পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর সম্পর্ক মা ও সন্তানের। কিন্তু রাজনৈতিক জটিলতা বারবার সেই সম্পর্ককে দূরত্বের বেড়াজালে বন্দি করেছে। দীর্ঘ সাত বছর পর বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সরাসরি দেখা হতে যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। জানা গেছে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পক্ষ থেকে পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ওই রাতেই ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি। দলের পক্ষ থেকে তার ভ্রমণের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
লন্ডনে যাওয়ার পর বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে কিছুদিন কাটাবেন বেগম জিয়া। এরপর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিন্স হাসপাতালে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিএনপির সূত্র বলছে, চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালনও করতে পারেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের এই সফরে ২৫-৩০ জনের একটি প্রতিনিধি দল যাওয়ার কথা রয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক তালিকা এখনো প্রকাশ হয়নি, তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ১৫ জনের একটি সম্ভাব্য তালিকা আলোচনায় এসেছে। এ দলে রয়েছেন চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মীরা।
বেগম জিয়ার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) গত আগস্টে নবায়ন করা হয়। পরবর্তীতে নভেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় তার ভিসার প্রক্রিয়া সহজতর করা হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন বেগম খালেদা জিয়া। দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান তিনি। এরপর থেকে তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নেত্রীকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ৭৯ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
২০১৭ সালে লন্ডনে সর্বশেষ দেখা হয়েছিল মা-ছেলের। সেই সাক্ষাৎকালে উভয়ই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। এবারও একই আবেগময় মুহূর্তের অপেক্ষায় আছেন বিএনপি নেতারা। দলের অনেকেই আশা করছেন, চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরে নতুন উদ্যমে দল পরিচালনায় সক্রিয় হবেন।
এই সফর শুধু একটি মায়ের চিকিৎসার প্রয়াস নয়, বরং এটি রাজনীতির শৃঙ্খল ভেঙে একটি পরিবারকে পুনর্মিলনের সুযোগ করে দেওয়ার প্রতীক।







