Friday, May 3, 2024

শার্শার ঠেঙ্গামারী ও গোমর বিলের পানি অপসারণ করে অনাবাদী জমিতে ধানের চারা রোপনের উদ্বোধন করেছেন- আফিল উদ্দিন

মোঃ মাসুদুর রহমান শেখ বেনাপোলঃ যশোরের শার্শা উপজেলার ঠেঙ্গামারী ও গোমর বিলের পানি অপসারণের উদ্যোগ নিয়ে অনাবাদী ৫০ হাজার হেক্টোর জমিতে ধানের চারা রোপনের উদ্বোধন করেছেন শেখ আফিল উদ্দিন এমপি। মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি-২০২৪) বেলা ১১টার সময় তিনি সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে ঠেঙ্গামারী ও গোমর বিলের পানি অপসারণের দৃশ্য আর এলাকার পা ফাটা, গা ফাটা চাষীদের মুখে মিষ্টি হাসি দেখতে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে নিজের সাজ-পোশাক খুলে চাষী বেশে কাঁদা করা পাকানো বিলে ধানের চারা রোপন করেন। আল্লার কাছে দোয়া করেন, এ বিল যেনো সোনার ফসলে ভরে ওঠে।
এসময় উপস্থিত সফর সঙ্গী আওয়ামীলীগের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, পুলিশ, প্রশাসনসহ এলাকার চাষীদের মধ্যে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
স্বাধীনতার পূববর্তী সময় থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনের অর্ধ-শতাব্দী পর ৫০হাজার হেক্টোর ডোবা জমিতে ধানের চারা রোপন হচ্ছে, এ যেনো রাতের স্বপ্নের মতো বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় চাষীরা। বলেছেন, শার্শাবাসীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে এসে টানা ৪ বারের এমপি আলহাজ্ব শেখ আফিল উদ্দিন ২০০১ সালে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এ বিলের দলিলদার- রুদ্রপুর, দাদখালী, কায়বা, বাদামতলা কায়বা, পাচ কায়বা, গাজীর কায়বা, কলোনী কায়বা, বাইকোলা, গোগা  বিলপাড়া, ভবানীপুর, ভবানীপুর বিলপাড়া ও গোগাবাসীর। এবার বহু প্রতীক্ষিত সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। এ বিলের ধান চাষীদের ঘরে উঠবে, গোলা ভরে যাবে।
এ বিষয়ে ভবানীপুর রুদ্রপর দাদখালী সীমান্ত নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদাণ করেন সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময় থেকে দেশ স্বাধীনের অর্ধ-শতাব্দি পরে হলেও মহান সৃষ্টিকর্তা আমার হাত দিয়ে এ এলাকার অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন, রুটি রুজি ও ভাগ্য গড়ার হাজার হাজার বিঘা ডোবা জমিতে ধান রোপনের উদ্বোধন করার তৌফিক দান করেছেন এজন্য তিনি আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে সমাজের সকল শ্রেণীপেশার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে চলেছেন। আমরা সে উন্নয়নের সারথী হয়ে এলাকার মানুষের দুঃখ, কস্ট লাঘবের জন্য কাজ করছি। আমি শার্শা উপজেলার চাষযোগ্য ও পরিত্যক্ত জমিকে তিন ফসলী ধানের জমিতে রুপান্তরিত করতে চায়। আমি চাই, এলাকার একটি মানুষও যাতে খাদ্যাভাবে কস্ট না পায়। সেজন্য তিনি চাষীদের হাকে-ডাকে সুখে-দুখে পাশে থাকবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বলেন, জলাবদ্ধতায় যেনো একটি জমিও পতিত হয়ে পড়ে না থাকে আর এর জন্য তিনি নিজ অর্থায়নসহ সরকারি অর্থায়নে নিরসন করবেন।
পরে তিনি রুদ্রপর দাদখালী ভাবানীপুর বড় ব্রীজের পাশে ভারতের ইছামতী নদীতে পতিত খালের উপর নিজের অর্থায়নে স্থাপিত বাঁধ এবং সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি নিস্কাশনের দৃশ্য পরিদর্শণ করেন। যার কয়েকশ গজ ওপাশে বাংলাদেশ-ভারতের কোলঘেঁষে বয়েগেছে ইছামতী নদী।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের উর্দ্ধতন মহলে আলোচনা করে তিনি আরও উন্নয়নমুখী স্থায়ী প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ করবেন। তখন শার্শা উপজেলায় আর কোন ডোবা পতিত জমি থাকবে না। প্রত্যেকটি জমিতে তিনটি ধানের ফসল ফলবে।
এসময় কথা হয়, রুদ্রপুরের বাসিন্দা ডাক্তার আব্দুল গফফার এর সাথে। তিনি বলেন ভারতের ইছামতি নদীর পানিসহ ১৫২টি বিলের পানি এসে রুদ্রপর, দাদখালী, ভবানীপুর, কায়বা, বাইকোলা, বাদামতলা কায়বা, পাচ কায়বা, গাজীর কায়বা, কলোনী কায়বা, গোগা বিলপাড়া, ভবানীপুর বিলপাড়া ও গোগা এলাকা তলিয়ে দিয়ে যায়। যে কারণে শুকনো মৌসুমেও এ বিলে পানি জমে থাকে। মাঝে মধ্যে একটু আধটু জমি জেগে শুকনো হলে সেখানে রোপিত হাজার হাজার বিঘা জমিতে ফসল ফললেও অমাবশ্যার অন্ধকারের ন্যায় এক বৃস্টিতেই পানিতেই রেখে আসতে হয় অজ¯্র চাষীর শরীরে ঘাম আর অর্থ মিশ্রিত সোনার ফসল। এবার শেখ আফিল উদ্দিন এমপির নিজস্ব অর্থায়ন ও প্রচেষ্টায় পানি নিষ্কাশনের যে উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে তাতে আশায় বুক বেঁে ছে এলাকার চাষীরা। মাঠভরা বোরো ধান ইতিমধ্যে রোপন করাও শুরু হয়েগেছে। তবে, এখানে কয়েকটি সুইচগেট নির্মাণ করতে পারলে ভারতীয় পানি আর দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবে না। তখন সুবিধা মতো পানি বের করে দেওয়া যাবে এবং ইচ্ছামতো পানি নিয়ে অল্প খরচে এলাকার সকল জমিতে চাষাবাদ হবে।
কথা হয় কায়বা ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার’ ষাটোর্ধ নূর মোহাম্মদসহ রিয়াজুল ইসলাম ও ফজলুর রহমানের সাথে। জানান, জমখানা গোমর বিল থেকে নকাঠি বিলের বটতলা পর্যন্ত খাল কেটে ছাড়িয়ে দিলে শার্শা উপজেলার ১৫২টি বিলের পানি সোনাই নদীতে নেমে যাবে। তখন আর কোথাও পানি বেঁধে থাকবে না। তবে, সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের নিজ অর্থায়নে এবার পানি নিস্কাশনসহ এলাকাবাসীর ধান রোপনে উৎসাহিত করায় তারা খুব খুশি হয়েছেন। বলেছেন, টানা ৪ বারের এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের প্রথম নির্বাচনী ওয়াদা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে। ভবিষ্যতে এ এলাকাবাসীর উৎপাদিত ধান থেকে নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে সবাই বাহিরে রপ্তানী করতে পারবে এবং এলাকাবাসী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
কৃষক সমাবেশে বিএডিসির ইঞ্জিনিয়ার সোহেল রানা জানান, শার্শার সাংসদ আলহাজ্ব শেখ আফিল উদ্দিনের নিজস্ব অর্থায়নে এ এলাকায় নতুন এক ইতিহাস রচিত হলো। তিনি তার মেধা ও অর্থ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টোর ডোবা জমিতে বোরো ধানের চাষ উপযোগী করলেন। আগামীতে তাঁর প্রচেষ্টায় কয়েকটি খাল খননসহ সুইচ গেইট নির্মাণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। যা বাস্তবায়িত করতে পারলে কৃষিতে শার্শা উপজেলা বিপ্লব ঘটাবে। তিনি জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। যা নিয়ে সংসদ সদস্য দিকনির্দেশনা প্রশাসনকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সেমোতাবেক কর্মপরিকল্পনা চলমান রয়েছে।
কায়বা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান হাসান ফিরোজ আহমেদ টিংকুর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কৃষক সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সোয়ারাব হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম সরদার, গোগা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, চেয়ারম্যান তবিবুর রহমান, শার্শা উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান, মোশারফ হোসেনসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সুধীবৃন্দ।
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত