বিপন্ন ঐতিহ্য, অবহেলিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
রনি হোসেন, কেশবপুর (যশোর): মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত জন্মস্থান যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ীর মধুপল্লী আজ ধ্বংসের মুখে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদাসীনতা ও সংস্কারের বরাদ্দ না থাকায় এই ঐতিহাসিক স্থানটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।
জরাজীর্ণ মধুপল্লী
মধুপল্লীতে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে দত্তপুকুর—যার চারপাশ ভেঙে জীর্ণ হয়ে আছে। মহাকবির জন্মভিটার বিভিন্ন স্থাপনা, এমনকি কাকার বাড়িও শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে। দরজা-জানালার ফাটল ও দেয়ালের বড় ভাঙন যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
যদিও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আড়াই কোটি টাকা সংস্কার বাজেট পেয়েছে, মধুপল্লীর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পর্যটক ও সংস্কৃতিপ্রেমীরা। তাদের দাবি, জরুরি বরাদ্দ, স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া মধুপল্লীর ঐতিহ্য রক্ষা সম্ভব নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখনো দুর্বল প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে আছে। বর্তমানে মাত্র চারটি আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে দেশের আট বিভাগ ও প্রায় দুই হাজার প্রত্নস্থাপনা তদারকি করা হয়। বাজেট সংকট, জনবলের ঘাটতি ও নিয়োগবিধি না থাকায় নতুন কর্মী নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে অনেক প্রত্নস্থাপনাই অবহেলায় ধ্বংসের পথে। এমনকি বিগত বছরগুলোতে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ৩০টিরও বেশি গেজেটেড প্রত্নস্থাপনাকে তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়েছে।
এদিকে শিল্পকলা একাডেমি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও দুদকের মতো প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই জেলা পর্যায়ে কার্যালয় স্থাপন করলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কার্যক্রম সেভাবে প্রসারিত হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের মতামত
মধুপল্লীর কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান জানান, সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা বহুবার জানালেও বরাদ্দ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন,
“মধুপল্লীর জন্য এ বাজেটে সংস্কার বরাদ্দ ধরা হয়নি। তবে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অন্তত ২০ লাখ টাকার কাজ করার চেষ্টা করব।”
মধুসূদনের মতো বিশ্বকবি ও বাংলাদেশের গৌরবের স্মৃতিবিজড়িত মধুপল্লীর এ অবস্থা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। দ্রুত সংস্কার না হলে দেশীয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক গর্ব ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।







