Saturday, December 6, 2025

হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ কেশবপুর পৌরবাসি

 

কেশবপুর প্রতিনিধিঃ যশোরের কেশবপুর পৌরসভায় হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে পৌরবাসিন্দাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, করোনা মহামারির মধ্যে অতিরিক্ত ট্যাক্স ধার্য করা হয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৩৫ গুণ পর্যন্ত ট্যাক্স বৃদ্ধি পেয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়ম মেনে ৫ বছর পর পর হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়ে থাকে। ট্যাক্স নির্ধারণ তালিকা পুনর্বিবেচনার জন্য হোল্ডিংধারীদের আবেদন অব্যাহত রয়েছে। আপত্তির বিষয়ে পৌরসভায় শুনানির মাধ্যমে ট্যাক্স কমিয়ে দেয়া হবে। কেশবপুর পৌরসভা ১৯৯৮ সালে গঠিত হয়। পৌরসভাটি ‘ক’ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে পৌরসভার আয়তন ১১ দশমিক ৮৭ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা ২৬ হাজার ২২৯ জন। পৌরসভায় হোল্ডিংধারীর সংখ্যা ৬ হাজার ৪৯৪। প্রতিনিয়ত হোল্ডিংধারীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে গৃহকরের মোট দাবি ছিল ৬৮ লাখ ৩৬ হাজার ৪০৮ টাকা। আদায় হয়েছে ৬০ লাখ ৪২ হাজার ৫১৩ টাকা। আদায়ের হার ৮৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে পৌরকর পুন:নির্ধারণ সম্পর্কে অবগতির (ফরম-চ) নোটিশ দেয়া শুরু হয়েছে। ৮ নং ওয়ার্ড ব্যতীত অন্য ওয়ার্ডগুলোতে নোটিশ দেওয়া অব্যাহত আছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তিকে হোল্ডিং করের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ জারির ৩০ দিনের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ করে পৌরসভায় ২০ টাকা দিয়ে ‘ছ’ ফরমে আপত্তি দেয়া যাবে। এ পর্যন্ত আপত্তি দিয়েছেন ৪ হাজার ৭০০ হোল্ডিংধারী ব্যক্তি। এ দিকে করোনা সংকটের মধ্যেই হোল্ডিং করের নোটিশ পেয়ে পৌরবাসির মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। আপত্তি দাখিলের পাশাপাশি অনেকেই ফেসবুকে পোস্টের মাধ্যমে নানান মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে আশপাশের কোন পৌরসভায় হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি জানতে পেরে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। আলতাপোল ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ শাহীনুর ইসলাম বলেন, আগে তার হোল্ডিং ট্যাক্স ছিল ১০৫ টাকা। সেটি বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১১ গুণ কর বেড়েছে। তিনি বলেন, এ পৌরসভার মধ্যে মাছের ঘের ও কৃষি জমি দুই তৃতীয়াংশ। করোনাকালে পরিবার নিয়ে জীবন চালাতে মানুষ ধারদেনায় জড়িয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে হঠাৎ হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানো মড়ার ওপর খড়ার ঘা এর মত। ৩ নং সাবদিয়া ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুজিবর রহমান বলেন, গত পাঁচ বছরে তার কোনো ঘর বাড়েনি। এরপরও তার হোল্ডিং ট্যাক্স সাড়ে ১৩ গুণ বাড়ানো হয়েছে। আপত্তির ফরম জমা দেয়া হয়েছে। ১ টাকার আপত্তির ফরম পৌরসভা ২০ টাকা নিচ্ছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। ৪ নং আলতাপোল ওয়ার্ডের রাগিব আহসান বলেন, তাদের ৫১০ টাকার হোল্ডিং ট্যাক্স সাড়ে ৩৩ গুণ বাড়িয়ে ১৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে আপত্তি শুনানীতে কমিয়ে দেয়া হবে। কমালে কত গুণ কমাবেন সেইটা দেখার বিষয়। পৌরসভার সচিব মোশারফ হোসেন বলেন, হোল্ডিংগ্রহীতা যে বাড়িতে বসবাস করেন, সেই বাড়ির ১০ মাসের ভাড়ার ৩৮ ভাগ পর্যন্ত কর হিসেবে ধার্য করা যায়। নিয়ম মেনেই কর আরোপ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনের বরখেলাপ কিংবা গ্রাহকদের ওপর জুলুম করা হবে না। ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা ও আপত্তি শুনানির মাধ্যমে সহনশীল পর্যায়ে কর নির্ধারণ চূড়ান্ত করা হবে।  মোশারফ হোসেন আরও বলেন, পাঁচ বছর পরপর গৃহকর বাড়ানো হয়। আগে যেসব হোল্ডিংগ্রহীতার টিনের ঘর ছিল, বর্তমানে সেখানে পাকা ইমারত করেছেন। তাদের ক্ষেত্রে কর বেশি বেড়েছে। যাদের অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে কর তেমন বাড়েনি। এ সম্পর্কে পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, বিগত ৫ বছরের মধ্যে পৌর কর বাড়েনি। এখন যে কর আদায় হয়ে থাকে এই কর ধার্য করা আগের মেয়রের সময়ে (২০১৫ সালে)। পৌরসভার বয়স অনুযায়ী তার সময়ে ৩ বার কর নির্ধারণ হওয়ার নিয়ম থাকলেও তিনি ২ বার কর ধরেছেন। বিধায় এখন নিয়ম মানতে গিয়ে বৃদ্ধির পরিমাণ বেশি মনে হচ্ছে। আপত্তি শুনানিতে নির্ধারণকৃত কর যথা সম্ভব কমিয়ে দেয়া হবে। পৌরসভা চালাতে হলে কর বাড়াতেই হয়। এবার বাড়ানো হলে আগামী পাঁচ বছর আর নতুন করে কর বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না। এ বিষয়ে কেশবপুর নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, পৌরসভা ২৭ ভাগ পর্যন্ত কর বাড়াতে পারে। তার মানে এই নয় যে ২৭ ভাগই কর বাড়াতে হবে। পৌরসভা হোল্ডিং গ্রাহকদের আয় এবং গত দুই বছর ধরে চলমান করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ৫-৭ ভাগের মধ্যে গৃহকর বাড়ানো উচিত হবে।

 

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর