Saturday, December 6, 2025

সুদখোর লাকিই শুধু নয়,তার ইন্দনে সিন্ডিকেটের সদস্যরাও করেছেন আলোর বিরুদ্ধে মামলা

সুদের চাপে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করা খোলাডাঙ্গার আলোর বিরুদ্ধে সুদখোর লাকিই শুধু না, তার সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়েও আদালতে মামলা করিয়েছেন। এছাড়াও অযথা উকিল নোটিশ দিয়েও হয়রানি করেছেন এই সুদখোর লাকি। নিজে হয়েছেন অন্যের মামলার সাক্ষীও। এসব কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েই আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ভুক্তভোগী আলো।অনুসন্ধানে জানা যায়, যশোরের চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে লাকির দায়ের করা মামলার তিন নম্বর সাক্ষী খোলাডাঙ্গা গ্রামের মিলন বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন সবুজ। পেশায় তিনি আইনজীবী সহকারী। অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগী আলোর স্বাক্ষর জাল করে স্ট্যাম্প তৈরির প্রধান হোতা এই সবুজ। তার স্ত্রী আমেনা খাতুন এ মামলার চার নম্বর সাক্ষী। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, চলতি বছরের ২ নভেম্বর আইনজীবী সহকারী সবুজ আলেয়া সুলতানা আলোর নামে আদালতে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। তার অভিযোগ, ২০১৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একটি সমিতি থেকে লোন নিয়ে তিনি দু’ লাখ টাকা আলোকে দিয়েছেন। যা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও আলো সেই টাকা ফেরত না দেয়ায় চার বছর পর আদালতে তিনি মামলা করেন। তার এই মামলার অন্যতম সাক্ষী হয়েছেন সুদখোর লাকি। এছাড়া, সবুজের মামলার অপর সাক্ষী তারই স্ত্রী আমেনা খাতুন। অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে আসে, সুদখোর লাকির প্ররোচনায় মামলার সাক্ষী সবুজের স্ত্রী আমেনা খাতুন আলোকে হয়রানি করেছেন। লিগ্যাল নোটিশে তার দাবি, চলতি বছর তিনি আলোকে ৪৬ কিস্তিতে একলাখ টাকা ধার দিয়েছেন। সেখান থেকে ২৫শ’ টাকা করে আলো ১২ কিস্তির টাকা অর্থাৎ ৩০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন। বাকি ৩৪ কিস্তির ৮৫ হাজার টাকা ফেরত দিচ্ছেন না। যদিও এক লাখে ১৫ হাজার টাকা সুদ নিচ্ছেন সবুজের স্ত্রী। ওই টাকা আদায়ে আমেনা খাতুন আলোকে উকিল নোটিশ করে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছিলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আত্মহত্যার চেষ্টাকারী আলো ২০১৬ সালে আমেনার স্বামী সবুজের কাছ থেকে নেয়া দু’ লাখ টাকা ফেরত দেয়নি বলে সবুজ আলোর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। সেখানে লাকি ও আমেনা সাক্ষী। আবার আমেনা নিজেই উকিল নোটিশে বলছেন, ২০২০ সালের ২ মার্চ আলোকে তিনি নিজেই সমিতি থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছেন। যেখানে ২০১৬ সালে আমেনার স্বামীর দু’ লাখ টাকা আলো ফেরত দিচ্ছেন না উল্লেখ করেছেন সেখানে তার স্ত্রীর নতুন করে টাকা দেয়ার বিষয়টি অবান্তর বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। সবগুলো মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন আব্দুল্লাহ হিল কাফী মিলন। এই আইনজীবীর সাথে সুদখোর লাকির স্বামী সবুরের রয়েছে দহরম মহরম সম্পর্ক। শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টায় একটি মামলার সাক্ষী এবং আরেকটি মামলার বাদী সবুজের সাথে কথা হয় আব্দুল্লাহ আল মামুন সবুজের। এ সময় সবুজের সাথে সাক্ষাৎ করতে জজ আদালতের সামনের চায়ের দোকানে যান এ প্রতিবেদক। এ সময় ২৫ মিনিটের মধ্যে সবুজের ফোনে সুদখোর লাকির কল আসে তিনবার ও তার স্বামী সবুরের কল আসে দু’বার। বিষয়টি সবুজ অকপটে স্বীকারও করেন। ফোনালাপে নতুন করে ষড়যন্ত্র করার কথা বলেন লাকি। এ সময় সবুজ বলেন, লাকির কথায় তিনি সাক্ষী হয়েছেন। ২০১৬ সালে আলোকে টাকা দেয়ার পর তা ফেরত না পেয়ে তার স্ত্রী আবার লাখ টাকা ধার দিলেন কেন-এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি সবুজ। আত্মহত্যার চেষ্টাকারী আলেয়া সুলতানা আলো বলেন, তিনি সুদখোর লাকির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। নিজের জমানো টাকা, স্বামীর পেনশনের টাকা এবং বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে লাকির হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। তাতেও ক্ষ্যান্ত হননি লাকি। হত্যার হুমকিও দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে নিজের থেকেই মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছিলেন তিনি। এদিকে একটি মানবাধিকার সংগঠনের সাত সদস্যের আইনজীবীর একটি টিম সুদখোর লাকির অমানবিক বিষয়টি খতিয়ে দেখতে খোলাডাঙ্গায় সরেজমিন তদন্ত করবে বলে গ্রামের কাগজকে জানানো হয়েছে।

বিশেষ প্রতিনিধি

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর