Friday, December 5, 2025

বিশিষ্ট রাজনীতিক এম রওশন আলীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আজ ১৯ আগস্ট। যশোরের কৃতি সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সহচর, সংবিধানের স্বাক্ষর দানকারী সাবেক সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট সমবায়ী বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. এম রওশন আলীর মৃত্যুবার্ষিকী । ১৯৯৪ সালে এইদিনে তিনি না ফেরার দেশে ভির জমান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। তিনি ছিলেন দলমত নির্বিশেষে যশোরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ও সবার প্রিয় মুখ।

এম রওশন আলী ১৯২১ সালের ১৫ এপ্রিল এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান যশোর কোতোয়ালি থানার তেঘরিয়া গ্রামের মাতুলালয়। মরহুমের পিতা বাড়ি যশোর শহরতলীর নওদা গ্রামে।

এম রওশন আলী যশোর সম্মিলনী ইন্সটিটিউট থেকে ১৯৩৯ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কলিকাতার রিপন কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে তিনি ১৯৪১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও ১৯৪৩ সালে স্নাতক পাশ করেন। পরে তিনি ১৯৫১ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইন শাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্ণাঢ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি যশোরের আরেক কৃতি সন্তান প্রাক্তন মন্ত্রী অ্যাড. মশিউর রহমান, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রাক্তন মন্ত্রী অ্যাড. আব্দুল খালেক ও অ্যাড. হাবিবুর রহমানের সাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। তিনি ১৯৫৫ সালে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং পর্যায়ক্রমে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত একই পদে দায়িত্ব পালন করেন। এরমধ্যে তিনি ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং মৃত্যুর পুর্ব পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।

দেশ ও জনগনের প্রতি ত্যাগ ও ভালোবাসায় তিনি ছিলেন একজন অনন্য সাধারণ ব্যাক্তিত্ব এবং তিনি ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতীক নিয়ে যশোর সদর ও বাঘারপাড়া আসন থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

১৯৭১ সালের মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ ও মুক্তিযুদ্ধের বীর সংগঠক ছিলেন। মুক্তি যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুট করার জন্য গঠিত তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির তিনি ছিলেন অন্যতম সদস্য। একই সাথে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৮ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান রচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সংবিধান প্রণয়নের বিধি কমিটির সদস্য ছিলেন।

তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পার্থী হিসাবে যশোর সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৫ সালে যশোর জেলা গভর্নর হিসাবে নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে প্রথম তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর সদর আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ গণ পরিষদেরও সদস্য ছিলেন ।

এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে সকলের প্রশংসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান যশোর ইন্সটিটিউটে ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৯ বৎসর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

আর ১৯৪২ সালে তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সার্বিক সহযোগিতায় মোমিন নগর সমবায় শিল্প ইউনিয়ন, যশোর প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত মোমিন নগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের পর্যায়ক্রমে সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকায় বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় শিল্প সমিতি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন এর একজন সফলভাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

এম রওশন আলীর পুত্র ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. আবু সেলিম রানা রাতদিন নিউজকে জানান, আজ শুক্রবার ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে পারিবারিকভাবে যশোর নওদাগ্রাম মসজিদে বাদ-জুম্মা দোয়া মাহফিল, কবর জিয়ারত ও এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দোয়া ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর