Monday, April 29, 2024

মণিরামপুরে তিন মাসে পারিবারিক কলহে ৩০ নারী পুরুষের প্রাণহানি

- Advertisement -

মণিরামপুর প্রতিনিধিঃ মণিরামপুরে পারিবারিক কলহের জেরে গত তিন মাসের ব্যবধানে ৩০ নারী পুরুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে শতবর্ষি বৃদ্ধ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুও রয়েছে। পারিবারিক কলহে অতিরিক্ত চাপ কিংবা হতাশাগ্রস্থ হয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলায় নিজেকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, পারিবারিক কলহের জের কিংবা মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্থ গ্রস্থ হয়ে গত ৩ মে উপজেলার চাকলা মাঠপাড়া আবু মুছার ছেলে কলেজ ছাত্র রাকিব হাসান (২০), ২২ মে জুড়ানপুর গ্রামের কাজীপাড়ার মজনু সরদারের মেয়ে রীনা বেগম (৩০), ২৬ মে পলাশীর অলি মোহাম্মাদের ছেলে জহির হোসেন (৪৩) ও কাঁঠালতলার অশোক দাসের স্ত্রী ডলি দাস (৩২), ২৭ মে একই গ্রামের সুখদেবের ছেলে অশোক কুমার (৪৫) ও নিশ্চিন্তপুরের মামুন হোসেনের স্ত্রী লতা বেগম (৩৫), ৩০ মে কপালিয়ার নজরুল ইসলামের স্ত্রী ফতেমা বেগম (৪২), ১০ জুন চিনাটোলার দেব কুমারের ছেলে বৃন্তিলা পাল (১৭), ১৮ জুন খর্দ্দো গাংড়া গ্রামের টিটু হোসেনের ছেলে লিথুন হোসেন (১১), ২৪ জুন সুজাতপুরের রতন বিশ্বাসের ছেলে অঞ্জন বিশ্বাস (৫৫), ২৫ জুন ঘুঘুরাইলের ঝন্টু সরদারের ছেলে করিম সরদার (৫৫), ২৮ জুন সুন্দলপুরের সামাদ বিশ্বাসের ছেলে হাফিজুর রহমান (৩৫) ও হাজরাকাটির সাখাওয়াত আলী মোড়লের স্ত্রী রুমা খাতুন (২২), ২ জুলাই রতনদিয়ার এনামুল হকের স্ত্রী কোহিনুর খাতুন (২৬), ৩ জুলাই ফুলবাড়িয়ার মৃত জানাতি বিশ্বাসের ছেলে রতন বিশ্বাস (১১০), ৪ জুলাই খানপুরের হাফিজুর রহমানের ছেলে শরিফুল ইসরাম (২১), ৮ জুলাই চাপাকোণার হীরক মন্ডলের ছেলে লংকেশর মন্ডল (৭২), ১৬ জুলাই বালিয়াডাঙ্গার অনন্ত দাসের ছেলে বিপ্লব দাস (২৫), ২১ জুলাই খালিয়ার আব্দুল মোমিনের ছেলে মামুনুর রশিদ (৪০) ও শ্যামনগরের শহিদুল ইসলামের ছেলে রনি আহম্মেদ (২২), ২২ জুলাই মনোহরপুরের আকাম মহলদারের ছেলে শাহানুর রহমান (৩৫), ২৩ জুলাই সুবলকাটির মৃত মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৪০) ও হানুয়ারের মিজানুর রহমানের মেয়ে সুরাইয়া খাতুন (২৮), ২৬ জুলাই সমসকাটির মুনঝুর বিশ্বাসের ছেলে সুজন বিশ্বাস (২৫), ১ আগস্ট বাটবিলার আব্দুর রহিম গাজীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক গাজী (৬০), ৩ আগস্ট সিংহের খাজুরার সুখচাঁদ দফাদারের ছেলে ইসমাইল হোসেন (২৪), ৬ আগস্ট পাঁচাকড়ির শৈলন মন্ডলেল মেয়ে বিশাখা মন্ডল (৩৫), ৭ আগস্ট দেবিদাসপুরের করিম গোলদারের ছেলে আমির আলী গোলদার (৭০) এবং ৮ আগস্ট বাকোশপোলের দীপক বিশ্বাসের স্ত্রী অর্চনা বিশ্বাস (৪০)। এছাড়া গত ৭ আগস্ট স্বামীর পরকীয়া নিয়ে বিবাদের জেরে তিন বছরের মেয়ে কথাকে এক রশিতে ঝুলিয়ে মারার পর আরেক রশিতে আত্মহত্যা করেন মা পিয়া মন্ডল (২২)। এ ঘটনায় স্বামী কলেজ শিক্ষক কণার মন্ডলের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে মামলা হয়েছে। পুলিশ ওই দিনই স্বামী কণার মন্ডলকে আটক করে।
মৃতদের প্রায় সবাই পারিবারিক কলহের জেরে হতাশ হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। আশংকা জনক হারে আত্মহনন বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
মনোরোগ নিয়ে কাজ করা হোমিও চিকিৎসক সুরাইয়া আক্তার বলেন, এ থেকে পরিত্রান পেতে কাউন্সিলিং করা যেতে পারে। সবারই সমাজ ও পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এটি বোঝাতে হবে।
কেনো পারিবারিক সহিংশতায় প্রানহানি ঘটনা ঘটছে এমন প্রশ্নের জবাবে যশোর সরকারি এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক শাহিন বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে কারো ওপর জোর করে বল প্রয়োগ করা হলে, তখন সেই অতিরিক্ত চাপে ভেঙ্গে পড়ে, গভীর হতাশায় মানুষ যখন জীবনের মূল্য খুঁজে পাই না কিংবা অভাবগ্রস্থ হয়ে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হলে তখন নিজেকে প্রথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে।
মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, যে হারে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে তা চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। শুধু চলতি মাসেই ৭ জনের আত্মহত্যার দায়ে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। এটি থেকে রেহায় পেতে সকলকে কাজ করা দরকার।

 

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত