Friday, December 5, 2025

কেশবপুরে জলাবদ্ধতায় দিশেহারা হাজারো মানুষ, টংঘরে গৃহহীন পরিবার

জাকির হোসেন: টানা বৃষ্টিপাতে যশোরের কেশবপুর উপজেলায় হরিহর নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে দুই ফুট ওপরে উঠেছে। ফলে পৌরসভা ও আশপাশের গ্রামগুলোতে বাড়ছে জলাবদ্ধতা। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে অস্থায়ী টংঘর নির্মাণ করে বসবাস শুরু করেছেন।

কেশবপুর পৌর এলাকার মধ্যকুল, সাহাপাড়া ও আমতলা ঘুরে দেখা গেছে—পানিতে তলিয়ে গেছে চলাচলের রাস্তাঘাট, বাড়ির আঙিনা, এমনকি বসতঘরও। সরদারপাড়ার বাসিন্দা হামিদা খাতুন জানান, “গত এক মাস ধরে পানি জমে আছে, কিন্তু বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের ভারি বৃষ্টিতে ঘরের ভেতরে পানি উঠে গেছে। বাধ্য হয়ে রাস্তায় এসে আশ্রয় নিতে হয়েছে।”

ভ্যানচালক জিন্নাত আলী বলেন, “ঘরের ভেতর হাঁটু পানি, পরিবার নিয়ে রাস্তার পাশে টংঘর বানিয়ে থাকতে হচ্ছে। একা আমি না—এলাকার অনেকেই এমন অবস্থায় আছে।”

পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আয়ুব খান বলেন, “মানুষ এখন আর ত্রাণ চায় না, তারা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান চায়। প্রতি বছর এই সমস্যার কারণে মৎস্য ও কৃষিতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।”

২৭ বিল বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, “পলি জমে নদী-নালাগুলো ভরাট হয়ে গেছে, তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অপরিকল্পিত মাছের ঘের। পানি বের হতে না পারায় পুরো কেশবপুর এখন পানির নিচে। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।”

কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন জানান, তাঁর ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের অধিকাংশই পানিতে ডুবে গেছে। “জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যা এখন ৪০০ ছাড়িয়েছে। আলতাপোলে অন্তত ১১টি পরিবার রাস্তার পাশে উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।”

পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল এনামুল হক জানান, “পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডেই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। মোট ৩২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছে।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন শিকদার বলেন, “বর্তমানে হরিহর নদের পানি ১০ দশমিক ৭৬ ফুটে পৌঁছেছে, যেখানে স্বাভাবিক মাত্রা ৮ দশমিক ৬৯ ফুট। নদীর পানি বৃদ্ধি ও খালের প্রতিবন্ধকতা মিলিয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।”

তিনি জানান, দশটি সংযোগ খাল পুনঃখননের জন্য প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে হরিহর নদের উৎপত্তিস্থল থেকে আপারভদ্রা পর্যন্ত ৩.৭ কিলোমিটার এবং খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় আরও ৪ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হচ্ছে। খনন শেষ হলে পানি সরে যাওয়ার গতি বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, স্থায়ী সমাধান ছাড়া এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে না। জলাবদ্ধতা শুধু ভৌত পরিকাঠামো নয়, এটা এখন জীবন ও জীবিকার বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর