করেন লাকি। এরপর সেই আইডি কার্ড ব্যবহার করে চাল তুলে নিতো লাকিসহ তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে লাকি সিন্ডিকেটের গরিব মানুষের নামে বরাদ্দ হওয়া চাল উত্তোলনের অজানা কাহিনী। এদিকে,সুদখোর লাকির বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে শিক্ষা বিভাগ। আগামী ২৯ নভেম্বর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম খোলাডাঙ্গা এলাকায় বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করবে বলে জেলা শিক্ষা অফিস নিশ্চিত করেছে। সুদখোর লাকির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় লোকজন। তারা লাকি ও তার সহযোগীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া, দু’ যুগ ধরে একই প্রতিষ্ঠানে থেকে নানা ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত খোলাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে দ্রুত অপসারণের দাবি জানিয়েছেন স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থী,অভিভাবকসহ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা।
যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের খোলাডাঙ্গা গ্রামের স্বামীহারা রোকেয়া খাতুন। রোকেয়া খাতুনের কাছ থেকে ভোটার আইডিকার্ডের ফটোকপিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ১০ টাকার দরের চালের আবেদন করেন লাকি। এরপর গত চার বছর ধরে লাকি অসহায় রোকেয়ার নামে বরাদ্দ হওয়া চাল তুলে খেয়েছেন এই সুদখোর লাকি। যা নিয়ে এলাকার মানুষ ছি! ছি! করেছে।
সরেজমিনে খোলাডাঙ্গায় গিয়ে কথা হয় অসহায় বৃদ্ধা রোকেয়া খাতুনের সাথে। তিনি জানান, ২০ বছর আগে তার স্বামী শফিউল মোস্তফা মারা গেছেন। সংসারে রয়েছে টানাপড়েন। তিনি জানতে পারেন ২০১৬ সালে লাকির স্বামী সবুরের দায়িত্বে ১০ টাকার চাল দেয়া হবে। একথা জানার পর রোকেয়া খাতুন স্কুল শিক্ষিকা লাকিকে একটি কার্ড করে দেয়ার জন্যে বলেন। এরপর লাকি অসহায় রোকেয়া খাতুনের কাছ থেকে কাগজপত্র নেন। কিন্তু সেই কার্ড গত চার বছরে হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন রোকেয়া। এরমধ্যে তাকে কার্ড হয়নি বলে জানানো হয়। ধূর্ত লাকি অসহায় বৃদ্ধা রোকেয়ার স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্যে মোবাইল ফোন দিয়ে তার একটি ছবি তুলে নেন। বৃদ্ধার অভিযোগের পর কথা হয়, ৫নং ওয়ার্ডে ১০ টাকার চাল বিতরণকারী ডিলার সুজলপুর জামতলা মোড়ের নুরইসলামের সাথে। তিনি জানান, ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট থেকে রোকেয়া খাতুনের নামে কার্ডের মাধ্যমে চাল তোলা হচ্ছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় কার্ড নিয়ে এক মহিলা চাল তুলে নিয়ে গেছেন। তিনি আরও জানান, বছর পাঁচবারে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। এ বছর ছয়বার দেয়া হচ্ছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে কথা হয় খোলাডাঙ্গার নুরইসলামের ছেলে শুকুর আলী, একই এলাকার হানিফ বিশ্বাসের ছেলে শাহীন হোসেন, সালামের ছেলে সেলিম হোসেন, বৃদ্ধ আবু সাইদ, টগর মুন্সির ছেলে আজাদ মুন্সি, মৃত ফজলুল করিমের ছেলে আবু আসাদ, আবু সাইদ, মৃত এহিয়ারের ছেলে সোয়েব মুন্সিসহ কয়েকজনের সাথে। তাদের অভিযোগ, সুদখোর লাকির অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এমন কোনো কাজ নেই যা লাকি, সবুর, ইমন আর সবুজ করেনা।
সবুরের রাজনৈতিক ক্ষমতা, ইমনের সন্ত্রাসী বাহিনী, সবুজের রয়েছে আইনি সেবা! এসব কারণে লাকির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারও নেই। তারা বলেন, শুধু রোকেয়ার কার্ড না, এ ধরনের অসংখ্য মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে লাকি চাল উত্তোলন করে আসছেন। তাদের দাবি, সুষ্ঠু তদন্ত করলে কেবল সুদে কারবার কিংবা চালচুরি না, এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে।
লাকির অভিযোগের বিষয়ে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন,শিক্ষিকা লাকির বিরুদ্ধে সুদের লেনদেন, ভুয়া স্ট্যাম্প দেখিয়ে টাকা দাবি, টাকা না দিলে ভয়ভীতি দেখিয়ে মারপিট,হত্যার হুমকির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। আগামী ২৯ নভেম্বর তারা সরেজমিন তদন্ত করে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মি.সাজ্জাদ।
বিশেষ প্রতিনিধি
শুধু সুদেকারবার নয়, গরীবের চাল চুরির সাথেও জড়িত খোলাডাঙ্গার সেই লাকি

আরো পড়ুন






