মণিরামপুরের বিএনপি কর্মী মেজবা উদ্দিন চন্টু হত্যা মামলার আসামি মণিরামপুরের ঢাকুরিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি আশুতোষ মল্লিককে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, নিহত বিএনপি কর্মী মেজবা উদ্দিন চন্টুর সঙ্গে আশুতোষের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল। আশুতোষ ঢাকুরিয়ার একটি বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
মণিরামপুর থানার এসআই তারা মিয়া জানান, ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ কাশিপুর এলাকার বিএনপি কর্মী মেজবা উদ্দিন চন্টুকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরবর্তীতে ১৯ মার্চ তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নয় বছর পর গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর চন্টুর ভাই আলী হোসেন বাদী হয়ে মণিরামপুর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খবির মোল্লাসহ ৩৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে সোমবার রাতে যুবলীগ নেতা আশুতোষ মল্লিককে আটক করা হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিএনপি কর্মী মেজবা উদ্দিন চন্টু একের পর এক মামলার আসামি হওয়ায় গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। মামলার আসামিরা মণিরামপুর থানার তৎকালীন ওসি খবির মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের ১৫ লাখ টাকা দেয় চন্টুকে ঢাকা থেকে ধরে আনতে।
এরপর পুলিশ কর্মকর্তারা ২০১৫ সালের ১৭ মার্চ গাংড়া গ্রামের চালক নয়নের মাইক্রোবাস ভাড়া করে মণিরামপুর থেকে ঢাকা গিয়ে চন্টুকে ধরে যশোর ডিবি অফিসে আটকে রাখেন। বিষয়টি চন্টুর পরিবার জানতে পেরে আসামি জুয়েল ও হাশেম আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা ১০ লাখ টাকা নিলেও চন্টুকে মুক্তি না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে থাকে। একপর্যায়ে চন্টুর পরিবার জানতে পারে, তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করছে আসামিরা।
পরে নয়নের মাইক্রোবাস ভাড়া করে চন্টুর স্বজনরা মণিরামপুরের খেদাপাড়ার গরীবপুর শ্মশানঘাট এলাকায় পৌঁছে দেখে আসামি নুরুন নবী গাছি দা দিয়ে চন্টুর পিঠে কোপ দিচ্ছে। এরপর অপর আসামিরা কুপিয়ে জখম করে, তার দুই চোখ তুলে ফেলে এবং পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়। উপস্থিত লোকজনের ধাওয়া খেয়ে চন্টুর স্বজনরা পালিয়ে আসে। দুই দিন পর, ১৯ মার্চ স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে চন্টুর লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে শনাক্ত করেন স্বজনরা।
নয় বছর পর আদালতে মাধ্যমে মামলা করা হয়। আদালত মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। তদন্তে আশুতোষ মল্লিকের সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে আসায় পুলিশ তাকে আটক করে।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খবির মোল্লা, এসআই তাসমিম, এসআই শাহজাহান, এসআই তৌহিদ, এসআই মাসুম, গৌরীপুর গ্রামের মৃত শফিক আমালের দুই ছেলে জুয়েল ও হারুন অর রশীদ, মৃত আরশাদ আলীর তিন ছেলে হাশেম আলী, আব্দুল মান্নান ও ইউসুফ আলী, সৈয়দ আহম্মদের ছেলে রেজাউল ইসলাম, মনির পাটোয়ারির ছেলে ফারুক, খড়িঞ্চি গ্রামের মৃত প্রফুল্ল সরকারের ছেলে কাজল, কাশিপুর গ্রামের লুৎফর কারিগরের ছেলে মিজানুর রহমান রেন্টু, শাহজাহানের ছেলে ফয়সাল, হায়দারের ছেলে মাসুদ, চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল মজিদ বেপারির ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, হায়দারের ছেলে সাইফুল, তাহের ও তার ছেলে মামুন, জবেদ আলীর ছেলে করিম, মৃত গিরীন ডাক্তারের ছেলে অরবিন্দু হাজরা, আহম্মদ আলীর ছেলে ফারুক, লালু মিয়ার ছেলে হোসেন, শাহজাহানের ছেলে আমির হোসেন, সিদ্দিকের ছেলে নুরুন নবী, হেলাঞ্চি গ্রামের আমির হোসেনের দুই ছেলে আব্দুল আলিশ জিন্নাহ ও হাবিবুর রহমান হবি, মকবুল হোসেনের ছেলে সিদ্দিক, মৃত মান্দার আলীর ছেলে হাফিজুর, শমশেরবাগ গ্রামের মৃত এলাহী বক্সের দুই ছেলে গোলাম হোসেন ও আবুল হোসেন, খড়িঞ্চি গ্রামের মোবাশ্বর হোসেনের ছেলে আসাদুজ্জামান ডাবলু, মৃত ফকির আহম্মেদের ছেলে শফিয়ার রহমান, জমশেদের ছেলে হাবিবুর রহমান, রসুলপুর গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে খলিল এবং গাংগুলিয়া গ্রামের সলেমান বিশ্বাসের ছেলে আলাউদ্দিন লিটন।
মণিরামপুর প্রতিনিধি







