Saturday, December 6, 2025

মণিরামপুর বিএনপিতে বিদ্রোহের সুর

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ বিএনপি নেতা শহীদ ইকবালের বিরুদ্ধে

বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করলেও মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক শহীদ ইকবালের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলুর পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচনী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এই ইস্যুতে মণিরামপুর বিএনপিতে বাজতে শুরু করেছে বিদ্রোহের সুর । দলের উপজেলা বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই ঘটনার জন্য শহীদ ইকবালের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

গত ৮ মে মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতা শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল ও তার অনুসারি নেতাকর্মীরা আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলুর আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শহীদ ইকবাল বরাবরই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে আওয়ামীলীগ নেতাদের পক্ষে কাজ করেন। বিশেষ করে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আওয়ামীলীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বপন ভট্রাচার্যের কলস প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ও তার সমর্থকরা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বপন ভট্রাচার্য্যরে নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন । গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি তার কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন।

মণিরামপুর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ডাক্তার আলতাফ হোসেন বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে বার বার শহীদ ইকবাল ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে আঁতাত করেছেন। সর্বশেষ গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে শহীদ ইকবাল ও তার অনুসারী নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলুর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়েন। ফলে মণিরামপুর বিএনপির ত্যাগী ও নিবেদিত নেতাকর্মীরা হুমকির মুখে পড়েছেন। যার কারনে মণিরামপুরে সরকার বিরোধী আন্দোলন চরমভাবে বাঁধাগস্থ হচ্ছে। মণিরামপুর থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য হারুন অর রশীদ বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ ইকবাল ও তার ভাই নিস্তার ফারুক সবসময় ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্যই দলীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিতে কুন্ঠাবোধ করেন না। বিএনপি দলীয় ভাবে নির্বাচন বর্জনের ডাক দিলেও শহীদ ইকবাল ও তার অনুসারীরা সেই সব নির্বাচনী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হয়ে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করেছেন বার বার।

মণিরামপুর উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মোমিনুর রহমান বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ ইকবালের কারনে মণিরামপুরে দল ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এখানকার নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছেন না। কেবল মাত্র শহীদ ইকবালের আওয়ামী লেজুড়বৃত্তির কারনে দলীয় ভাবে নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। হামলা মামলার শিকার হচ্ছেন। বার বার শহীদ ইকবাল দলের সাথে বেঈমানী করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তার বিরুদ্ধে দল কোন সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এর ফলে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক প্রবীণ রাজনিিতক অধ্যাপক নার্গিস বেগমসহ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ মণিরামপুরে সভা করে নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত না হওয়ার আহবান জানান। কিন্তু বিএনপি নেতা শহীদ ইকবাল ও তার অনুসারীরা নেতৃবৃন্দের সেই আহবান উপক্ষো করে আনারস প্রতীকের প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলুর পক্ষে অবস্থান নেন। এমনকি উপজেলা বিএনপির কার্যালয়কে আনারস প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সব জানার পরও জেলা বিএনপি শহীদ ইকবাল ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দল ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নেতাকর্মীরা হচ্ছেন বিভ্রান্ত।

মণিরামপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মাসুদ গাজী বলেন, একজন মাত্র নেতার কারনে মণিরামপুরে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। বার বার তিনি দলের সাথে বেঈমানী করছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলকে ক্ষতিগ্রস্থ করছেন। দলের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করছেন। বার বার অভিযোগ দেওয়ার পরও অজ্ঞাত কারনে জেলা বিএনপি এই বেঈমানীর কোন বিচার করছেন না। যার ফলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নেতাকর্মীরা হচ্ছেন বিভ্রান্ত। তিনি আরো বলেন, গত ৮ মে নির্বাচনের পর শহীদ ইকবালের দলীয় সিদ্ধান্ত বিরোধী কর্মকান্ডের কারনে কমপক্ষে ৫শ’ নেতাকর্মী ইতিমধ্যে বিএনপি ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারন এ্যাড. শহীদ ইকবালের বিতর্কীত কর্মকান্ডে সবাই বিরক্ত। দলের সাধারণ কর্মী সমর্থকরা বলাবলি করছেন, মণিরামপুর বিএনপির নেতাদের কোন নীতি নৈতিকতা নেই। দ্রত শহীদ ইকবালের বিরুদ্ধে দলের জেলা কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জানাবেন বলে জানান এই নেতা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন নেতা বলেন, শহীদ ইকবালের সহোদর থানা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ৬নং মণিরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নিস্তার ফারুক, রোহিতা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মোঃ মনির হোসেন,হরিদাসকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়কআনিছুর রহমান ও ইলয়াছ হোসেনসহ এ্যাড. শহীদ ইকবালের অনুসারী নেতাকর্মীরা সরাসরি আনারস প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেছেন । তারা বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আনারস প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন। আর এসব কর্মকান্ডে পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছেন এ্যাড. শহীদ ইকবাল।

সূত্র বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সাথে অগণতান্ত্রিক এসব নির্বাচনে দলীয় কোন নেতাকর্মী যন অংশ গ্রহণ না করেন সে ব্যাপারে দল কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে । কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা বিএনপি দফায় দফায় নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করে ভোট বর্জনের আহবান জানান। কিন্তু দলীয় এসব সিদ্ধান্ত অমান্য করে এ্যাড. শহীদ ইকবাল বার বার নির্বাচনী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন। বিষয়ে জানতে মণিরামপুর বিএনপির আহবায়ক এ্যাড. শহীদ ইকবাল এর সাথে সেল ফোনে বার বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে শহীদ ইকবালের ভাই নিস্তার ফারুক বলেন, চিকিৎসার জন্য তার ভাই উপজেলা নির্বাচনের পরের দিনই ভারতে গেছেন।

তিনি এসব অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এসবই প্রপাগান্ডা। তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এসব কুৎসা রটনা করছে। তার ভাই এবং তিনি কখনো দলীয় কোন সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোন কাজ করেননি। দল যেহেতু এই সরকারের অধিনে যে কোন নির্বাচন ও নির্বাচনী কার্যক্রম এবং ভোট বর্জনের ঘোষনা দিয়েছে। সেহেতু তারা কখনো কোন নির্বাচনে কারোর পক্ষেই মাঠে কাজ করেননি। গত উপজেলা নির্বাচনেও তারা ভোট বর্জনের সব রকমের কর্মসূচী মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন এবং শতভাগ সফলও হয়েছেন। কারন গত সংসদ নির্বাচনের চেয়ে উপজেলা নির্বাচনে প্রায় ৫০ হাজার ভোট কম কাষ্ট হয়েছে। এটা বিএনপির ভোট বর্জনের ফসল বলেই তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, তার ভাই শহীদ ইকবাল চিকিৎসার জন্য ভারতে রয়েছেন। তিনি দেশে ফিরলে এসব প্রপাগান্ডার বিরুদ্ধে আইনানুগ ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এ্যাড. শহীদ ইকবালের প্রকাশ্যে গত উপজেলা নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার বিষয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, এ্যাড. শহীদ ইকবালের বিরুদ্ধে এখনো কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। আর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির কোন নেতাকর্মীরই কারোর পক্ষে নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করার সুযোগ নেই। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে যদি অভিযোগ সত্য প্রমানিত হয় তবে অবশ্যই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর