Thursday, July 17, 2025

নারীর ‘মুড সুইং’ কি? সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণা না শারীরবৃত্তীয় বাস্তবতা?

মেয়েরা বুঝি হুটহাট মুড বদলায়!” — এ ধরনের কথা আমাদের সমাজে প্রায়ই শোনা যায়। বিশেষ করে নারীদের আবেগ, রাগ কিংবা হাসি-কান্নার প্রতিটি প্রকাশ নিয়েই চলে বিচার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, নারীর ‘মুড সুইং’ বা আচরণগত পরিবর্তন আসলে কোনো খামখেয়ালিপনা, নাকি এটি একধরনের প্রাকৃতিক ও শারীরিক বাস্তবতা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের শরীরে মাসিক হরমোন পরিবর্তনের ফলে আবেগীয় ওঠানামা ঘটতে পারে। বিশেষ করে পিরিয়ডের আগে-পরে, গর্ভাবস্থায় কিংবা মেনোপজের সময় নারীদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা বা হঠাৎ মন খারাপ হয়ে যাওয়া— এসব ঘটে একেবারে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা কবির বলেন, “মুড সুইং নারী-পুরুষ সবারই হয়, তবে নারীদের ক্ষেত্রে এটি হরমোনের ওঠানামার সঙ্গে বেশি সংযুক্ত। এতে লজ্জার কিছু নেই। বরং পরিবার, সহকর্মী বা আশপাশের মানুষের সহানুভূতিশীল আচরণ দরকার।”

তবে সমাজে এই বিষয়টি নিয়ে রয়েছে নানা কুসংস্কার। অনেকেই নারীর মুড বদলকে ‘আতেলতা’ বা ‘দৃঢ়চেতা না হওয়া’র লক্ষণ হিসেবে দেখে থাকেন। কর্মক্ষেত্রেও অনেক সময় নারী সহকর্মীর আবেগপ্রবণ আচরণকে নেতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করা হয়।

নারীদের হরমোনজনিত মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষিত হওয়া এবং সহানুভূতির মানসিকতা তৈরি করাই হলো সমাধান। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে পরিবার, কর্মস্থল এমনকি গণমাধ্যমেও এই বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।

যুবক মেহেদী হাসান বলেন, “আগে এসব বুঝতাম না। কিন্তু যখন জানলাম এটা হরমোনের কারণে হয়, তখন থেকে বিষয়টা নিয়ে আরও সহানুভূতিশীল হয়েছি।”

নারীর ‘মুড সুইং’ কোনো দুর্বলতা নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক ও মানবিক বিষয়। এটিকে উপলব্ধি করে সমাজে সহমর্মিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই আমাদের পরবর্তী দায়িত্ব। নারীকে বোঝার এই চেষ্টাই নারী-পুরুষের সম্মিলিত সহাবস্থানের ভিতকে আরও দৃঢ় করবে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর