Tuesday, April 30, 2024

অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে চাচ্ছে পটল বাবু চক্র

- Advertisement -

জেলা প্রশাসকের অনুমতি না নিয়েই যশোর টাউন হল মাঠে ঈদ মেলার প্রচার চালিয়ে দোকানদারদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া সেই পটল বাবু চক্র এবার বৈশাখি মেলাকে পূঁজি করে ব্যাপক অর্থ বাণিজ্যে নেমেছে। জেলা প্রশাসন, যশোর ইনস্টিটিউট ও জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে এবার আর এক প্রতারণায় নেমেছে তারা। দশ দিনের মেলার অনুমতি থাকলেও তারা ২০ দিন মেলা চলবে প্রচার চালিয়ে এক একটি স্টল ভাড়া দিচ্ছে ৩৫ হাজার টাকায় ।

মেলা থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার বাণিজ্যে নেমেছে চক্রটি। তবে, এ মেলা থেকে একটি টাকাও পাবেনা যশোরের জেলা প্রশাসন। এমনকি যশোর ইনস্টিটিউটের মাঠে মেলা হলেও এই প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হবেনা একটি টাকাও। সাংষ্কৃতিক জোটকে নামমাত্র টাকা দিয়ে মেলা থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে যাবে পটল বাবু গং। যা নিয়ে হতবাক হয়েছেন জেলা প্রশাসন ও ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। বিতর্কিত এ বাবু চক্রের হাতে টাউন হল মাঠ কেনইবা দেয়া হলো সে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

সম্প্রতি যশোর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় এবার লোকজ সাংস্কৃতিক উৎসব ও বৈশাখি মেলা করা হবে। যার তত্বাবধানে থাকবেন জেলা প্রশাসক। মেলার আয়োজন করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও যশোর ইনস্টিটিউট। তিন পক্ষের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন জানান, আবহমান বাংলার লোকজ ও গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এই মেলা আয়োজন করা হচ্ছে। সে কারণে এ মেলা থেকে কোনো বাণিজ্য হবে না বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। মেলাতে যেসব স্টল থাকবে তা সাজানো হবে লোকজ ও গ্রামীণ পণ্য দিয়ে। বিনোদনের জন্যে যেসব ইভেন্ট রাখা হবে তাও হতে হবে গ্রামবাংলার ঐহিত্যবাহী। মেলাতে ৩০-৪০টি দোকান তৈরি করবে সাংস্কৃতিক জোট। ভাড়া হিসেবে প্রতিটি দোকান থেকে আদায় করা হবে পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা। বিনোদনের কিছু ইভেন্ট থেকে আরও কিছু টাকা আসবে। এই টাকা মূলত ব্যয় করা হবে মেলায় আসা শিল্পী-কলাকুশলী, মেলার সাজসজ্জা ও অন্যান্য প্রয়োজনে। মেলা থেকে জেলা প্রশাসন বা যশোর ইনস্টিটিউটকে কোনো টাকা দেয়া লাগবে না। এ বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে জেলা পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মেলার খবর শুনেই টাউন হল মাঠ থেকে পালিয়ে যাওয়া সেই পটল বাবু চক্র তাদের পিছু নেয়। চক্রটি নানাভাবে সম্পূর্ণ ঐতিহ্যবাহী একটি মেলাকে বাণিজ্যিকীকরণের প্রলোভন দেখাতে থাকে। সাংস্কৃতিক জোট নেতৃবৃন্দ প্রথমে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও জোটের কোনো কোনো নেতার অতি আগ্রহের কাছে নতি স্বীকার করেন অন্য নেতারা। পটল বাবুর সহকারী মানিক চেয়ারম্যানের সাথে তারা চুক্তি করেন। এরপর থেকেই মেলার নামে মোটা অংকের টাকার বাণিজ্য শুরু করে বাবু চক্র।

গত বুধবার দুপুরেই নিজেদের ফেসবুকে ১৫ দিনব্যাপী মেলা চলবে বলে প্রচারণা শুরু করে বাবুসহ অন্যরা। যোগাযোগের জন্য দেয়া হয় মানিক চেয়ারম্যানের নাম্বার। পরবর্তীতে ২০ দিন মেলা চলবে প্রচার চালিয়ে এক একটি স্টল ৩৫ হাজার টাকা ভাড়া দাবি করা হয়। ঢাকার মনির চটপটি হাউজকে ২০টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকায়। ঢাকার নুর ইসলাম নামের এক বিনোদন ইভেন্টের মালিককে বিনোদন আইটেম বরাদ্দ দেয়া হয় মোটা অংকের টাকায়। জানাগেছে, সাংষ্কৃতিক জোটের নেতাদের ভুল বুঝিয়ে শর্তভঙ্গ করে বিদেশি বিভিন্ন পণ্যের দোকান আনার জন্য পায়তারা করছে চক্রটি।

এ বিষয়ে মেলাতে দোকান নিতে আগ্রহী কয়েকজন বলেন, প্রথমে সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা দশ দিনের মেলা পাঁচ হাজার টাকা করে স্টল ভাড়া চেয়েছিলেন। এখন শোনা যাচ্ছে স্টল চলে গেছে বাবু চক্রের হাতে। এখন তারা বলছেন ৩৫ হাজার টাকা করে ভাড়া। যা তাদের সাধ্যের বাইরে।

এ বিষয়ে বাবু চক্রের অন্যতম হোতা মানিক চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা মোটা অংকের টাকা দিয়েই স্টল ও বিনোদন ইভেন্টের অনুমোদন কিনেছেন। প্রথমে ৪০ থেকে ৫০টি দোকান ভাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে আরও স্টল করবেন। দোকান প্রতি ৩৫ হাজার টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। ইতিমধ্যে ৩০টি দোকান ভাড়া হয়েছে।
কবে থেকে ও কয়দিন মেলা চলবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশাখের তিনদিন আগে থেকেই মেলা শুরু হবে। দশ দিনের মেলার কথা থাকলেও ২০দিন চালানোর ইচ্ছে রয়েছে তাদের। যা সাংষ্কৃতিক জোটের নেতারা তাদের সহযোগিতা করবেন।
কথা হয় আয়োজক সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি দীপঙ্কর দাস রতনের সাথে। তিনি বলেন, ‘এখানে কোনো বাণিজ্য হওয়ার সুযোগ নেই। যে টাকা তাদের উঠছে তা দোকান তৈরি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শিল্পীদের পেছনে ব্যয় করা হবে। সেই টাকা ওঠা নিয়ে তারা শঙ্কিত।’ বাবু চক্র বিষয়ে তারা বলেন, ঈদ মেলার নামে বাবু চক্র যে প্রতারণা চালাচ্ছিল তা ভন্ডুল করে দিয়েছিলেন জোট নেতারাই। কিন্তু এবার মানিক চেয়ারম্যানকে দেয়া হয়েছে। যদি মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রচারণা করে থাকে তাহলে অপরাধ করেছে। বিষয়টি নিয়ে তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান।

যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ লিটু বলেন, এ মেলা থেকে কোনো বাণিজ্য করার সুযোগ নেই। তারা মাঠেরও কোনো ভাড়া নেবেনা। তাদের মাথায় অন্যকেউ কাঁঠাল ভেঙে খাবে, তা মানা হবেনা।

মেলা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম শাহীন বলেন, ‘এটা কোনো বাণিজ্য মেলা না। আমরা সাংস্কৃতিক জোটকে মেলা ও দোকান করতে বলেছি। সেখানে তারা তৃতীয় পক্ষের কাছে স্টল বরাদ্দ দিতে পারবে না। যা জোটের নেতাদের একাধিকবার বলা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈশাখের প্রথম দিন থেকে দশ দিনের মাথায় মেলা শেষ হবে। এর বাইরে কেউ প্রচারণা চালালে সেটা অবৈধ। এসব বিষয়ে শর্তভঙ্গ করলে মেলা বন্ধ করে দেয়া হবে’।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঈদ মেলার অনুমতি না নিয়েই টাউন হল মাঠে কিছু বাঁশ ফেলে পটলবাবু আর এই মানিক চেয়ারম্যান দোকানদারদের কাছ থেকে স্টল বরাদ্দের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয়। যা জানাজানি হয়ে যায়। এক পর্যায়ে রাতের আধারে বাঁশ নিয়ে চক্রটি পালিয়ে যায়। ফের এসে এবার প্রতিটি দোকান ৩৫ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে ১৭ লাখ টাকা, বিনোদন থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা ও মাঠের ভেতরে ফুটপাতে দোকান বসানোসহ বিভিন্ন খাত থেকে আরও কয়েক লাখ টাকার বাণিজ্য শুরু করেছে। চক্রটি ২৫ লাখ টাকা বাণিজ্যের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। অথচ, এ টাকার কিছু অংশ সাংস্কৃতিক জোট পেলেও যাদের মাঠ সেই ইনস্টিটিউট এমনকি জেলা প্রশাসন একটি টাকাও পাবে না।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত