যশোরের কেশবপুরের গ্রামাঞ্চলে মাদক ও জুয়ার প্রসারতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পুলিশি অভিযানেও এসব বন্ধ না হওয়ায় সচেতন মহলসহ অভিভাবকেরা চিন্তিত হয়ে পড়ছে। মাদক পরিহার ও মোবাইলে জুয়া খেলা থেকে বিরত থাকার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া, এসবের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে মাইকিং করা হচ্ছে।
এদিকে, দেশে অনলাইন জুয়ার বেটিং সাইড বন্ধের বিষয়ে সম্প্রতি সংসদ অধিবেশনেও বক্তৃতা করেছেন যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য আজিজুল ইসলাম।
উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নে মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মাইকিং করায় সচেতন মহল খুশি হলেও এর বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েও নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, উঠতি বয়সী যুবকেরা মাদক ও অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ায় অভিভাবক মহলও এখন শংকিত।
পুলিশি অভিযান চললেও এরা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। নেশার টাকা জোগাতে ছিচকে অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে গ্রাম পর্যায়ে এর বিস্তার বেশি লাভ করেছে। করোনা পরবর্তী সময়ে গ্রামাঞ্চলে মোড়ে মোড়ে তৈরি করা দোকানপাটে আড্ডার পাশাপাশি মাদক সেবন এবং তাস, ক্যারাম ও মোবাইলের মাধ্যমে জুয়া খেলা হয়ে থাকে। এছাড়া মাছের ঘেরের টংঘরে আড্ডা জমে মাদকসেবীদের।
কেশবপুর উপজেলা ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে উপজেলার ভোগতী এলাকার শীতলাতলা মোড়, নতুন মূলগ্রাম মাঠ, মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনের বাগানে, মজিদপুর মোড়, দোরমুটিয়া রশিদ মোড়, বাগদা গ্রামের বাঁশ বাগান, শহরের মাছ বাজার, ট্রাক টার্মিনাল, মধ্যকুল স্লুইস গেট ও তেল পাম্প, বাগদা মিলের পাড়, দেউলি মোড়, পাঁজিয়া বাজারের বাগডাঙ্গা মোড়, বাংলালিংক গলি ও নাথপাড়া সংযোগ সড়ক, আলতাপোল, হাসানপুর, টিটাবাজিতপুর, বুড়িহাটি, চিংড়া, সাগরদাঁড়ি, মঙ্গলকোট, চুয়াডাঙ্গা, কর্ন্দপপুর, সন্যাসগাছা ব্রিজের মাথা, কলাগাছি এলাকায় স্থানীয় ও বহিরাগত যুবকেরা এসে মাদক ব্যবসাসহ সেবন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া, সন্ধ্যার পর এসব স্থানে জুয়া এবং মাদক বিকিকিনি ও সেবনের আড্ডা জমে ওঠে।
বিভিন্ন সময়ে কেশবপুর থানা, গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব অভিযান পরিচালনা করে মাদক উদ্ধারসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করলেও থামছে না মাদকের ছোবল।
শুধু চলতি বছরের মে ও চলতি মাসে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার বিভিন্ন মাদক বিক্রির সম্ভাব্য স্থানগুলোতে হানা দিয়ে থানা পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের সদস্যরা মাদকদ্রব্যসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইয়াবা ও গাঁজা। থানা সূত্র জানায়, গত মাসে চারটি এবং চলতি মাসে দুটি মাদকের মামলা হয়েছে।
মজিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর পলাশ বলেন, তার ইউনিয়নের শ্রীফলা, প্রতাপপুর, শ্রীরামপুর ও দেউলী মোড় এলাকায় মাদক বিক্রি এবং সেবনকারীদের আনাগোনা ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। এর সাথে জড়িয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ উঠতি বয়সী যুবকেরা। উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ৮ জুলাই মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাইকে প্রচার করার পর অভিভাবক মহল খুশি হলেও এর বাস্তবায়ন আদৌও হবে কিনা তা নিয়েও সচেতন মহলে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। দ্রুত তার ইউনিয়নের শ্রীফলা, প্রতাপপুর ও শ্রীরামপুর বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উপজেলার মঙ্গলকোট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলকোট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনে বটগাছতলায়, বসুন্তিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ও রামকৃষ্ণপুর এলাকায় মাদক বিক্রেতা এবং সেবনকারীদের আনাগোনা দেখা যায়। সম্প্রতি মাদক বিক্রি ও সেবনকারীদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সচেতন মহল হতবাক হয়ে পড়েছেন। তিনিও দ্রুত এর প্রতিকার চান।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আলাউদ্দীন বলেন, সম্প্রতি অনলাইন জুয়া ও মাদকদ্রব্য বিকিকিনিসহ সেবনকারীদের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে। দ্রুত এদেরকে প্রতিহত করতে না পারলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। এছাড়া অসংখ্য শিক্ষার্থী পাঠদান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
উপজেলা নাগরিক সমাজের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, ‘পৌর শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও মাদক ও জুয়ার প্রসারতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এখনই যদি এদের রুখে দেওয়া না যায়, তাহলে যুব ও শিক্ষার্থীসহ কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য আরও বৃদ্ধি পাবে’। এদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল আলম বলেন, মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোন মাদক ব্যবসায়ী রেহায় পাবে না। থানায় গতমাসে ৪টি ও চলতি মাসে ২টি মাদকের মামলা হয়েছে। এর পাশাপাশি শুক্রবার (১২ জুলাই) থেকে ক্যারাম, তাস ও মোবাইলে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত ৬ জুলাই উপজেলার বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে মাদক, ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ শীর্ষক নাগরিক সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নে এ নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করা হবে।
রাতদিন সংবাদ/আর আই







