Friday, April 26, 2024

জোয়ারের পানির চাপে দিশেহারা মোরেলগঞ্জের মানুষ

- Advertisement -

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ সপ্তাহ জুড়ে অব্যাহত বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে মোরেলগঞ্জের পৌর শহর সহ উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। দিনে রাতে অব্যাহত পানির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এ এলাকার মানুষ। জোয়ারের তোরে ভেঙ্গে গেছে কাঁচা ঘর-বাড়ি ও কাঁচা-পাকা রাস্তা। পানগুছি নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় যানবাহন ও মানুষ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সাময়িক বন্ধ রাখা হয় বাজার-হাসপাতাল ঘাট খেয়া পারাপার। বাজার সহ সমস্ত উপজেলা তলিয়ে স্থবির হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারি-বেসরকারি দাপ্তরিক ও শিক্ষা কার্যক্রম। মানুষের ঘেরে পানি ঢুকে একাকার হয়ে গেছে সব জলাশয়।

রবিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের কাপুডিয়াপট্টি সড়ক, কাঁচা বাজার, কেজি স্কুল সড়ক, ফেরিঘাট সংলগ্ন কালাচাঁদ মাজার এলাকা, লঞ্চঘাট, এসএম কলেজ এলাকা, সানকিভাঙ্গা, সুতালরী, বারইখালী, বদনিভাঙ্গা গ্রাম বহরবুনিয়া, কুঠিবাড়ি, গাবতলা, কাঁঠালতলা সহ ৩০ টিরও বেশি গ্রাম স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে। দুপুরের রান্না হয়নি না বারইখালী ফেরিঘাট এলাকা ও খাউলিয়া ইউনিয়নের নিশানবাড়ীয়া গ্র্রমে। পানিতে তলিয়ে গেছে ওইসব এলাকার রান্নাঘর। মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের অনেক পরিবার তাদের ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির জানান, গাবতলা গ্রামটি নদীর তীরবর্তী হওয়ায় পানির প্র্রাহটা সেখানে বেশি। ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার নিয়মিত পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করে আসছে। দিনে ও রাতে দু’বার পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ওই গ্রামের কোন বাড়িতে রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই। বাড়ি-ঘর সব তলিয়ে গেছে।
অপরদিকে খাউলিয়া ইউনিয়নে দেখা গেছে, সন্ন্যাসী বাজার-কেয়ার বাজার পাকা রাস্তাটির ২০ ফুট পানির চাপে ভেঙ্গে সেখানে একটি খাল হয়ে গেছে। খাউলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইদুর রহমান জানান, তার ইউনিয়নে ছয়টি রাস্তা পানির তোড়ে ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

নদীর তীরবর্তী বহরবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান টিএম রিপন জানান, তার ইউনিয়নের পশ্চিম বহরবুনিয়া, উত্তর ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী গ্রামের দুই শতাধিক মৎস্য ঘের পানির নিচে। নতুন করে ভয়ঙ্কর নদী ভাঙ্ন দেখো দিয়েছে। এর ফলে ফুলহাতা বাজার জামে মসজিদ সহ বেশকিছু ঘরবাড়ি হুমকির মধ্যে রয়েছে।

জিউধরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদশা জানান, তার ইউনিয়নে পালেরখন্ড, কাকড়াতলী, শনিরজোড়, সোনাতলা, চন্দনতলা গ্রামে ৫০টার মত ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বেশ কিছু কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে।
হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান জানান, তার ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা, পাঠামারার পাকা রাস্তা ও শতাধিক মাছের ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির চাপে এসব ঘেরের বেড়ি ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করে বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন শতাধিক ঘের ব্যবসায়ী। বদনীভাঙ্গার বিএস রতমতিয়া দাখিল মাদ্রাসা হয়ে সেকেন্দার আলীর দোকান পর্যস্ত এক কিলোমিটার ইটের সোলিং রাস্তা ও মুসলিম ইটভাটা হয়ে পাঠামারা হাজিগঞ্জের দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটিও ভেঙ্গে পড়েছে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় জানান, এ পর্যন্ত বিভিন্ন ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সংশ্নিট এলাকায় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাঘী জানান, আমন ও উপশী বীজতলাগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দু-একদিনে আবহাওয়ার উন্নতি না হলে বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।

উপজেলা প্রকৌশলী জানান, বেশকিছু রাস্তা ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। সন্ন্যাসী টু কেয়ার রাস্তার কাজ শুরু হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট, কৃষি ও মৎস্য ঘেরগুলোর খোঁজখবর নিয়ে একটা তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আমিরুল আলম মিলন জানান, খাউলিয়া ইউনিয়নের কুমারখালী হয়ে বহরবুনীয়া ইউনিয়নের খষিয়াখালী পর্যন্ত নদীন্ত্রটেকশন ওয়াল করার প্রস্তাবটি একনেক সভায় পাস হয়েছে। খুব শীঘ্রউ কাজ শুরু হবে। নদী প্রটকশন ওয়াল হলে এভাবে আর সাধারণ মানুষকে পানিতে ডুবতে হবেনা। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা দূর হবে ইনশাআল্লাহ।
ছবির ক্যাপশনঃ রবিবার জোয়ারে মোরেলগঞ্জ বাজার ও স্টীমার ঘাট এলাকা এভাবেই ডুবে যায়।

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত