Friday, December 5, 2025

ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাবে আছে মাত্র ৩ কোটি টাকা

ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে দুটি মামলা (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও গুলশান) হয়েছে। একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের পরিদর্শক শেখ লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত তথ্য ইতিমধ্যে আমরা সংগ্রহ করেছি। তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গ্রাহকের টাকা তছরুপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।’ গুলশান থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের টাকা তছরুপের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, যার নাম উঠে আসবে, তাকেই গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

ই-অরেঞ্জ নামের প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্যোক্তা হিসেবে কাগজপত্রে নাম আছে সোনিয়া মেহজাবিনের। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠানটি নিজেকে প্রাইভেট কোম্পানি দাবি করে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরদাতার মধ্যে রয়েছেন স্বয়ং মেহজাবিনও। অথচ পুলিশের তদন্ত ও মেহজাবিনের আইনজীবীর বক্তব্য অনুযায়ী, ই-অরেঞ্জ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি শুধু সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোক্তা সোনিয়া মেহজাবিন বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানার আপন বোন। এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, বোনের ব্যবসায় নেপথ্যে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তিনি। অবশ্য পুলিশ কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানা তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর কাছে অস্বীকার করেছেন। অবশ্য পুলিশের হাতে আসা ই-অরেঞ্জের দুটি ব্যাংক হিসাবে শেখ সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি গত ৫ জানুয়ারি থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের ব্যবধানে ই-অরেঞ্জের সিটি ব্যাংকের হিসাব থেকে প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। টাকা উত্তোলনকারী শেখ সোহেল রানা সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই শেখ সোহেল রানা কি না, সে বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য আজ শুক্রবার বনানী থানার পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানার সরকারি মুঠোফোন নম্বরে অন্তত সাতবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি। কয়েকবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।তবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেখ লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, জব্দ করা ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাবে কে টাকা তুলেছেন, কে টাকা জমা দিয়েছেন—সব তথ্যই পাওয়া গেছে। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমান উল্লাহ চৌধুরী

আমান উল্লাহ চৌধুরী
ই-অরেঞ্জের গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় গণমাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তা শেখ সোহেল রানার নাম আসা প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও গণসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা যদি চাকরিবিধি কিংবা অন্যান্য বিধির পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকেন, তাহলে নিশ্চয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার আট দিন আগে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা আমান উল্লাহ চৌধুরী ই-অরেঞ্জের ৬৬৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেলসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি প্রতিবেদনও বলছে, ই-অরেঞ্জ কর্তৃপক্ষ গত ছয় মাসে ৩৬ হাজার ২৮১টি মোটরসাইকেল কেনে। এই মোটরসাইকেল কেনা বাবদ প্রতিষ্ঠানটির দুটি ব্যাংক হিসাব থেকে দেশের সাতটি মোটরসাইকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৬৬৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা জমাও দেওয়া হয়েছে।ই-অরেঞ্জের বর্তমান সিওও আমান উল্লাহ চৌধুরী মামলায় দাবি করেছেন, সাবেক সিওও নাজমুল আলম মোটরসাইকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে কোম্পানির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কোম্পানি টাকাও দিলেও প্রকৃত গ্রাহকেরা মোটরসাইকেল বুঝে পাননি।

ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, মামলার আসামি সুলতান উদ্দিনের ‘বাজাস কালেকশন’–এর ব্যাংক হিসাবে ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাব থেকে ৩৮৬ কোটি ৭৩ লাখ ৬০ হাজার ৭২০ টাকা জমা হয়েছে। আর আসামি মাহাদী হাসানের ‘অল জোন’ নামের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা পড়েছে ১৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। আর আসামি পার্থ প্রতীমের ‘বাইক ভ্যালি’র ব্যাংক হিসাবে ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাব থেকে ৭৩ কোটি ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার ৪১২ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। আর মাহাদী আবিদের ‘আবিদ টিভিএস মটরস’ নামের ব্যাংক হিসাবে ৯ কোটি ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ৯০০ টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে ই-অরেঞ্জের হিসাব থেকে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোক্তা সোনিয়া মেহজাবিন ও সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেল

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান উদ্যোক্তা সোনিয়া মেহজাবিন ও সাবেক সিওও নাজমুল আলম রাসেল
ছবি: সংগৃহীত

অবশ্য তদন্ত কর্মকর্তা শেখ লিয়াকত আলী বলেন, ই-অরেঞ্জের ব্যাংক হিসাব থেকে ৬৬৩ কোটি টাকা মোটরসাইকেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর হলেও বেশির ভাগ গ্রাহক মোটরসাইকেল বুঝে পাননি। বাইক কেনার নামে কীভাবে টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর হয়েছে, সেসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

অবশ্য ই-অরেঞ্জের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজমুল আলমের আইনজীবী শান্তনু ধর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নাজমুল আলম চার মাস আগেই কোম্পানি থেকে চাকরিচ্যুত। মার্চ মাসের পর ই-অরেঞ্জের কী হয়েছে, সেই দায় নাজমুলের নয়।

সূত্রঃ প্রথম আলো

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর