Sunday, April 28, 2024

শৈলকুপা আশুরহাট গ্রামে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে

- Advertisement -
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শান্ত জলের বুকে লাল শাপলার গালিচার মাঝে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে শত শত অতিথি পাখির দল। উড়ে চলা পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। প্রতি বছর শীত এলেই বাহারি রঙের এসব অতিথি পাখির খুনসুটি আর ছোটাছুটি প্রকৃতির অপরূপ অলঙ্কার হয়ে উঠে। এ অতিথি পাখির ঝাঁক যখন দল বেঁধে উড়ে চলে সে সময় দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন জলরঙে আঁকা ছবি।

প্রতি বছর শীতকাল এলেই বাংলাদেশের জলাশয়, বিল, হাওর, পুকুর ভরে যায় নানা রঙ বেরঙের নাম না জানা অতিথি পাখিতে। মূলত এই অতিথি পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আসে নিজেদের জীবন বাঁচাতে। আবার গরম পড়লে চলে যায় নিজ বাসস্থানে।

ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার আশুরহাট গ্রামটিতে হঠাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসা শুরু করে। স্থায়ী কোনও বাসা না করায় পাখিগুলো সারাদিন যায় আর আসে। এভাবে কাটছে কয়েক বছর, কিন্তু এলাকার কেউ অত্যাচার করে না। ১০ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে পাখির অভয়ারণ্য। যা রক্ষার্থে স্থানীয়ভাবে পাহারাদারের ব্যবস্থাও করা হয়।

তখন থেকেই আশুরহাট গ্রামটি লোকমুখে পাখি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে। যা এলাকার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছে। গ্রামটির অবস্থান উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে। ২০১৩ সালেই তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে।

প্রতি বছরের মতো এবার ও গ্রামের মধ্যপাড়ার আবদুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের পুকুর পাড়ে শিমুল, জাম, মেহগনী গাছের ডালে ডালে বাসা বাঁধে হাজার হাজার পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান থাকায় পাখিগুলো এখানেই জায়গা করে নিয়ে থাকে প্রতি বছর শীতের সময়।

মূলত নভেম্বরে পাখিগুলো আসা শুরু করে। মার্চ ও এপ্রিলে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে চলে যায়। এদিকে, রাতের আঁধারে পাখির নিরাপত্তা ও আশ্রয়স্থল চরম সংকটে পড়ে। বর্তমানে অভয়ারণ্যের গাছ কেটে ফেলায় নতুন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

এলাকাবাসীর দাবি, এখানকার গাছ কাটা ও পাখি শিকার যেন না করা হয়।

শৈলকুপার আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সদস্য আরিফ জানান, কয়েক দিন আগে গ্রামের মকররম আলীর ছেলে নইমুদ্দিন ও বদর উদ্দিনের ছেলে শফি উদ্দিন এই অভয়ারণ্যের গাছ কেটেছে। আরও কেউ কেউ গাছ কাটার পাঁয়তারা করছে। এভাবে গাছ কেটে ফেললে পাখিশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী বলেন, জমির মালিকেরা মাঝেমধ্যেই গাছ কাটে নিয়ে থাকেন। এভাবে গাছ কাটার কারণে পাখিদের আবাসন সংকট দেখা দেবে। সেই সঙ্গে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে এই অভয়ারণ্য। কোনও পাখি শিকারি যাতে পাখি শিকার করতে না পারে তাই আমরা সারা রাত ধরে পাহারা দিয়ে থাকি।

আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, এভাবে গাছ কাটলে অতিথি পাখিরা কোথায় আসবে? আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এই মুহূর্তে গাছ কাটা বন্ধ না করতে পারলে আগামী দিনে অতিথি পাখিসহ অন্যান্য পাখি এই এলাকায় আসবে না। পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র অভয়ারণ্য।

জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, পাখির অভয়ারণ্যের গাছ কাটার খবর পেয়েছি। পাখিদের আবাসস্থল সুনিশ্চিত করতে এবং অভায়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি দিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রাম ও শহরের সব বয়সী মানুষজন মুগ্ধতার আবেশে দেখছে জলাশয় ও অতিথি পাখির যোগসূত্রের এই নৈসর্গিক দৃশ্য। তবে এত পথ পাড়ি দিয়ে এসেও এসব পাখিদের শেষ রক্ষা হয় না। শিকারের কারণে প্রাণ হারাতে হচ্ছে পাখিদের। অতিথি পাখি এলাকায় এভাবে প্রতি বছর আসা জেলার জন্য সৌভাগ্য।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত