নিজস্ব প্রতিবেদক।। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার সৈয়দপাড়া গ্রামে,রেললাইনের পাশে রেলওয়ের জমি ডিসিআর কেটে প্রাচীর দিয়ে বসতবাড়ির চলাচলের রাস্তা বন্ধ এবং ডিসিআর কাটার কথা বলে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে ওই গ্রামের সালমা খাতুন (৪২) এবং তার স্বামী কওছার মোল্লা (৬০) অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন মহলকে হাত করে এ ভুমি দখলের তান্ডব চালাচ্ছেন। ফলে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা গ্রাম।
সরেজমিনে রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকালে সৈয়দপারা গ্রামে ঢুকতেই সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে প্রাইভেট কারে করে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়ার চেষ্টা করছিলেন অভিযুক্ত কওছার মোল্লা এবং তার স্ত্রী সালমা খাতুন। তবে তার আগেই সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে কওছার মোল্লা বলেন, আমার জমি আমি দীর্ঘ দশ বছর কেচ চালিয়ে কোর্ট থেকে রায় পেয়েছি। তারপর আমি জমি কিনেছি। জমি কেনার পরে বাদী পক্ষ আবারও আপিল করেছে। সেই আপিলের রায় আমার পক্ষে আসে। আর রেলের জমিটা ডিসিআর কাটা। এখানে দুটি লাইসেন্স হলো কৃষি আর বানিজ্যিক। আর সে কারনে আমি এখানে বানিজ্যিক অবকাঠামো করতে পারি। আমি অবৈধ কিছু করলে রেল কতৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবে।
বসতবাড়ির রাস্তা বন্ধ করার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এখানে একটি পরিবার আছে। তারা আমার প্রাচীরের গেট দিয়ে যাতায়াত করছে।
কওছার মোল্লার স্ত্রী সালমা খাতুন বলেন, কোর্টের রায় পাওয়ার পরে আমি জমিটি ক্রয় করি। এরপর দেখি আমার জমির সামনের অংশে রেলওয়ের সরকারি জমি। এজন্য আমি সামনের সরকারি জমিটি ডিসিআর কেটে নিয়েছি। এ সময় তিনি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,এগুলো সব বানোয়াট, মিথ্যা কথা।
কওছার মোল্লার প্রাচীর ঘেরা জমির মধ্যে প্রবেশ করে দেখা যায়, তার ডিসিআর কাটা অংশে তিনি বসতবাড়ির ঘর আকৃতির দালান নির্মাণের কাজ চালাচ্ছেন। এছাড়াও তার প্রাচীর ঘেরা অংশে খোরশেদ আলী গাজি এবং জমসেদ আলী গাজির বসতবাড়ি রয়েছে। এ দুটি পরিবারের প্রায় ১২ জন সদস্যের বর্তমানে চলাচলের পথই নেই। শুধু তাই নয়, কওছার মোল্লা প্রচীর ঘিরে জমি দখলের জন্য সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের গাছ কেটে ফাঁকা করেছেন। প্রাচীর দেওয়ার সময় বাধা দিলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দিয়ে হুমকি ধামকী দিয়েছেন কওছার মোল্লা এবং স্ত্রী সালমা খাতুন।
ভুক্তভোগী খোরশেদ আলী গাজী বলেন, আমার ৯৮ দাগে ৮৮ শতক জমি রয়েছে। আমার জমির সামনে দিয়ে যশোর- বেনাপোলের রেললাইন। ওই জমির ৩০ শতক খাস জমি কওছার মোল্লা এবং তার স্ত্রী রেলওয়ে কতৃপক্ষের কাছ থেকে ডিসিআর কেটে নিয়েছে। তারা জবরদখল ভাবে প্রচীর তুলে আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয় এখানে অনান্য অসহায় বাসিন্দাদের সরকারি জমি থেকে উচ্ছেদ করে দখল করার চেষ্টা করছে।
জমসেদ আলী নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার মালিকানা জমি পাঁচ শতক। কওছার মোল্লা জমি ডিসিআর কেটে প্রাচীল দিয়ে ঘিরে এখন আমার পাঁচ শতক জমিও অবৈধ ভাবে দখল করেছে। আমার জমিতে চালচলের পথও বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে প্রতিবাদী সুরে বলেন, আমাদের ভিটেমাটি নেই সেজন্য আমরা সরকারি জায়গায় থাকি। সেখানে জদি ডিসিআর কাটার নামে প্রভাবশালী কেউ জমি দখল করে বা আমাদের উচ্ছেদ করে দেয় তাহলে আমরা যাবো কোথায়?
তারা বলেন, কওছার মোল্লা এবং তার স্ত্রী আশাপাশের আরও বাসিন্দাদের উচ্ছেদ করে ডিসিআর কেটে দখল করার চেষ্টা করছিল। গ্রামে কয়েকজন বাঁধা দেওয়ায় তারা তাদের উচ্ছেদ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। কওছার মোল্লার টাকা আছে তাই তিনি গুন্ডাপান্ডা দিয়ে আমাদের ভয় দেখায়। এর একটা সুরহা না হলে আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।
জসিম শেখ নামে সেখানকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের যার যার বাড়ির সামনে রেলওয়ের জায়গার ডিসিআর কেটে দেওয়ার কথা বলে আমাদের কাছ থেকে ৩৫ হাজার করে টাকা নিয়েছে কওছার মোল্লা। এরপর আমাদের ডিসিআর কেটে না দিয়ে নিজের নামে ডিসিআর কেটে নিয়েছে তিনি। এখন আমাদের উচ্ছেদের জন্য পায়তারা করছে।
এদিকে ঘটনাস্থলেই কওছার মোল্লার নিকট জমির ডিসিআর কাটা কপি দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
এ বিষয়ে যশোর রেলওয়ের ১নং কাচারির সার্ভেয়ার আব্দুল মতিনের বক্তব্য আনতে গিয়ে দেখা যায়, কওছার মোল্লা এবং সালমা খাতুন সেখানে লাইসেন্স নবায়নের জন্য উপস্থিত হয়েছেন। গ্রাম বাসীর অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আব্দুল মতিন বলেন, রেলওয়ের জমি কওছার মোল্লাকে লিজ দেওয়া হয়েছে। পাকশী থেকে তারা ২০২০ সালে লিজ নেয়। আজকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত লাইসেন্স ফি জমা দিতে আমার কাছে এসেছে। তিনি লাইসেন্স নিয়েছে। সেখানে তিনি কৃষি সংশ্লিষ্ট স্থাপনা করতে পারে। আমি সেখানে নিয়মিত যাই এবং খোজখবর নিয়ে থাকি।
রাতদিন সংবাদ/জয়-০৪







