Saturday, December 6, 2025

যশোরের চৌগাছার দক্ষিণ কয়ারপাড়ার ঋষিপল্লীর মানুষ শোকে পাথর

যশোরের চৌগাছার দক্ষিণ কয়ারপাড়ার ঋষিপল্লীর মানুষ শোকে পাথর হয়ে গেছেন। পিতা পুত্রের নির্মম মৃত্যুর একদিন পার হলেও কেউ আসেনি অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। বেঁচে থাকা মানুষগুলোর দিন কিভাবে পার হবে সেই ভাবনায় দিশেহারা অনেকে। এদিকে মঙ্গলবার রাতে স্থানীয় শ্মশানে নিহতের সৎকার সম্পন্ন হয়েছে।
সরেজমিন দক্ষিণ কয়ারপাড়া গ্রামের ঋষিপল্লীতে নিরবতা লক্ষ্য করা গেছে। গোটা মহল্লা শোকে স্তব্ধ ও কাতর। খুপড়ি ঘরের মেঝেতে বসে নিহত সাগর দাসের স্ত্রী সুমতি রানী দাস ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন। তার ছোট্ট শিশু সীমান্ত দাস মাঝে মাঝে মায়ের চোখের জল মুছে দিচ্ছে আর বাবা আসছে বলে ছুটে যাচ্ছে রাস্তায়। সাগর দাসের মা জোসনা রানী দাস স্বামী মধুদাস ও ছেলে সাগর দাসকে হারিয়ে যেন বাকরুদ্ধ। প্রতিবেশিসহ নিকট আত্মীয়রা তাকে সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছেন। নিহত সাগর দাসের বৃদ্ধা দাদি প্রেমবালা দাস (৯০) যেন নির্বাক। শুধু চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট ঘরের সামনে একটি চেয়ারে বসে এই বৃদ্ধা তার ছেলে ও পৌত্রের শোকে কাতর। গত দুই দিনে পরিবারের কোন সদস্য জলটুকু মুখে দেয়নি বলে জানান প্রতিবেশিরা।
প্রতিবেশি বড়মধু দাস, দিপক দাস, পরিতোষ কুমার দাস জানান, এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সংসারে মোট সদস্য হচ্ছে ৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩ জন। তার মধ্যে একজন হচ্ছে বাকপ্রতিবন্ধি, বাকিরা হচ্ছে শিশু ও মহিলা। যে দুইজন মারা গেলেন তারাই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন পিতা ও পুত্র যা রোজগার করতেন তাতেই চলতো সংসার। কিন্তু এক সকালে পরিবারটির সব শেষ হয়ে গেল। ভিটে বাড়ির ৪ শতক জমি আছে। সেই জমিতে বেড়ার ঘরে সকলের বসবাস। নেই রান্না ঘর, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, ঘরে নেই গচ্ছিত কোন টাকা।
সাগর দাসের স্ত্রী এক সন্তানের জননী সুমিতা রানী দাস কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার শিশু সন্তানকে নিয়ে আমি কি করবো? তিনবেলা তিন মুঠো খাবার তুলে দিব সেই সঙ্গতিও যে নেই। ভগবান তুমি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দাও এই বলে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন।
স্থানীয়রা বলেন, কোন মামলা না, স্বজনহারা এই অসহায় পরিবার যেন কোন ক্রমে বেঁচে থাকতে পারেন তার ব্যবস্থা করাটাই সকলের জন্য উত্তম হবে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্মম এই মৃত্যুর ঘটনায় আমি মর্মাহত। ঘটনার পর হতেই আমি তাদের পাশে আছি। তারা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা পূরণ করা যাবে না। পরিবারটির বেঁচে থাকা সদস্যদের জন্য কিছু করতে হবে সেই চেষ্টায় আছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এনামুল হক জানান, স্বজনহারা পরিবারের জন্য খাদ্য সামগ্রী ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদানে আলোচনা হয়েছে। দ্রুতই এ সব প্রদান করা হবে।
প্রসঙ্গতঃ মঙ্গলবার সকালে উপজেলার সিংহঝুলী ইউনিয়নের দফাদার পাড়ার বাসিন্দা হাদিউজ্জামানের বাসার সেফটি ট্যাংক পরিস্কার করতে নেমে প্রথমে পিতা মধুদাস পরে ছেলে সাগর দাসের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
অনলাইন ডেস্ক
আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর