Sunday, April 28, 2024

পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশ বক্সে হামলা

- Advertisement -

রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার ৫টি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দীর্ঘ দিন ধরে করা পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পুলিশ বক্স ও পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান নামে একজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

হামলার সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, হামলাকারীরা পুলিশ বক্সের ভেতর থেকে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে এসে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। এছাড়া হামলাকারী দল বেঁধে অতর্কিতভাবে ৫টি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা ও ভাঙচুর করে।

হামলার এসব চিত্র দেখে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে পল্লবীতে চলা অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে চলা অভিযানকে কেন্দ্র করে বিচ্ছিন্নভাবে এ হামলা সংগঠিত হয়নি। পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালের অভিযানকে সামনে এনে পুলিশ বক্সে ও পুলিশের ওপর হামলা করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার প্রধান সড়কে কয়েক হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। এসব রিকশার মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা। তারা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে লিয়াজোঁ রক্ষা করে অবৈধভাবে এসব রিকশা রাস্তায় নামিয়েছে। এছাড়া অবাধে যেন এসব রিকশা চলাচল করতে পারে সেই জন্য বিভিন্ন মহলে নানা সময় মাসিক হারে টাকাও দেয় মালিক পক্ষ।

আরও জানা যায়, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সম্প্রতি মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে ট্রাফিক পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মালিক পক্ষ। তারা বিভিন্নভাবে পুলিশের এই অভিযান বন্ধ করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু সফল হতে না পেরে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সর্বশেষ পুলিশের অভিযান বন্ধ করার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনা করে মালিক পক্ষ। আর এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাধারণ চালকদের রুটি রুজির ভয় দেখিয়ে আজকের হামলা করার জন্য উসকানি দেন মালিকরাই।

এদিকে পুলিশের ওপর ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলার বিষয়টি সাধারণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে মনে করছে পুলিশও। এ বিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজকের হামলার ঘটনাটি মোটেও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনায় নয়। কোনো পক্ষ আজকের অভিযানের বিষয়টিকে সামনে রেখে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলার ঘটনাটি ঘটায়।

এ বিষয়ে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ আব্দুল হালিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ বক্সে ও পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধভাবে যে হামলা হয়েছে সেটি পূর্ব পরিকল্পিত। আদলের নির্দেশ অনুযায়ী ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছিল। সেই কাজটি করতে গিয়েই ট্রাফিক পুলিশ তাদের রোষানলে পড়ে।

এ হামলার পেছনে অন্য কোনো ইন্ধন আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা সব বিষয়কে সামনে নিয়ে তদন্ত করছি। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত এবং যাদের ইন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্তের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

অন্যদিকে এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিকের মিরপুর বিভাগের পল্লবী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) ইলিয়াস হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলে, এসব ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক পল্লবী ও মিরপুর এলাকার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চালক নিয়ে এসে মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় অবৈধভাবে এসব রিকশা চালিয়ে ব্যবসা করেন। আজ যখন আমরা আদালতের নির্দেশ মোতাবেক এসব অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছিলাম তখন মালিক পক্ষের ইন্ধনে চালকরা একত্রিত হয়। সর্বশেষ মালিক পক্ষের উসকানিতে চালকরা ইট-পাটকেল ও লাঠি সোটা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের বক্সে হামলা করে।

পাঁচটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় পল্লবী থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে। শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) রাতে পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহাদ আলী ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, পুলিশ বক্সে ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় পুলিশের কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করছি এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকালে পল্লবীতে মূল সড়কে অবৈধভাবে চালানোর অভিযোগে ব্যাটারিচালিত দুটি রিকশা জব্দ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা কয়েকটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করে। এতে এক কনস্টেবল আহত হয়েছেন।

অনলাইন ডেস্ক/আর কে-০১

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত