Saturday, December 6, 2025

১৫ বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ এমপি রণজিত দম্পতি

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়। তিনি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা তিনবার সংসদ সদস্য থাকায় তার ভাগ্যবদল হয়েছে। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সঙ্গে তার স্ত্রী নিয়তি রানীও অর্জন করেছেন অঢেল সম্পদ। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা ২০০৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে এমপি রণজিত কুমার রায় বলেন, আমার আয় বর্হিভূত কোন সম্পদ নেই। আয়কর ফাইলের তথ্য অনুযায়ী হলফনামায় তথ্য দিয়েছি।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে রণজিত কুমার রায় বলেন, মানুষ হাজার হাজার কোটি টাকা নগদ রাখতে পারলে আমি কোটি টাকা নগদ রাখতে পারবো না কেন, পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা ২০০৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, এমপি রণজিত কুমার রায়ের বর্তমান (২০২৩) বার্ষিক আয় ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ টাকা। যা ২০০৮ সালে ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর বর্তমানে কোন আয় নেই। আগেও ছিল না। ২০০৮ সালের হলফনামায় উল্লেখ করা হয় রণজিত কুমার রায়ের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের হলফনামায় তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছয় কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৮ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০৮ সালের হলফনামনায় রণজিত কুমার রায়ের স্ত্রী নিয়তি রানীর নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির মূল্য ছিল ৮৫ হাজার টাকা। যা বর্তমানে (২০২৩) সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৮ টাকা।

২০০৮ সালে এমপি রণজিত কুমার রায়ের নামে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ ছিল। অস্থাবর সম্পদ বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৯৭ লাখ তিন হাজার ৮৬৮ টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রীর নামে ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ ছিল। যা বর্তমানে অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২২ লাখ তিন হাজার ২৯৮ টাকা। ২০০৮ সালে এমপি রণজিত রায়ের নামে দেড় লাখ মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি ছিল। পনের বছরের ব্যবধানে তার স্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার কোটি ৫৭ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে তার স্ত্রীর নামে কোন স্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও বর্তমানে এক কোটি ৫১ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর সম্পদ রয়েছে।

হলফনাম বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, এমপি রণজিত কুমার রায় ২০০৮ সালে ৪ বিঘা কৃষি জমি পৈত্রিক সূত্রে পেলেও বর্তমানে ১২ বিঘা জমির মালিক স্ত্রীর নামে ২০০৮ সালে কোন জমি বা বাড়ী না থাকলেও বর্তমানে ৩টি বাড়ি রয়েছে। যার মূল্য হলফনামার তথ্য অনুযায়ী এক কোটি ৪৬ লাখ ৭২হাজার টাকা। একই সাথে বাড়ী/অ্যাপার্টমেন্ট হিসেবে ৫০ লাখ টাকার উল্লেখ করেছেন। ২০০৮ সালে রণজিত কুমার রায়ের কাছে এক লাখ টাকা নগদ থাকলেও বতমানে এক কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। ২০০৮ সালে এমপির স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা নগদ ছিল। বর্তমানে তার স্ত্রীর কাছে ৫১ লাখ ১৬ হাজার ৮৪০ টাকা রয়েছে। পূর্বে ব্যাংকিং সঞ্চয় ডিপিএস হিসেবে কোন টাকা না থাকলেও বর্তমানে এমপি রণজিত রায় দম্পতির ২৭ লাখ ৩৮হাজার ৪৯২টাকা আছে। তার কোন দায় দেনা নেই। হলফনামায় এমপি রণজিত কুমার রায় তার সন্তানদের তথ্য উল্লেখ করেননি।

এ বিষয়ে সুশাসন ও রাজনীতি বিশ্লেষক সুব্রত কুমার পাল বলেন, সংসদ সদস্য পদটি কোনভাইবে লাভজনক পদ নয়। ফলে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পাহাড় সমান অর্থ সম্পদের মালিক হবেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। যখন কোন সংসদ সদস্য হঠাৎ করেই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যান, তখন সাধারণ ভোটারের মাঝে প্রশ্ন উঠে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। নির্বাচন কমিশনের উচিত প্রার্থীদের হলফনামা খতিয়ে দেখা। যদি কোন প্রার্থী হলফনামায় মিথ্য তথ্য দেন, তাহলে তার প্রার্থীতা বাতিল করার বিধান রয়েছে। এমনকি তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরও তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল করার সুযোগ আছে।

বিশেষ প্রতিনিধি

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর