যশোর-৩ (সদর) আসন থেকেই মূলত জেলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই যশোরের রাজনীতিতে যশোর-৩ আসন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ১৫টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে যশোরের এই আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৮০ হাজার। এই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ। কিন্তু তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী এবার যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা মোহিত কুমার নাথ।
সাধারণ ভোটারদের ভাবনা নির্বাচন সুুষ্ঠু হলে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে সর্বপ্রথম মনোনয়ন পান কাজী নাবিল আহমেদ। সে সময় এই আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পাননি। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে মনোনয়ন পান কাজী নাবিল আহমেদ। সেবারও এই আসনে মনোনয়ন চান শাহীন চাকলাদার। কিন্তু পাননি।
তাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে কাজী নাবিল আহমেদের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। তবে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের এমপি ইসমাত আরা সাদেক মারা গেলে ওই আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পান শাহীন চাকলাদার। এরপর থেকে শহরের রাজনীতি ছেড়ে শাহীন চাকলাদার চলে যান কেশবপুরে। যশোর সদর আসনে শাহীন চাকলাদারের অধিকাংশ অনুসারী যোগদান করেন কাজী নাবিল আহমেদের গ্রুপে। আর একটি অংশ রাজনীতির মাঠে আলাদাভাবে সরব থাকেন।
দীর্ঘদিন ধরে কাজী নাবিল আহমেদ যশোর-৩-এর সংসদ সদস্য হলেও তিনি অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন। মাঝেমধ্যে এসে কিছু সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। ফলে সাধারণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কাজী নাবিল আহমেদের অনুপস্থিতিতে যারা যশোর সদরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেখাশোনা করেন, সাধারণ কর্মীদের অভিযোগ, তারা কর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন না। এ ছাড়া শহরকেন্দ্রিক যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে, তারা সবাই এখন কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গে রয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের দেখা যায়। এ নিয়ে ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগের শেষ নেই। এমপির কাছে কোনো কাজে গিয়ে তারা এমপির বাড়িতে ঢুকতে পারেন না।
আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন কাজী নাবিল আহমেদ ছাড়াও পৌরসভার সাবেক মেয়র এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন এবং যশোর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ। শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন পান কাজী নাবিল আহমেদ। জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর পক্ষে কর্মীরা মনোনয়নপত্র কিনলেও তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় প্রতীক ছাড়া তিনি নির্বাচন করতে চান না। কারণ ছোটবেলা থেকেই তার পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
যদিও শহরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চেয়েছিলেন তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করুন। কারণ বিগত পৌরসভার মেয়র থাকাকালে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছিল পৌরসভায়। আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন মনোনয়নপত্র কিনলেও যাচাই-বাছাইকালে তা বাতিল হয়ে যায়। আপিল করলেও তা টেকেনি। মোহিত কুমার নাথের মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও আপিলে তিনি টিকে যান। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচার জমে উঠেছে। এখন দেখা যাচ্ছে সদরের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রয়েছে মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম প্রচার চালাচ্ছেন মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে।
এ ছাড়া যশোর সদরের বেশ ক’টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও প্রতিদিন গণসংযোগ করছেন মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে। মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে রয়েছেন সদরের আরও ডজনখানের সাবেক চেয়ারম্যান। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম বলেন, যেহেতু নেত্রী বলেছেন, এবার সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের লোক হতে পারবে, তাই আমরা মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে আছি। কারণ বিপদে আপদে তাকে কাছে পাওয়া যায়। এই শহরে তিনি এখনো রিক্সা করে ঘুরে বেড়ান। দলীয় কর্মীরা বিপদে আপদে তাকে খুঁজে পায়। এ রকম নেতাকে আমরা এমপি হিসেবে দেখতে চাই। দলীয় কর্মীদের মনোভাব দেখে আমি মোহিত কুমার নাথের সঙ্গে আছি।
এসব বিবেচনা করে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, হেভিওয়েট প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদকে এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হবে। এই আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৮০ হাজার ৬শ’ ৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬শ’ ৭১ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৮৫ হাজার ৯শ’ ৭১ জন। তৃতীয় লিঙ্গ ভোটার আছেন ৬ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১৮৯টি। নতুন ভোটার ৫৬ হাজার ৯শ’ ২৪ জন। বিগত একাদশ নির্বাচনে ভোট প্রদানের হার ৭৫.৭৬%।
-বিশেষ প্রতিনিধি







