Friday, December 5, 2025

বাঁগআচড়ার চেয়ারম্যান বাড়িতে এখন শুনশান নীরবতা, তুহিনও চলে গেলেন অবেলায়

কয়েক বছরের ব্যবধানে একে একে পরিবারের সবার প্রস্থান ঘটেছে যশোরের বাগআঁচড়ার ঐতিহ্যবাহী চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে। প্রথমে মারা যান মেজো মেয়ে নিপা, দুই বছর আগে না-ফেরার দেশে চলে যান বড় ছেলে শাহীন, তার অল্প কিছুদিন পরেই মৃত্যুবরণ করেন মা মনোয়ারা বেগম। একসময় প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা সেই চেয়ারম্যান বাড়িতে যাতায়াত ছিল শুধু ছোট ছেলে আসাদুজ্জামান তুহিনের। কিন্তু সোমবার দিবাগত রাতে অবেলাতেই চলে গেলেন সেও। ফলে এখন পুরো চেয়ারম্যান বাড়ি শূন্যতার দগদগে ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে।

তুহিন ছিলেন রাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। তার বাবা আবু দাউদ সাতক্ষীরার কলারোয়া থানার কেরালকাটা ইউনিয়নের টানা তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। দাদা সোলায়মান সরদারও একই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে পাঁচবার দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির রাজনীতিক পরিবেশেই বেড়ে ওঠেন তুহিন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। জীবিকার তাগিদে যোগ দেন চাকরিতে। সর্বশেষ তিনি যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ (মনিরামপুর সার্কেল) এ এনফোর্সমেন্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তবে রাজনীতির প্রতি টান কখনোই ছাড়েননি। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এলাকায় ফিরে আবার সক্রিয় রাজনীতিতে নামেন। স্বপ্ন ছিল দাদা ও বাবার মতো একদিন জনপ্রতিনিধি হওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের আগেই থেমে গেল তার জীবনপ্রদীপ।

স্বজনেরা জানান, পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাড়িতে আসেন তুহিন। সারাদিন নানা কর্মসূচিতে অংশ নেন। কিন্তু রাতে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করলে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।

বাঁগআচড়ার চেয়ারম্যান বাড়িতে এখন শুনশান নীরবতা, তুহিনও চলে গেলেন অবেলায়
বাঁগআচড়ার চেয়ারম্যান বাড়িতে এখন শুনশান নীরবতা, তুহিনও চলে গেলেন অবেলায়

মঙ্গলবার জোহরের পর সাতক্ষীরা জেলার কেরালকাটা ইউনিয়নের ইলিশপুর গ্রামে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এরপর তার মরদেহ আনা হয় বাগআঁচড়ার ফুলতলায়। শত শত মানুষ শেষবারের মতো তাকে দেখতে ভিড় করেন সেখানে। আসরের নামাজের পর স্থানীয় মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয়। জানাজায় অংশ নেন যশোর-১ আসনের সাবেক এমপি মফিকুল হাসান তৃপ্তিসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের বহু মানুষ।

বাঁগআচড়ার চেয়ারম্যান বাড়িতে এখন শুনশান নীরবতা, তুহিনও চলে গেলেন অবেলায়স্থানীয়রা জানায়, একসময় প্রাণচঞ্চলতায় ভরা চেয়ারম্যান বাড়ি ছিল দাউদ চেয়ারম্যানের দুই ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রীকে ঘিরে। প্রতিদিন মানুষের যাতায়াত ছিল সেখানে। সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে পাশে থাকতেন দাউদ চেয়ারম্যান, তার বড় ছেলে শাহীন ও ছোট ছেলে তুহিন। কিন্তু একে একে স্ত্রী, বড় ছেলে, মেজো মেয়ে হারিয়ে তিনি একা হয়ে পড়েছিলেন। কখনো থাকেন মেয়ের বাড়িতে, কখনো বোনের বাড়িতে। মাঝে মাঝে তুহিন বাড়িতে আসতেন বলেই কিছুটা প্রাণ থাকতো চেয়ারম্যান বাড়িতে। এবার সেই প্রদীপও নিভে গেল। পরিবারের ভরসা হয়ে ওঠা ছোট ছেলে তুহিনও চলে গেলেন অবেলায়। ফলে চেয়ারম্যান বাড়ি আজ শুনশান, নীরব, নির্জন। একসময় মানুষের ভিড়ে মুখর ছিল যে বাড়ি, আজ সেখানে শুধু স্মৃতির হাহাকার। অন্যদিকে, স্বজন হারানোর ক্ষত নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সকলের প্রিয় দাউদ চেয়ারম্যান।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর