Monday, April 29, 2024

যে কারণে স্বাস্থ্য সচেতনতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম

ইসলাম মানুষকে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ের সচেতনার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। কেননা সচেতনা ছাড়া মানুষ ইসলামের কোনো বিধানই পালন করতে পারবে না, পালন করা সম্ভবও হবে না। যেমন, অজু করতে হলে তাকে পানির পবিত্রতার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে । নোংরা, অপবিত্র পানি দিয়ে অজু করলে তার অজু হবে না। তেমনি নামাজ পড়তে হলে তাকে নামাজের সময় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে । সময় ছাড়া অন্য সময় নামাজ পড়লে নামাজ তো হবেই না বরং সে গুনাহগার হবে।
স্বাস্থ্য মানব জীবনে আল্লাহর এক অশেষ দান ও অনুগ্রহ। তাই ইসলাম মুমিনদেরকে স্বাস্থ্য সচেতনার প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য। আর ইবাদত করতে হলে শারীরিক ও মানসিককভাবে সুস্থ থাকা জরুরি। কেননা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকলেই কেবল একাগ্রতার সঙ্গে ইবাদাত করা সম্ভব । সুতরাং একজন মানুষ বিশেষত একজন মুমিন যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে সে বিষয়ে ইসলাম গুরুত্ব সহকারে তাগিদ দিয়েছে।
এ বিষয়ে হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।
মুসলিম মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে তাকে অবশ্যই শরীর ও স্বাস্থের প্রতি নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে তাকে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে শরীর ও স্বাস্থের পরিচর্যা করতে হবে। প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখতে হবে কোনো অসচেনতার কারণে যেন সে ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে না পরে। কোনো কারণে মানুষ অসুস্থ হলে আল্লাহ তাকে তার অসুস্থতার কারণে নেকি দান করেন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হলে অবশ্যই তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে । তাছাড়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সুস্থ থাকাকে ইসলাম অধিক উৎসাহিত করেছে। হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?
–তিরমিজি সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের কতর্ব্য হলো, প্রতিনিয়ত শরীর ও স্বাস্থের প্রতি যত্নশীল হওয়া । ইসলামের আদেশ অনুযায়ী মুমিন বান্দা প্রথমত খেয়াল রাখবেন যেন সে কখনও শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ না হয়ে পড়েন। অবশ্য কখনও কোনো কারণে অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে কোনো প্রকার অলসতা করা চলবে না। কেননা নবী করিম (সা.) তার সাহাবিদেরকে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো, কেননা মহান আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, সেটি হলো বার্ধক্য।
-আবু দাউদ এ হাদিসের আলোকে বোঝা যায় যে, অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা মুমিনের জন্য ইবাদাত বটে। রোগাক্রান্ত হলে ইসলাম তাকে চিকিৎসা নেয়ার তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা গ্রহণকালে হারাম জিনিসকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহারে নিষেধ করা হয়েছে। হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা রোগ দেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেছেন। প্রতিটি রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো তবে হারাম দ্রব্য দ্বারা চিকিৎসা নিও না। তিনি আরও ইরশাদ করেন, হারাম বস্তুতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য আরোগ্য রাখেননি।
-জাদুল মাআদ চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা হলো, রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা করা। হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা হলেই আল্লাহর হুকুমে আরোগ্য হয়। –মুসলিম
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ গুলো মেনে চলার তৌফিক দান করুন আল্লাহুম্মা আমিন।
লেখক:- বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী।
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত