Friday, December 5, 2025

যশোরে আওয়ামী নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়, দুদকের নজরে শীর্ষ জনপ্রতিনিধিরা

যশোরে বিগত ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির চিত্র উন্মোচিত হচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে। ভুয়া প্রকল্প, অনিয়মিত নিয়োগ, স্বজনপ্রীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একে একে আলোচনায় আসছেন জেলার সাবেক প্রভাবশালী নেতারা।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরই দুদক যশোরের এসব সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব ঘেঁটে অনুসন্ধান জোরদার করেছে। ইতোমধ্যে আদালতের মাধ্যমে চারজন সাবেক নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।

স্বপন ভট্টাচার্য্য ও স্ত্রী তন্দ্রার নামে দুটি মামলা

সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ও তার স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা করেছে দুদক যশোর। এক মামলায় উভয়ের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ, আরেক মামলায় স্বপনের নামে ২ কোটি ৪৮ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৪১ কোটি টাকার সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনের তথ্য রয়েছে।

২০২৫ সালের ১৭ মার্চ, যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং পরবর্তীতে সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন।

শাহীন চাকলাদারের সম্পদ ও বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ

যশোর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বিরুদ্ধে ৪২ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ এবং ৩৪১ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে দুদক ঢাকায় মামলা করে। তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও ছেলেকেও এই অনুসন্ধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে আদালত পরিবারের পাঁচ সদস্যের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন।

রণজিৎ রায় পরিবারে চারটি মামলা

সাবেক এমপি রণজিৎ রায়, তার স্ত্রী ও দুই পুত্রের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলায় ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ এবং ২১৯ কোটির বেশি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য তদন্ত করছে দুদক। এসব মামলা ঢাকায় দায়ের হয় ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

রেন্টুর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে

সাবেক পৌর মেয়র ও যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম রেন্টু এবং তার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক যশোর। ইতিমধ্যে তাদের দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত।

অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে দেশ-বিদেশে সম্পদ গড়েছেন রেন্টু।

পিকুলের বিরুদ্ধে গাছ বিক্রি ও প্রকল্পের টাকার দুর্নীতি

সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রকল্প চালিয়ে কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গাছ বিক্রি, জমি ও দোকান ইজারা দিয়ে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন বলে জানায় দুদক। ২০২৫ সালের ১৬ জুন, পিকুলসহ তার স্ত্রী ও দুই ছেলের বিদেশযাত্রা আদালত নিষিদ্ধ করেন।

নজরে হায়দার গনি খান পলাশ

যশোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হায়দার গনি খান পলাশের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মেয়র থাকাকালীন বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং তার পরিবারের সদস্যদেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। দুদক সূত্রে জানা যায়, তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ যাচাইয়ের কাজ চলছে।

আত্মগোপনে ফরিদ আহমেদ চৌধুরী

যশোর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং জেলা যুবলীগ সভাপতি মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানান দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা।

দুদকের মতে, যশোরে দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষমতার সুযোগ নিয়ে যারা অবৈধভাবে সম্পদ গড়েছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার। অনুসন্ধানের অগ্রগতি অনুযায়ী আরও মামলা ও সম্পদ জব্দের আদেশ আসতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর