চাকরির সাক্ষাৎকারে সাধারণ প্রশ্নগুলোতেই অনেক সময় প্রার্থীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে ‘আমরা কেন আপনাকে নিয়োগ দেব?’ বা ‘আপনার শক্তি ও দুর্বলতা কী?’—এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকে সঠিকভাবে নিজের দক্ষতা উপস্থাপন করতে পারেন না। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কীভাবে এসব প্রশ্নের উত্তর দিলে নিয়োগকর্তার কাছে প্রার্থীর আলাদা ভাবমূর্তি তৈরি হয়। গেটসের মতে, শুধু কারিগরি দক্ষতা সাক্ষাৎকারে সাফল্য এনে দেয় না। নিয়োগকর্তারা প্রার্থীর মোটিভেশন, অ্যাডাপটেশন (মানিয়ে নেওয়া) ক্ষমতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতার বিষয়গুলো যাচাই করেন। তাই সাক্ষাৎকারে নিজেকে উপস্থাপন করার সময় সততা, প্রস্তুতি ও কৌশলী চিন্তাভাবনা জরুরি। চাকরির সাক্ষাৎকারে সফল হতে চার প্রশ্ন নিয়ে বিল গেটসের মন্তব্য জেনে নেওয়া যাক।
‘আমরা আপনাকে কেন নিয়োগ দেব?’
বিল গেটস বলেন, এ প্রশ্নের উত্তর শুধুই নিজের অর্জন তুলে ধরে আত্মপ্রচার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। এ প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে প্রার্থী নিজের যোগ্যতা তুলে ধরার সুযোগ পান। নিয়োগকর্তারা শুধু অর্জনের কথা শুনতে চান না, তাঁরা জানতে চান, প্রার্থীর দক্ষতা কীভাবে প্রতিষ্ঠানের উপকারে আসবে। সাধারণভাবে ‘আমি পরিশ্রমী’ বা ‘আমি দল হয়ে কাজ করি’—এমন উত্তর না দিয়ে গেটসের পরামর্শ হলো নির্দিষ্ট উদাহরণ টেনে আনা। যেমন যদি কোনো পদে সৃজনশীলতা প্রয়োজন হয়, তবে প্রার্থী বলতে পারেন কীভাবে অতীতে তিনি কঠিন সমস্যা নতুনভাবে সমাধান করেছেন এবং সেই অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে উপকৃত করবে। তরুণ বয়সে গেটস নিজে চাকরির সাক্ষাৎকারে তাঁর প্রোগ্রামিং দক্ষতা, সফটওয়্যারের প্রতি গভীর আগ্রহ ও দল হয়ে কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। অর্জনের পাশাপাশি পেশার উন্নয়ন নিয়ে প্রেরণা ও উদ্দীপনার কথাও বলতেন তিনি। এতে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা তাঁর দীর্ঘমেয়াদি সম্ভাবনা সম্পর্কে আশ্বস্ত হতেন।
‘আপনার শক্তি ও দুর্বলতা কী?’
গেটসের মতে, এখানে প্রার্থীর উচিত চাকরির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক শক্তির জায়গা তুলে ধরা এবং সেই শক্তির জায়গা বাস্তবে কীভাবে বাস্তবে কাজে লেগেছে, সেটিও বলা উচিত। দুর্বলতার ব্যাপারে উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি পরামর্শ দেন, খোলামেলা হতে হবে, তবে একই সঙ্গে জানাতে হবে, সেটি কাটিয়ে উঠতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নিজের উদাহরণ দিয়ে গেটস বলেন, তিনি বিক্রয় বা বিপণনে ততটা দক্ষ ছিলেন না, তবে পণ্য তৈরি ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে ছিলেন সফল। দুর্বলতা গোপন না করে শক্তির জায়গাকে গুরুত্ব দিয়ে তিনি নিয়োগকর্তাদের আস্থা অর্জন করেছিলেন।
‘পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?’
গেটস মনে করেন, এই প্রশ্ন ভবিষ্যৎ অনুমানের জন্য নয়, বরং প্রার্থীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বোঝার জন্য। উত্তর দেওয়ার সময় পেশাগত লক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠানের বিকাশের সঙ্গে মিলিয়ে দেখানো সবচেয়ে কার্যকর। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা পরিবর্তিত হলেও ভবিষ্যৎ ভাবনা ও এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কাছে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
‘আপনার প্রত্যাশিত বেতন কত?’
এই প্রশ্নে আত্মবিশ্বাস ও নমনীয়তার মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি বলে মনে করেন গেটস। নির্দিষ্ট সংখ্যা বললে প্রার্থীকে অনমনীয় মনে হতে পারে, আবার খুব কম প্রত্যাশা করলে যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট খাতের বেতনকাঠামো নিয়ে আগে থেকেই গবেষণা করার পরামর্শ দেন। নির্দিষ্ট সংখ্যা না দিয়ে যুক্তিসংগত একটি সীমা উল্লেখ করা ভালো। পাশাপাশি নিজের দক্ষতা ও অবদান দিয়ে সেই প্রত্যাশার যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করলে প্রার্থীর পেশাদারত্ব ফুটে ওঠে।
গেটসের শেষ পরামর্শ
গেটস মনে করেন, সাক্ষাৎকার শুধু প্রশ্নোত্তর নয়। এটি নিজের গল্প বলার সুযোগ। সেই গল্পে থাকতে হবে আগ্রহ, সম্ভাবনা ও প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য। তাঁর মতে, সাক্ষাৎকারে নিখুঁত হওয়ার চেয়ে আন্তরিকভাবে সংযোগ তৈরি করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লিংকডইনের ২০২৪ সালের ওয়ার্কপ্লেস লার্নিং রিপোর্ট অনুযায়ী, যোগাযোগ, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা ও সমস্যা সমাধান—এই তিনটি দক্ষতাকেই বিশ্বব্যাপী নিয়োগকর্তারা সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। গেটসের মতে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কৌতূহল প্রকাশ করলে তা মুখস্থ উত্তর দেওয়ার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হয়। সফল প্রার্থীরা কেবল কী করতে পারেন, তা–ই নয়, কেন করতে চান, সেটিও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া







