Friday, December 5, 2025

শহীদ কাজী সালাউদ্দিনের মৃত্যু বার্ষিকি আজ

৯ই ডিসেম্বর ফরিদপুর এর মুক্তিযুদ্ধর ইতিহাসে একটি গুরুত্বনপূর্ণ দিন। এদিন শহীদ কাজী সালাউদ্দিনসহ সালাউদ্দিন বাহিনীর ৬যোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন। বিজযের ৪৯বর্ষপূর্তিতে দেশ এর তরুণ প্রজন্ম এর কাছে সেই যুদ্ধের ঘটনা তুলে ধরতে চাই। ৯ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এ দুপর ১২টার দিকে যশোর-ফরিদপুর সড়কে এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন করিমপুর এলাকায় সেনাবাহিনীর একটা জিপ নিয়ে ঢুকে পরেন। এই খবর পাওয়ার সাথে সাথে সালাউদ্দিন বাহিনীর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দদিন ও তার সহযোদ্ধারা যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ছিলেন শহীদ মেজবাহ উদ্দিন নউফেল, কাজী ফরিদ প্রমুখ।
কাজী সালাউদ্দিনের নির্দেশে পাকিস্তানি ক্যাপটেনের উপর ঝাঁপিয়ে পরেন, তার হাতের এলএমজি গর্জে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে ভেসে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাপটেনের জিপটি। এর আধা ঘণ্টা পর যশোর থেকে আগত সেনা সাঁজোয়া বহর এ সংবাদ পেয়ে তিন দিক থেকে সালাউদ্দিন বাহিনীর ৩৬জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় তুমুল সম্মুখ যুদ্ধ। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে আসতে থাকে, তখন কমান্ডারের নির্দেশ আসে ‘এক পাক আর্মি, এক গুলি’।
এই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন সালাউদ্দিন বাহিনীর ৬যোদ্ধা শহীদ নউফেল, শহীদ ওহাব, শহীদ মুজিবর, শহীদ দেলয়ার, শহীদ আদেল ও শহীদ সোহরাব। বাকি সহ যোদ্ধাদের বাঁচানোর জন্য নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাহসী এই বীরযোদ্ধা এলএমজি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করতে করতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামনা সামনি অবস্থান নেন। তাঁর ব্রাশ ফায়ারের গুলিতে অসংখ্য পাক সেনা রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। সালাউদ্দিনের এই সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা দিক্বিদিক ছুটে জীবন বাঁচায়। এরপর পাক সেনারা একত্রিত হয়ে আবার সালাউদ্দিন বাহিনীর উপর হামলা চালায়। ততক্ষনে সালাউদ্দিন বাহিনীর কাছে থাকা অস্ত্রের গুলির মজুদ প্রায় শেষ হয়ে যায়, তখন কমান্ডারের নির্দেশ আসে ‘এক পাক আর্মি, একগুলি’।
সালাউদ্দিনের নির্দেশে সহযোদ্ধারা জীবন বাঁচিয়া নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। একা সালাউদ্দিন জীবন বাজি রেখে এলএমজিএর ট্রিগার চাপতে থাকেন। এবারও অসংখ্য পাক সেনা হতাহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা চারিপাশ থেকে হামলা চালাতে থাকে, এমন সময় পাকিস্তানি সেনাদের একটি বুলেটে তাঁর এলএমজি এর ম্যাগজিন উড়ে যায়। আর একটি বুলেট তাঁর পিঠে বিদ্ধ হয়। রক্তাত্ত সালাউদ্দিন ৭০০গজ দূরে একটি বাড়ির ঘরের পাটা তনে আশ্রয় নেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই বাড়িতে ঢুকে বাড়ির সব মানুষদের গুলি করে হত্যা করে এবং বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। শহীদ হন ২২বছর বয়সী তরুণ বীরযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন। ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর ১৭ই ডিসেম্বের ফরিদপুর হানাদার মুক্ত হলে সেই বাড়িতে শহীদ সালাউদ্দিনের কংকাল সনাক্ত করা হয় এবং সেই দিন-ই তাকে ফরিদপুরে আলিপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।
বিজয়ের ৭দিন আগে ৯ই ডিসেম্বর ফরিদপুরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কানাইপুর এলাকার করিমপুরের এই সম্মুখ যুদ্ধে সালাউদ্দিন বাহিনীর এই মহান আত্মত্যাগ ও সাহসিকতা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গর্বের ইতিহাস। তার এই বীরোচিত ভূমিকার জন্য স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হওয়া উচিৎ। আমাদের মত আজকের তরুণ প্রজন্ম যারা যুদ্ধ দেখিনি, শাহীদ সালাউদ্দিন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের দেশের জন্য এই মহান আত্মত্যাগ আমাদের দেশপ্রেমের অনুপ্রেরনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে আমরাও জীবন উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করব না। বুকের তাজা রক্ত দিয়ে আমাদের পূর্ব পুরুষরা যেই স্বাধীন বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন, সেই দেশকে আমরাই গড়ে তুলব একটি সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে।
(লেখক – কাজী নাজিব হাসান, শহীদ কাজী সালাউদ্দিনের ভ্রাতুষ্পুত্র, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ঝিকরগাছা উপজেলা ভূমি অফিস, যশোর।)

 

 

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর