Friday, April 26, 2024

ঝিকরগাছায় সত্যবাদী যুধিষ্ঠিরদের কাজে ঘাপলার তেলেসমাতি কান্ড

- Advertisement -

 

আফজাল হোসেন চাঁদ, ঝিকরগাছা :

যশোরের ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির খুঁজতে গিয়ে টিকিট নিয়ে তেলেসমাতির অনুসন্ধানে সর্বপ্রথমেই উঠে আসছে ইমদাদুল এর নাম। তার প্রকৃত নাম হলো মোঃ ইমদাদুল হক মিলন। খোজ নিয়ে তার প্রকৃত ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। কখনো জানা যায় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় কখনওবা শার্শা উপজেলার বাগআচড়া তার বাড়ি। সে ছোট বেলায় ঝিকরগাছাতে আত্মীয়ের বাড়ি কৃষ্ণনগরের ধোপাপাড়ায় চলে আসে এবং এখানে এসে তার নিকটতম আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে বড় হয়। পরবর্তীতে স্টেশনের পাশে একটা দর্জির দোকানে কাজ করতো। বর্তমানে তিনি ঝিকরগাছা স্টেশনে খাতা কলম বিহীন দায়িত্বপ্রাপ্ত বড় কর্মকর্তা। তাকে খুঁজতে রেলওয়ে স্টেশনে গেলে দেখা হয় ইমদাদুলের সাথে। তার নিকট জানতে চাওয়া হয় তিনি কে, তিনি রেল স্টেশনে কি করছে এবং তিনি রেল স্টেশনের সরকারি কোন কর্মকর্তা কি না জানতে চাওয়া হলে, সে জানায় টিকেট বুকিং সহকারী মেহেদী হাসান জেমস তাকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়োগ দিয়েছে। যারজন্য সে রেলওয়ে স্টেশন তদারকির দায়িত্ব পালন করছে। তিনি সরকারের কোনো কর্মচারী নন, নেই কোনো নিয়োগপত্র, রেলওয়ে দপ্তরের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই, পেশায় ছিলেন দর্জি অথচ এখন তার হাতে রেলওয়ে স্টেশনের চাবি থাকে। ইমদাদুলের নিকট থেকে শুনতে অবাক লাগলো তার বেতন দেয় টিকিট বুকিং সহকারী নিজে। টিকিট বুকিং সহকারী মেহেদী হাসান জেমস কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পরই তার কপাল খুলে গেছে। এখন তার ভাতবাড়ি ঝিকরগাছা রেলওয়ে স্টেশনে বললে ভূল হবে না। সে রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তার কাছে রেলওয়ে স্টেশনের সকল চাবিকাঠি থাকে। বেনাপোল এক্সপ্রেসের টিকেট নিয়ে তেলেসমাতি কান্ডে কালোবাজারি সিন্ডিকেট সাথে জড়িত রয়েছে স্টেশনের নিয়োগকর্তা, কুলি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী সহ আরও কয়েকজন। এতেও ইমদাদুল ক্ষ্যান্ত হয়নি। রেলওয়ে স্টেশনের কমন রুম দখল করে অবৈধ ভাবে পাখি ও ফুলের ব্যবসা করতেও দেখা গেছে। ইমদাদুলের বিরুদ্ধে কিছু বললেই নিয়োগকর্তা এবং তার সহযোগীরা সেই ব্যক্তির ওপর হামলা, শারীরিক নির্যাতন চালায়। কিছু দিন পূর্বে রেলওয়ে স্টেশনের পাশ্ববর্তী আরোশ হোমিও হল’র চিকিৎসক আলাল উদ্দিনের উপর হামলা চালায় এবং চেম্বার ভাংচুর করে, সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রিপনের হোটেলের মালিক-কর্মচারীকেও মারধর করে এই ইমদাদুল হক মিলন। ঝিকরগাছা উপজেলা ও পৌরসভার সর্ব স্তরের সচেতন জনগণ ইমদাদুল এবং তার সাথে জড়িত রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় এলাকার রেল যাত্রীদের চরম ক্ষতিগ্রহস্ত হয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উপর আস্থা উঠে যাবে।
ইমদাদুল এর নিয়োগকর্তা রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট বুকিং সহকারী মেহেদি হাসান জেমস। ঝিকরগাছার সরকারি শহীদ মশিযুর রহমান ডিগ্রী কলেজের স্বনামধন্য পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক মরহুম গোলাম নবীর ছেলে। আদি বাড়ি ঝিনাইদহ জেলায়। বর্তমানে স্টেশনের পাশেই শেখ আবদুল মালেকের বাসায় ভাড়া থাকেন। ঠিকমতো তাকে অফিসে পাওয়া যায়না। নিজের খেয়াল খুশি মত অফিসে আসা যাওয়া করেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। ৮মে সকাল ১১টায় এই প্রতিবেদনের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে যখন সংবাদকর্মীরা রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হয়, তখন বুকিং সহকারীকে তার কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে স্টেশন মাস্টারের নিকট জানতে চাইলে, তিনি জানান মেহেদি হাসান অফিসে আসবেন কি, আসবেন না সেটা তিনি জানেন না।
ঝিকরগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান বাবু জানান, রেলওয়ে স্টেশনটি তার ওয়ার্ড লাগোয়া এবং এই রেলওয়ে স্টেশনে ইমদাদুলের কাছে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিলেই টিকিট পাওয়া যায় বলে আমি শুনেছি।
ইমদাদুলের বিষয়ে মেহেদি হাসান জেমসের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, স্টেশনে লোকবল কম। স্টেশনে তো রাতে একজনকে থাকতে হবে। তাহলে কি করা যাবে, তখন তৎকালীন স্টাফদের মাধমে ইমদাদুলকে রাখা হয়। টিকিট কালোবাজারীর সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এটার বিষয়ে জানি না। যদি সঠিক কোন প্রমাণ পায় তাহলে ওকে বের করে দেবো। ইমদাদুলের নিয়োগের বিষয়ে ও কত টাকা পায় আমি সেটা জানি না। তবে ইমদাদুলকে নিজে বেতন দেয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন। যদিও ইমদাদুল এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিডিওতে ইমদাদুল নিজের মুখেই স্বীকার করেন জেমসই তাকে নিয়োগ দিয়েছে এবং তার বেতনও তিনিই দেন।
ঘটনার বিষয়ের জট খুলতে রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাঈমুর রহমানের সাথে এক টেবিলে বসে খোশগল্পে মত্ত অবস্থাতে ইমদাদুল সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ইমদাদুল সরকারের কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত বেতনভুক্ত কর্মচারী না, রেলওয়ে স্টেশনের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি স্বিকার করেন। কিন্তু বাহিরের লোকদিয়ে কিভাবে ক্রমাগতই রেলওয়ে স্টেশন পরিচালনা করা হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে যান। টিকিট কালোবাজারির সাথে ইমদাদুলের সম্পৃক্ততার কথা বললে তিনি জানান, প্রমাণ দেন তাহলে আমরা তাকে এখান থেকে বাদ দিয়ে দেবো। এছাড়াও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার নাঈমুর রহমানের নিকট রেলওয়ে স্টেশনের সামান্য বিষয়ের উপর তথ্য অধিকার আইনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য আবেদন করা হলেও তিনি উক্ত আবেদনপত্রটি তিনি গ্রহণ করেননি।

রাতদিন সংবাদ

- Advertisement -

আরো পড়ুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত