Friday, May 10, 2024

চোখের জলে আহমেদ রুবেলের শেষ বিদায়

- Advertisement -

শীতের বিদায় লগ্নের,এমন রুক্ষ দিনে দেশের শিল্পাঙ্গনে আরও হাহাকার তৈরি করে চলে গেলেন গুণী এক অভিনেতা আহমেদ রুবেল। বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় নিজের অভিনীত সিনেমা পেয়ারার সুবাস’র বিশেষ প্রদর্শনী দেখতে এসে পরপারে চলে গেছেন তিনি। তার আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক, স্তব্ধ গোটা শোবিজ অঙ্গন।

আহমেদ রুবেলের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা প্লাজায় আনা হয় তার মরদেহ। ঢাকা থিয়েটারের উদ্যোগে আয়োজিত এই শ্রদ্ধা নিবেদন সকালে হাজির হন দেশের নাট্য ও সিনেমা অঙ্গনের অনেক শিল্পী-তারকা। তারা অভিনেতার প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, আবার শেয়ার করেছেন টুকরো টুকরো স্মৃতিও। অশ্রুজড়ানো কণ্ঠে সেসব বলে রুবেলের আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করেছেন।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন,অত্যন্ত অকালে চলে গেলো রুবেল। অভিনয় শিল্পে তার আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল। ঢাকা থিয়েটারের অনেকে অকালে চলে গেছেন, তার মধ্যে হুমায়ুন ফরীদি, সেলিম আল দীনও আছেন। আমরা সবাইকে স্মরণ করি। আমার নির্মিত ‘গেরিলা’ ছবিতে শহীদ আলতাফ মাহমুদের চরিত্রে অভিনয় করেছিল রুবেল। সেই স্মৃতিগুলো আজও মনে ভাসে। এত দারুণ অভিনয় করেছিলো যে, আলতাফ মাহমুদ যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিলেন।

mamun-nasirমামুনুর রশীদ ও নাসির উদ্দীন ইউসুফকিংবদন্তি অভিনেতা ও নাট্যজন মামুনুর রশীদ স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে, এটা এত বড় আকস্মিকতা। যে প্রসঙ্গে কথা বলতে একেবারেই ইচ্ছে করে না। আমাদের চেয়ে বয়সে কত ছোট, সুস্থ, এত পথ গাড়ি ড্রাইভ করে এলো। তারপর কী হলো! আমাদের ছেড়েই চলে গেলো। আমাদেরকে একটু সুযোগও দিলো না, সেবা করার। তার সঙ্গে বহু কাজ করেছি। অভিনয় করেছি একসঙ্গে, আমার লেখা দীর্ঘ ধারাবাহিকে কাজ করেছে। তার অভিনয় জীবন আরও দীর্ঘ হতে পারতো। আরও অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে পারতো। কিন্তু কিভাবে কী হয়ে গেলো। আমাদের কাছে রয়ে গেলো জীবন্ত রুবেলের বিনিময়ে শুধু তার স্মৃতি।

নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম বলেছেন,স্মৃতিচারণের ভাষা নেই আসলে। এত আকস্মিকভাবে চলে গেলো। রুবেল আমাদের সবার প্রিয় অভিনেতা। গতকাল (৭ ফেব্রুয়ারি) ‘পেয়ারার সুবাস’ দেখলাম, চমৎকার অভিনয় করেছে। কী এমন বয়স হয়েছে, আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। অথচ সে চলে গেলো। এটা ভাবতেও পারছি না আমি। যাই হোক রুবেল যেখানেই থাকুক, শান্তিতে থাকুক। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।

স্মৃতিচারণায় নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদও এসেছেন শ্রদ্ধা জানাতে। এরপর মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন,এমন একটা মুহূর্ত, কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। অসাধারণ একজন অভিনেতা, একজন ভালো মানুষ। আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে, কিন্তু অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া কঠিন। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তার সঙ্গে একটি কাজ করার, হুমায়ূন আহমেদের ‘চন্দ্রকথা’। তার সরলতা, অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা আমাকে মুগ্ধ করেছিল। আমি তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। অন্তর থেকে চাইবো, আহমেদ রুবেলের মতো অসময়ে কেউ যেন চলে না যায়।”

ferdousসংসদ সদস্য ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসঅভিনেতা ফারুক আহমেদের স্মৃতিচারণা ছিল এরকম, “১৯৮৬ সালে রুবেলের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমার যোগ দেওয়ার তিন বছর ও ঢাকা থিয়েটারে আসে। তার উচ্চতা, কণ্ঠস্বর প্রথম দিনই আমাকে মুগ্ধ করেছিল। রুবেলের কণ্ঠস্বর শুনে আমার রীতিমতো আফসোস হতো, এত সুন্দর কণ্ঠ কীভাবে হয়! একটা স্মৃতি শেয়ার করি, সিলেটে গিয়েছিলাম শুটিং করতে। আমি বাসে করে, সে তার গাড়িতে। শুটিং শেষে রুবেল বলে, ফারুক ভাই আপনি আমার সঙ্গে যাবেন। আমি যেতে চাচ্ছিলাম না। কিন্তু সে জোর করে আমাকে গাড়িতে নিয়ে বসালো। আমাকে পেছনের সিটে বসিয়ে একটি বালিশ দিয়ে বলল, ‘আপনি ঘুমান। আমি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলতে থাকি, যাতে সে না ঘুমায়।’ ভোরে যখন আজান দেয়, তখন দেখি আমি আমার বাসার সামনে। সেখানে নামিয়ে দিয়ে তবেই রুবেল তার বাসায় ফিরেছিল।”

‘আয়নাবাজি’ খ্যাত নির্মতা অমিতাভ রেজা অবশ্য একটু ভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। আহমেদ রুবেলের প্রয়াণের প্রসঙ্গে তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন ধুমপান ও নেশা ছাড়ার জন্য। এছাড়া তার নিঃসঙ্গ জীবনের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। অমিতাভ রেজা বলেন, ‘রুবেল ভাই অসাধারণ অভিনেতা, অসাধারণ ভয়েস আর্টিস্ট। কিন্তু রুবেল ভাই একজন নিঃসঙ্গ মানুষ ছিলেন। এক সপ্তাহ আগেও আমরা কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করিনি। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, সহযাত্রীদের পাশে থাকেন। এবং ধুমপান বন্ধ করুন, সব ধরনের নেশাদ্রব্য থেকে দূরে থাকুন। সাম্প্রতিক সময়ে যারাই মারা গেছেন, সকলেরই এটা প্রধানতম কারণ ছিল। এটা এখানে বলা হয়ত উচিত না। কিন্তু আমি চাই না, এরকম দুঃখ আমাদের আরও বাড়ুক।

amitabh rezaকথা বলছিলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরীঅভিনয়শিল্পী সংঘের নেতা-সদস্যদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সংগঠনটির সভাপতি ও অভিনেতা আহসান হাবিব নাসিম। তিনি বললেন, এটা সত্যি যে, আমরা একজন অসামান্য শিল্পীকে হারালাম। যার আরও অসাধারণ সব চরিত্রে কাজ করার কথা ছিল। যিনি সবসময় অভিনয় নিয়েই ছিলেন। এমন একজন মানুষ সবাইকে হঠাৎ স্তব্ধ করে দিয়ে চলে গেলেন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।’

অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বলেছেন, “রুবেল ভাই আমার সহশিল্পী ছিলেন। প্রচুর কাজ করেছি তার সঙ্গে। তিনি শুধু একজন গুণী অভিনেতাই নন, একজন ভাল মানুষ। শুটিং এলে বাড়তি কথা বলতেন না, শুধু নিজের চরিত্রে থাকতেন। তাকে বলতাম, নিজের যত্ন নিন। তিনি শুধু বলতেন, ‘হবে হবে’! কী হলো! সবাইকে বলবো, তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমিও তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।”

rubel in 4শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিল অভিনয়শিল্পী সংঘ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল বলেন, “সবসময় দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতেন, ‘পেয়ারার সুবাস’ কবে আসছে? অথচ কাল (৯ ফেব্রুয়ারি) ছবিটা আসছে, তিনি নেই। সম্প্রতি তিনি আমাদের অফিসে এসেও একটি প্রেসমিটে সবাইকে ছবিটা দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। তার প্রয়াণে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি একজন গুণী মানুষকে হারালো।”

ছবিটির আরেক প্রযোজক রেদওয়ান রনি বলেছেন, “রুবেল ভাইয়ের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক আগের। সহকারী পরিচালক হিসেবে পথচলার শুরুর দিকেই তাকে সেটে পেয়েছি। আমার নির্মিত ধারাবাহিক ‘এফএনএফ’-এ তাকে পেয়েছি। তিনি এরকম একজন অভিনেতা, যাকে অদ্ভুত সব চরিত্রে মানিয়ে যায়। তার চেহারা, কণ্ঠস্বর; এটা সচরাচর হয় না। আমি কাল (৭ ফেব্রুয়ারি) একটা বিষয় ভাবছিলাম, আর দুইটা ঘণ্টা পরে কি হতে পারতো না! তার ছবিটা সবাই দেখছে, দর্শকের উচ্ছ্বাসটা তিনি দেখে যেতেন। আমাদের ছবিটা রুবেল ভাইকে উৎসর্গ করা হয়েছে।”

ahmed rubelপ্রয়াত আহমেদ রুবেলজানা গেছে, শিল্পকলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর ১টার দিকে আহমেদ রুবেলের মরদেহ নেওয়া হবে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে। সেখানেও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এবং অনুষ্ঠিত হবে প্রথম জানাজা। এরপর অভিনেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গাজীপুরে, স্থায়ী ঠিকানায়। সেখানেই পারিবারিক কবরস্থানে তাকে আসর নামাজের পর দাফন করা হবে।

রাতদিন-সংবাদ:-

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত