Friday, May 10, 2024

চাঁচড়া হঠাৎপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দ ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

- Advertisement -

‘ঘুমাই রইছি দেখা যাচ্ছে ঘরবাড়ি গায়ের উপর ভাইঙে পড়লো, তখন তো আমরা ছেলে পেলে নিয়ে মরে পড়ে থাকবো’। একচোখে নতুন ঘর পাবার স্বপ্ন অন্য চোখে প্রাণ হারানোর আতঙ্ক নিয়ে ক্ষোভের সাথে এসব কথা বললেন চাঁচড়া হটাৎপাড়া বস্তির বাসিন্দা সাহেদা বেগম। শুধু সাহেদা নয়, গৃহহীন ও ভুমিহীনদের জন্য সরকারের বরাদ্দ দেয়া বাড়ি নির্মাণ কাজে এখানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ অনেকের।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নে চলছে নিম্ন মানের উপকরণ দিয়ে প্রকল্পের ঘরবাড়ি। কাজ শেষ হওয়ার আগেই কোথাও কোথাও তা ভেঙে পড়ছে। প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের হুমকির শিকার হচ্ছেন সুবিধাভোগিরা। সরকারের দেয়া নির্দেশনা না মেনে কথিত সাব ঠিকাদাররা মনগড়া ডিজাইনে তৈরী করছেন এসব বাড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের গৃহনির্মাণ আশ্রয়ন প্রকল্প-২ ক শ্রেনীর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষথেকে যশোর সদর উপজেলার হঠাৎপাড়া বস্তিতে সরকারী খাস জমির উপর ১শ’ পরিবারের জন্য একটি করে ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে । যার প্রতিটির পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। বর্তমানে ওই বস্তিতে থাকা সকলকে সরিয়ে চলছে
নির্মাণ কাজ। চারজন কথিত সহকারী ঠিকাদারের মাধ্যমে এ কাজ চলছে । গত শনিবার দুপুর দেড়টায় সরেজমিনে হঠাৎপাড়া কলোনীতে প্রবেশের শুরুতেই দেখা যায় শুকনো মাটির উপর মাত্র তিন ইঞ্চি গর্ত করে তার উপর ইট বিছিয়ে হচ্ছে বাড়ির ভিত।
প্রথম সারিতে দেয়া হচ্ছে ১৫ ইঞ্চি ইটের গাথুনি। তার উপর ১০ ইঞ্চির চারটা গাথুনি। এরপর থেকে ৫ ইঞ্চি করে শেষ পর্যন্ত গাথা হচ্ছে। এভাবেই তৈরী হচ্ছে দুই রুমের একটি আধাপাকা বাড়ি । এই বাড়ির সাথে পেছনের অংশে থাকছে বাথরুম ও রান্নাঘর। যার ভিতে দেয়া হচ্ছে মাত্র ১০ ইঞ্চির একটি ইটের গাথুনি। এরপর থেকে সব হচ্ছে পাঁচ ইঞ্চির। এসময় প্রকল্পের ঠিকাদার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার অথবা উর্ধতন কোনো কর্মকর্তার দেখা পাওয়া যায়নি। হেড মিস্ত্রি আব্দুল হাকিমকে এসব কাজ পরিচালনা করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এ কাজের দায়িত্বে রয়েছেন সাব কন্ট্রাক্টর লিটন। তিনি যেভাবে
কাজ করতে বলেছেন তারা সেভাবেই করছেন।
বরাদ্দপ্রাপ্তদের মধ্যে পারুল বেগম বলেন, তারা এইজায়গাতেই ছিলেন। এখন রাখাল পাড়ায় ফাঁকা মাঠে বসবাস করছেন। প্রতিদিনই তিনি এখানে আসেন মিস্ত্রিদের গর্ত করে গাথুনি দিতে বলেন কিন্তু কেউই তার কথা শোনে না। এ বিষয়ে সালাউদ্দিন মোড়ল(৪৭) বলেন, ঘরের কাজে চরম অনিয়ম হচ্ছে। ইট বিছিয়েই গাথুনি দেয়া হচ্ছে। স্যাম্পল হিসেবে কয়েক গাড়ি বালির স্তুপ রেখে ভিত বালি দিয়েই চলছে নির্মাণ। নাম মাত্র সিমেন্ট ব্যবহার হচ্ছে । বৃদ্ধা রিহিন (৬০) বলেন, শেষ মাথায় যে সাতটি ঘরতৈরী করা হয়েছে তার ভিত খুবই খারাপ। একটা ইট উচু করে দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। এছাড়া ঘরের কাজে গাথুনির পর ভেজানো হচ্ছে না। বারান্দা ও রান্না ঘরের কাজে আরো বেশি ফাঁকি দেয়া হচ্ছে। উপকার ভোগী লিটন বলেন, এরমধ্যে কয়েকটি ঘর রয়েছে যেগুলোর অবস্থা এতই নাজুক যা ধাক্কা দিলেই ভেঙ্গে পড়বে।
হঠাৎ পাড়া বস্তি ঘুরে দেখা যায়, ৪৪ টি ঘরের পুরো কাজ হয়েছে। তারমধ্যে অর্ধেকের বেশী জানালা দরজাও লাগানো হয়েছে। এখন শুধু টিনের অপেক্ষা। ৪ টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মি ও স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, ১০০ টি ঘরের কাজ করছেন কথিত চারজন সাব ঠিকাদার। তাদের মধ্যে ২২ টি ঘরের কাজ করেছেন লিটন। আকতার করেছেন ১২ টি। হাবিব পাঁচটি ও টুকু সাতটি বাড়ির কাজ করেছেন।
সুবিধা ভোগীদের দাবি প্রথমে যে ঘর গুলো তৈরী করা হয়েছে তার মধ্যে ১৬/১৭ টা বাড়ি মজবুত হয়েছে। লিটন সবচেয়ে বেশী ঘর নির্মান করেছেন। আর তার তৈরী ঘরগুলোর অবস্থা বেশি শোচনীয়। তারা আরো জানান, নির্মাণের কয়েকদিনের মাথায় কয়েকটি ঘর ভেঙ্গে পড়ে যায়। পরে তা মেরামত করা হয়। তারা বলেন, নির্মাণ কাজের এসব অনিয়ম সম্পর্কে প্রতিবাদ করলেই তারা হুমকি দেয়। ঘর দেয়া হবে না। মামলা দিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়া হবে।
ফলে কেউ আর মুখ খুলতে সাহস পায়না। এ বিষয়ে কথিত সহকারী ঠিকাদার হাবীবের দাবি তিনি প্রথমে কাজ করেছেন। তার কাজে কোনো নেই। এ বিষয়ে আরেক সহকারী ঠিকাদার লিটন বলেন, কাজ হচ্ছে কাজের নিয়মে। এসব অভিযোগ মিথ্যা। পিআইও অফিস থেকে সবধরনের কাচামাল দেয়া হচ্ছে। আর তার মিস্ত্রিরা কাজ করে দিচ্ছেন। এ বিষয়ে সাব ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ফারুক বলেন, কাজে কোনো ধরনের অনিয়মের সুযোগ নেই। নির্দেশনা মেনেই কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, একফুট মাটির নিচে গর্ত করে দেয়ার কথা ছিলো এবং উপরে ৬ ইঞ্চি দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সাপ পোক ঘরে ঢুকবে বলে তারা ৬ ইঞ্চি মাটির নিচে দিচ্ছেন ও একফুট দেয়া হচ্ছে মাটির উপর। এছাড়া পিআইও স্যার যেভাবে করতে বলছেন তিনি সেভাবেই করছেন বলে জানান।এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ বলেন, বাজেট যেমন তেমনই কাজ হচ্ছে। এছাড়া মাটি সবজায়গায় সমান নয়। ফলে লেভেল করে কাজ করতে যেয়ে কিছু কিছু জায়গাতে সমস্যা হচ্ছে। তবে, অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই বলে তিনি জানান।

সূত্রঃদৈনিক গ্রামের কাগজ

ভিডিও দেখতে এই লিংকে ক্লিক করুন

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত