Friday, May 3, 2024

গদখালিতে ফুল উৎসব শুরু, ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য

যশোর প্রতিনিধি- যশোরে ফুলের রঙ লেগেছে ‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের গদখালির ফুলচাষীদের মনে। ফুলের এ রাজধানীতে শুরু হয়েছে চারদিনব্যাপী ফুল উৎসব। আর তাইতো ফুলের হাসি ফুলচাষীদের চোখে মুখে।
গত বুধবার (৩১ জানুয়ারী) বিকেলে গদখালির পানিসারা ফুল মোড়ে ফিতা কেটে, বেলুন উড়িয়ে এ ফুল উৎসবের উদ্বোধন করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার খুলনা বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত, স্থানীয় সরকার যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান, নাভারণ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নিশাত আল নাহিয়ান, ঝিকরগাছা অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন ভুইঁয়া, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল।
গদখালিতে ফুল উৎসব শুরু, ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য অনুষ্ঠান শেষে জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, গদখালি পানিসারার মাটি অনেক মূল্যবান। এ মাটিতে যা ফলে তা অন্য কোথাও ফলে না। এখানে আমরা গত বছরের ন্যায় এবছর দ্বিতিয়বারের মতো ফুল উৎসবের আয়োজন করেছি। গতবার আমরা তিনদিনের মেলা করেছিলাম এবার চারদিন করেছি, আগামীতে সাতদিন বা তার বেশি দিন মেলা করার চেষ্টা করবো। আমরা এই ফুল সেক্টরকে সারাদেশ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে চাই এবং এখানে যাতে একটি পর্যটনের পরিবেশ তৈরি করা যায় সেজন্য জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।
বৈচিত্র্যময় এই ফুলের রাজ্যকে দেশ এবং বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। গদখালির গোটা এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন দোল খাচ্ছে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকাসহ প্রায় ১১ ধরণের ফুল। বাতাসে ফুটন্ত ফুলের সুবাস ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে।
ফুল উৎসব ঘিরে ভালো বেচাকেনা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করছে এ অঞ্চলের ফুলচাষীরা। মেলা প্রাঙ্গণে প্রত্যেক চাষিই এক বা একাধিক ফুলের স্টল সাজিয়েছেন। কৃষি বিভাগের দাবি ফুল উৎসবকে কেন্দ্র করে গদখালি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, সারাদেশ এবং বিশ্বের কাছে এই ফুল সেক্টরকে তুলে ধরতে আমাদের এই ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। কৃষকরা যাতে ভালো দাম পায় এবং এই ফুল কিভাবে বিদেশে রপ্তানি করা যে সে বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সারাবছরের মধ্যে এই শীত মৌসুমকে ঘিরে বড় ধরনের বাজার ধরার চেষ্টা করে কৃষকেরা। তারই ধারাবাহিকতায় ফুল উৎসবকে ঘিরে এই গদখালি থেকে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হবে বলে আমরা ধারণা করছি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ৬৩০ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে গোলাপের চাষ সবথেকে বেশি হয়েছে। প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ হেক্টর জমিতে নানা রঙের গোলাপের চাষ হয়েছে। সারাদেশের মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ এই যশোরের ফুল সেক্টর থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
গদখালির পানিসারা গ্রামের ফুলচাষী ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘ফুল উৎসব মানে আমাদের উৎসব এবং গোটা যশোরবাসীর উৎসব। এই উৎসবকে ঘিরে আমরা ভালো বেচাকেনার আশা করছি। আজ থেকে মেলায় ফুল তুলে বিক্রির পালা।’তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি থাকে, সেটি হলো প্লাস্টিকের ফুলের ব্যবহার এবং আমদানি বন্ধ করা। এবছরও আমাদের একই দাবি রয়েছে।’
ফুলচাষী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘মেলায় আমাদের দোকান রয়েছে। ভোরে ফুল তুলে দোকান সাজিয়েছি। অনেক দূর থেকে দর্শনার্থীরা আসছ, ফুল কিনছে, ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। গতবছরও আমাদের ভালো বেচাকেনা হয়েছিল।’
যশোর শহর থেকে পরিবার নিয়ে ফুলের মেলায় এসেছেন মামুন হোসেন। তিনি বলেন, গতবারও ফুল উৎসবে এসেছিলাম, এবছরও এসেছি। এই ফুল উৎসব যশোরবাসীর জন্য আরেকটি উৎসবে পরিনত হয়েছে। সবাই আসছে ঘুরেফিরে আনন্দ করছে।
নিলিমা খাতুন নামে শার্শার এক শিক্ষিকা বলেন, আমি আমার পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ফুল কিনেছি। কাঁচা ফুলের সৌরভে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠেছে।
গদখালিতে ফুল উৎসব শুরু, ৪০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য এদিকে ফুল উৎসব ঘিরে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, ‘ফুল উৎসব ঘিরে আমাদের সবরকমের প্রস্তুতি নিয়েছি। আজ থেকে ফুল উৎসব শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা সহ নানা ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফুল উৎসবকে ঘিরে দূরদূরান্তের দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে এবং ফুলচাষীদের বেচাকেনাও ভালো হবে। যশোরের ঐতিহ্য এবং এই ফুলের রাজধানীকে সবার সামনে এ ফুল উৎসবের মাধ্যমে তুলে ধরা আমাদের মূল লক্ষ্য।’এবার ফুল উৎসবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬টি স্টল দেওয়া হয়েছে।
- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত