Monday, April 29, 2024

অপচিকিৎসায় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দরিদ্র মীম

- Advertisement -

মীম বেগম (২০)। প্রথম সন্তানের মা হয়েছেন দু’মাস আগে। আশা ছিল নবজাতক নিয়ে সুখের সংসার করবেন স্বামী আব্দুল জব্বারের ঘরে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ডাক্তারের অপচিকিৎসায় এখন জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

সূত্র জানায়, চার বছর আগে যশোর সদর উপজেলার চাউলিয়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের সাথে রূপদিয়া বাজারের মীম বেগমের বিয়ে হয়। এক বছর আগে অন্তঃসত্ত্বা হন মীম। সন্তান জন্মদানের জন্য ছয় মাস ধরে তিনি পিতা হাবিবুর রহমানের বাড়িতে বসবাস করছেন।

২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রসব বেদনা ওঠে মীম বেগমের। ওইসময় তার পিতা হাবিবুর রহমানের পূর্বপরিচিত সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সের অপারেশন কক্ষের ইনচার্জ শাহিনের মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেন। রোগীর সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে শাহিন রোগীর স্বজনদের জানান, মীমকে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হবে। তার জন্য খরচ হবে ১৩ হাজার টাকা। টাকা পরিশোধের পর রোগীকে অপারেশন কক্ষে নিয়ে যান শাহিন। সেখানে অ্যানাস্থেসিয়া ডাক্তার ছাড়াই রোগীকে সিজারিয়ান করেন শাহিন ও আফরোজা ইয়াসমিন নামে এক ডাক্তার। একটি ছেলে সন্তান জন্ম  দেন মীম বেগম।

১৩ ডিসেম্বর রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তখন থেকে রোগীর অবস্থার অবনতি হয়। দিন দিন শরীর ও পেট ফুলে উঠতে থাকে। পরে রোগীর স্বজনরা মীম বেগমকে পুনরায় সেন্ট্রাল হসপিতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্সে আনলে ডাক্তার তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান তার কিউনিতে সমস্যা হয়েছে। রোগীর স্বজনরা বিষয়টি শাহিনকে জানালে তিনি অন্য একটি হাসপাতালে রেফার করেন। রোগীর স্বজনরা কুইন্স হাসপাতালে গিয়ে জানতে  পারেন সিজারিয়ান অপারেশনের পর রোগীর সঠিকভাবে ড্রেসিং করা হয়নি। একারণে সেখানে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। পূর্বে রোগীর কিডনিতে সমস্যা থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন করার পর সঠিকভাবে ড্রেসিং না করায় রোগীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে।

ভুক্তভোগী মীম আক্তারের পিতা হাবিবুর রহমান জানান, তার মেয়ের যদি আগে থেকেই কিডনিতে সমস্যা থাকে তাহলে সিজারিয়ান অপারেশনের আগে কেনো তাদের জানাননি। ১৩ হাজার টাকার বিনিময়ে অপারেশন করিয়ে মেয়েকে বাড়িতে আনার পর তার অবস্থার অবনতি ঘটে। এ সময় তিনি সেন্ট্রাল হাসপাতালে গেলে শাহিন জানান, তার মেয়ের কিডনিতে সমস্যা তাদের কিছুই করার নেই। ইতিমধ্যে তার দু’লাখ খরচ হয়ে গেছে মেয়ের চিকিৎসার জন্য। তার পক্ষে আর মেয়েকে চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, মেয়ের সমস্যার কথা শাহিনকে জানাতে গেলে তার সাথে খারাপ আচরণ করা হয়। অপারেশনের সময় কোনো অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ছিলেনা। শাহীন নিজেই রোগীকে অজ্ঞান করেন। ডাক্তার আফরোজা ইয়াসমিনের সাথে কথা বলতে গেলে ওই ক্লিনিকে এই নামে কোনো ডাক্তার খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় তিনি সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন।সেন্ট্রাল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপারেশন কক্ষের ইনচার্জ শাহিন খান জানান, অপারেশনের ১৪ দিন পর রোগী তার কাছে এসেছিলেন। এ সময় বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তার কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। তখন তাকে একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করা হয়। ওই রোগীকে কোনো অপচিকিৎসা করা হয়নি। রোগীর স্বজনরা তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। তিনি রোগীর অর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসার জন্য তিন হাজার টাকা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, এ ব্যাপারে তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের অভিযান চলমান আছে। অপচিকিৎসা করলে কোনো স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেয়া হবে না।

রাতদিন সংবাদ

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত