প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে যশোর পৌরসভায়। ইভিএমে ভোট দিতে পেরে একদিকে যেমন ভোটাররা খুশি, অন্যদিকে ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঝামেলাও কমেছে। বুধবার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র ঘুরে এই চিত্র দেখা যায়।
সরেজমিন পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বারান্দিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান,ব্যালটে তাদের ঝামেলার শেষ ছিল না। ইভিএমে সেই ঝামেলা অনেক কমেছে। ভোট জালিয়াতি, ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও টানাটানি, দীর্ঘসময় ধরে গণনা, ভুল হলে ফের গণনাসহ নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হতো তাদের। কিন্তু এবার সেসব ঝামেলা ছিল না। সকাল ৮ টায় তিনি মেশিন চালু করেন। এরপর থেকেই চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ান। যশোর ইনস্টিটিউট স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিটি কলেজের প্রভাষক সৌমেন গাইন জানান, আগে রাতের ঘুম হারাম করে কেন্দ্রে থাকতে হতো। এরপর সকাল হলে ঝামেলার শেষ থাকতো না। ভোটগ্রহণ শেষে দায়িত্ব আরও বাড়তো। গণনা নিয়ে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হতো। তবে এবার আর সেই ঝামেলা নেই। একই ধরনের কথা বলেন ২ নং ওয়ার্ডের শতদল প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বিএফ শাহীন কলেজের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু তাহের, ৩ নং ওয়ার্ডের মাহামুদুর রহমান স্কুল কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সুজন মিয়া, এনএম খান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার আজিজুল হক পাটোয়ারিসহ অনেকে। তারা জানান, আগে ব্যালট পেপার কাটাকাটি করতে সময় লাগতো। সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে ভোটার ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের। বিসিএমসি কলেজের সামনে কথা হয় আব্দুল্লাহ, মনিরুল ইসলাম, রাজিব হোসেন, রেলগেট এলাকায় মনিরুল, ঘোপ এলাকার রাবেয়া খাতুনসহ অন্তত আরও ৮-৯ জন ভোটারের সাথে। তারা বলেন, প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতি হওয়ায় তাদের বুঝতে কষ্ট হয়েছে কীভাবে ভোট দিতে হবে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। যাদের হাতে মেহেদি ছিল তাদের প্রচন্ড বেগ পেতে হয়েছে। অনেকে ভোট না দিতে পেরে বাড়ি ফিরে যান। এ বিষয়ে যশোর ইনস্টিটিউট কেন্দ্রে দায়িত্বরত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের ইন্সট্রাক্টর আসাদুজ্জামান জানান, তার বুথে চারজন মহিলা ভোটার হাতে মেহেদি লাগিয়ে ভোট দিতে আসেন। এ কারণে তাদের হাতের ছাপ পাওয়া যাচ্ছিল না। এদের মধ্যে দু’জন বাড়িতে ফিরে হারপিক দিয়ে হাত ধুঁয়ে মেহেদি উঠিয়ে এসে ভোট দেন। বাকি দু’জন ভোট দিতে পারেনি। একই কেন্দ্রের আরেকজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অনুপমা সরকার বলেন, তার বুথেও দু’জন মহিলা ভোট দিতে এসে মেহেদি থাকার কারণে ভোট না দিয়ে ফিরে যান। এমন ঘটনা আরও অনেক কেন্দ্রে ঘটে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনের ত্রুটির কথা শোনা যায়। টিচার্স টেনিং কলেজের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার বিধান চন্দ্র জানান, তাদের দু’টি ইভিএম মেশিনে রিডিং হচ্ছিল না। পরে নির্বাচন কমিশনে খবর দেয়ার অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যায়।
ঘোপ নওয়াপাড়া রোড বাইলেন এলাকার গাজী শওকত আলী, সেন্ট্রাল রোডের মুজিবুর, বারান্দিপাড়ার রাকিবুল, স্টেশন এলাকার বুবলিসহ সাধারণ ভোটারদের দাবি, ইভিএমে ভোট ভোটারদের নানা ধরনের সুবিধা করে দিয়েছে। এতে জাল ভোট দেয়ার উপায় নেই। ফলে, স্বচ্ছন্দে তারা কেন্দ্রে যেয়ে ভোট দেন।
বিশেষ প্রতিনিধি







