Friday, December 5, 2025

আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে ফেরত দিলেন ঘুষের টাকা

১৯ শতাংশ জমির নাম খারিজের জন্য ভূমি অফিসে যান আশিকুর রহমান। তবে এর জন্য ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম আট হাজার টাকা ঘুষ চান। দুই দফায় সেই টাকা দেন জমির মালিক আশিকুর। এর তিন মাস পর আরো ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু শেষমেষ উল্টো ঘুষের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে এ ভূমি কর্মকর্তাকে।নজরুল ইসলাম কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী হিসেবে কর্মরত।তিন মাস জমির মালিককে ঘুরানোর পর আরো ২০ হাজার টাকা দাবি করেন নজরুল ইসলাম। পরে এ নিয়েকথা কাটাকাটির পর্যায়ে গেলে ভূমি অফিসে আসা লোকজন বিষয়টি ধরে বসেন। উপায় না দেখে ঘুষ নেয়া আট হাজার টাকার মধ্যে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেন তিনি। এ সময় টাকা গুনতে গুনতে আল্লাহর কাছে বিচারও দেন।বুধবার সকালে আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এ ঘটনা ঘটে। আর এ ঘটনার পুরো বিষয়টি সবার সামনে মুঠোফোনে ধারণ করেন ভুক্তভোগীর স্বজন। এরই মধ্যে ভূমি উপ-সহকারী নজরুল ইসলামের প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্যের কথা বেরিয়ে আসে।ভুক্তভোগীরা জানান, একটি নামজারি ও খারিজ নিতে নজরুল ইসলামকে ৫-২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। জমির পরিমাণ কিংবা ব্যক্তির অবস্থা দেখে টাকার অংকটা আরো বেড়ে যায়। জমিজমা সংক্রান্ত যেকোনো সাধারণ কাজে তার অফিসে ঘুষ দেয়া নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাহিদামতো ঘুষ দিতে না পারলে মাসের পর মাস ঘুরেও ভূমিসংক্রান্ত কোনো কাজ হয় না। নজরুল ইসলামের এমন কর্মকাণ্ডে ইউনিয়নবাসী অতিষ্ঠ।ঘুষের টাকা ফেরত নেয়া আশিকুর রহমান বলেন, তিন মাস আগে ১৯ শতাংশ জমির খারিজের জন্য সরকারি ফি বাদে অতিরিক্ত আট হাজার টাকা দাবি করেন নজরুল ইসলাম। আমরা সেই টাকা দুই দফায় তাকে দেই। পরে তিন মাস পার হয়ে গেলেও তিনি খারিজ না দিয়ে আরো ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বিষয়টি নিয়ে ঝগড়া বাঁধলে সবার সামনে নজরুল ইসলাম আমাকে পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দেন।এ বিষয়ে আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক ইউসুফ আলী বলেন, বেশ কিছুদিন আগে অফিসেই আমার সামনেই আশিকুরের কাছে খারিজের জন্য ২০ হাজার টাকা চেয়েছেন ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।ভুক্তভোগী ফাতেমা বেগম জানান, তার একটা খারিজের জন্য পাঁচ হাজার টাকা নিলেও পাঁচ মাস থেকে ঘুরাচ্ছেন। বিধবা রোদেলা বেগম জানান, তার খারিজের জন্য ছয় হাজার টাকা দাবি করেন উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, তিন হাজার টাকা দেয়ার পর আর টাকা দিতে না পারায় তার খারিজ হয়নি।আন্ধারীঝাড় ইউপি চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ খোকন বলেন, উপ-সহকারী নজরুল ইসলামের ঘুষ লেনদেনে অভিযোগ প্রায়ই আসে। তিনি কারো তোয়াক্কা করেন না। দিন দিন তার অন্যায় কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের টাকার বিনিময়ে তালিকা করায় মেম্বারদের হাতে তিনি কিছুদিন আগে লাঞ্ছিত হয়েছেন।ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বলার ভাষা হারিয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে লাখ-লাখ অভিযোগ মানুষ দিতে থাক। আমার ওপরেও তো বিগ বসেরা আছেন। তাদের ছায়াতো রয়েছে আমার মাথার ওপরে। তারা দেখবেন সবকিছু।এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামরী উপজেলা কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, কোন অফিসে টাকা পয়সার বিষয়ে অভিযোগ নেই? সাব-রেজিস্ট্রার, ভূমি অফিস, বিআরটিএসহ সব অফিসেই এরকম অভিযোগ আছে। অভিযোগ প্রমাণিত হতে হবে। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অনলাইন ডেস্কঃ

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর