Tuesday, March 25, 2025

যশোরে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের তাফসীরুল কুরআন মাহফিল: মুফতি আমীর হামজার হৃদয়গ্রাহী আলোচনা

ওয়াসী মোহাম্মদ সাদিক: যশোর সদরের পুলেরহাটে আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসীরুল কুরআন মাহফিল ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি করেছে। মাহফিলটি শহরতলীর আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলেমগণের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং ইসলামী সংগীত পরিবেশনায় প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ এতে অংশ নিচ্ছেন।

আজ ২ জানুয়ারি (বুধবার) মাহফিলের দ্বিতীয় দিনে আলোচনায় অংশ নেন মুফতি আমীর হামজা। তিনি অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় সুরা তওবার ১১৩ নম্বর আয়াত, সুরা হা-মীম আস-সাজদাহর ২৬ নম্বর আয়াত এবং সুরা আনফালের ২ নম্বর আয়াত নিয়ে আলোচনা করেন।

সুরা আনফালের ২ নম্বর আয়াত:

“মুমিনগণ তো তারাই, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে প্রকম্পিত হয় এবং তাদের ওপর যখন তার আয়াতগুলো পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দেয় এবং তারা তাদের রবের ওপর ভরসা করে।”

মুফতি আমীর হামজা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় এবং স্মরণে এক ধরনের কম্পন তৈরি হয়। যখন তারা আল্লাহর কুরআনের আয়াতগুলো শোনে, তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং তারা সর্বদা আল্লাহর ওপর ভরসা করে।

তিনি বলেন, এই আয়াত আমাদের অন্তরকে বিশুদ্ধ করার জন্য এক মহান শিক্ষা দেয়। এটি জানায় যে, আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা এবং তার আদেশ মানার মাধ্যমেই আমরা প্রকৃত মুমিন হতে পারি।

মুফতি আমীর হামজা সুরা তওবার ১১৩ নম্বর আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শিরক ও কুফরের বিষয়ে সতর্ক করেন এবং ইসলামের সীমানা অতিক্রম না করার তাগিদ দেন। পাশাপাশি, সুরা হা-মীম আস-সাজদাহর ২৬ নম্বর আয়াতে শিরকের ভয়াবহতা এবং আল্লাহর শাস্তির কথা তুলে ধরেন।

তিনি এই তিনটি আয়াতের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে বলেন, ঈমানদারের জীবনে আল্লাহর প্রতি ভয়, ভালোবাসা এবং পূর্ণ ভরসা থাকা জরুরি। এসব গুণাবলি ছাড়া একজন মুমিন তার প্রকৃত অবস্থান বুঝতে পারে না।

মাহফিলের পরিবেশ ও আয়োজন

তিন দিনব্যাপী এই মাহফিলে প্রতিদিনের মতো আজও দেশের খ্যাতিমান ইসলামী সংগীতশিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। মাহফিলের আয়োজনে নারীদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তিনটি স্থানে—পুলেরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলেরহাট বালিকা বিদ্যালয় এবং আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ গেট এলাকায়। তাদের জন্য এলইডি স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছে।

মাহফিল প্রাঙ্গণে প্রবেশের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা এবং স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল।

আরো পড়ুন: যশোরে প্রধান বক্তার বক্তব্য: যা বললেন আল্লামা মামুনুল হক

ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

মুফতি আমীর হামজার আলোচনা উপস্থিত মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি কুরআনের আয়াতগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যা হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে এবং শ্রোতাদের ইসলামের প্রতি আরও আন্তরিক হওয়ার প্রেরণা দিয়েছে।

স্থানীয় এক মুসল্লি বলেন, “মুফতি সাহেবের আলোচনায় আমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় এবং ভালোবাসার অনুভূতি আরও গভীর হয়েছে। এ ধরনের মাহফিল আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করতে অনেক সাহায্য করে।”

শেষ দিনের অপেক্ষা

আগামীকাল মাহফিলের তৃতীয় ও শেষ দিনে আরও বিশিষ্ট আলেমগণ আলোচনা করবেন। এতে ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই মাহফিল যশোরবাসীর জন্য এক অনন্য দ্বীনি শিক্ষা এবং আত্মশুদ্ধির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর