উৎসবমুখর পরিবেশে যশোরবাসীর গর্ব ঐতিহাসিক ‘৬ ডিসেম্বর যশোরমুক্ত দিবস’ উদযাপিত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা-জনতার হাজারো প্রত্যয় দৃপ্ত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা ও ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে মুখরিত বর্ণাঢ্য বিজয় আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে বুধবার সকালে এ দিবস উদযাপিত হয়।
যশোর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে একাত্তরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানে জাতীয় পতাকা শোভিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। বাদ্যের তালে তালে লাল-সবুজ রঙের বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে এ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন তিনি।
আনন্দ শোভাযাত্রার আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পকলা অ্যাকাডেমির শিল্পীবৃন্দ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন বৃহত্তর যশোরের মুজিব বাহিনীর কমান্ডার আলী হোসেন মনি, ডেপুটি কমান্ডার রবিউল আলম, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম মুযহারুল ইসলাম মন্টু, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মর্জিনা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহম্মেদ চৌধুরী, শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান বুলু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দীপংকর দাস রতন। সঞ্চালনা করেন জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস, প্রধান শিক্ষক শ্রাবণী সুর ও সহকারী শিক্ষক আহসান হাবিব পারভেজ।
শোভাযাত্রায় রণাঙ্গনের রণ হুংকার ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে প্রকম্পিত করে তোলেন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ প্রজন্ম।
আনন্দ শোভাযাত্রাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বকুলতলায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে গিয়ে শেষ হয়। এখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের প্রতিকৃতিতে মুক্তিযোদ্ধা- জনতা শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন।
শোভাযাত্রায় যশোরের বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন বয়সের সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উল্লেখযোগ্য কর্মীবৃন্দ অংশ নেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, যশোরের মাটি খাঁটি সোনা। এখান থেকেই বিজয়ের সূচনা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে আজ এ আনন্দ শোভাযাত্রাতে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে পথ চলছি। তিনি সকলকে এমনভাবে পথ চলায় আর্থ-সামাজিক ও মানবিক সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সকলকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। সারাদেশের সকল শুভ কাজের সূচনায় যশোর নেতৃত্ব দেবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ৬ ডিসেম্বর; ঐতিহাসিক যশোর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয়েছিল প্রাচীনতম এই যশোর জেলা। ওইদিন দুপুরের পরপরই যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। দেশের প্রথম শত্রুমুক্ত হয় যশোর জেলা। যশোরেই প্রথম উঠেছিল বিজয়ী বাংলাদেশের রক্ত সূর্যখচিত গাঢ় সবুজ পতাকা।







