গত ১৭ বছর ধরে বিএনপির উপর দমন-পীড়নের সাক্ষী ছিলেন যশোর পৌর যুবদলের ২ নম্বর ওয়ার্ড শাখার যুগ্ম সম্পাদক মো. সাদিকুল ইসলাম সাদেক। দলের জন্য জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন, একাধিকবার কারাগারে থেকেছেন, শহরের অলিগলিতে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন লুকিয়ে। দিনে থেকেছেন রাজপথে। প্রভাবশালী মহল ও প্রশাসনের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহসিকতা ছিলেন তার অন্যতম পরিচয়। আজ সেই সাহসী নেতা আর নেই। সোমবার রাতে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নিজ হাতে দলের পতাকা দিয়ে তার মরদেহ মুড়িয়ে শেষ বিদায় জানিয়েছেন। দীর্ঘ সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভোর ৭টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই শিশু সন্তান, মা ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
গত ৪ আগস্ট সকালে যশোরের চুড়িপট্টিতে নিজ ভবনের ছাদ পরিষ্কার করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বৈদ্যুতিক তারে পায়ের জড়িয়ে পড়ে নিচে পড়ে যান সাদেক। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে অবস্থা খারাপ হওয়ায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তার মৃত্যুর খবরে যশোরে নেমে আসে গভীর শোক। সোমবার সন্ধ্যায় মরদেহ শহরের
চুড়িপট্টির নিজ বাড়িতে পৌঁছালে স্বজন ও সহযোদ্ধারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাড়িতে হাজির হন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এ সময় স্বজনেরা তাকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন, ভারি হয়ে ওঠে গোটা পরিবেশ। তিনি শোকাহত পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। রাত ৯টার পর মরদেহ চৌরাস্তা জামে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। জানাজার পর তার খাটিয়াতে বিএনপির দলীয় পতাকা মুড়িয়ে দেওয়া হয়। রাত ১০টার দিকে তাকে যশোর কারবালা কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজায় সময় অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ছাড়াও জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম, মুনীর আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সাবেক মেয়র মরুফুল ইসলাম, নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক এম তমাল আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হোসেন বাবুল, নগর যুবদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, সদস্য সচিব শেখ রবিউল ইসলাম রবি, স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক মোস্তফা আমির ফয়সাল, সদস্য সচিব রাজেদুর রহমান সাগর, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওমর ফারুক তারেক, সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়িক বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ফেসবুকে লেখেন, সাদেকের মতো প্রাণবন্ত ও দলপাগল যুবককে এমন অসময়ে হারাতে হবে, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি।
যশোর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান বাপ্পি বলেন, ২০০৬ সালে তার সাথে তিনি জেল খেটেছেন। কষ্টের দিনগুলোতে সাদেক তার অনুপ্রেরণা ছিল। জেলেও দলের প্রতি ছিলো তার গভীর ভাবনা। দলের প্রতি তার টান ছিল সত্যিই অবিশ্বাস্য।
এদিকে, সাদেকের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়নসহ অসংখ্য রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাকর্মী শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। বিবৃতি দিয়েছে নগর যুবদল।
তরুন এ যুবদল নেতার অকাল মৃত্যুতে যশোর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, সাদেকের মৃত্যু যুবদলের অপূরণীয় ক্ষতি। তার অবদান যুবদল আজীবন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে।
বিশেষ প্রতিনিধি







