যশোরে ২০১১-২০১২ মৌসুমে প্রমিলা ক্রিকেটের জাগরণ তৈরি হয়েছিল। প্রমিলা ক্রিকেটারদের প্রতিনিয়ত অনুশীলন ছিল চোখেপড়ার মতো। অনেকেই জেলার গন্ডি পেরিয়ে বিভাগ, ঢাকা লিগসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পেয়েছেন। প্রতিনিধিত্ব করেছেন বাংলাদেশ এ অনূর্ধ্ব-১৪ দলে। কিন্তু সেই জেলায় এখন আর তৈরি হচ্ছে না প্রমিলা ক্রিকেটার। যারা আছেন তাদের জন্যে নেই অনুশীলনও। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, এমএসটিপি গালর্স স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ফরিদা খাতুন ও ক্রীড়া শিক্ষক চাঁদ সুলতানার কল্যাণেই ২০০৭ সালে যশোরে প্রমিলা ক্রিকেটের বীজ রোপিত হয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েরা প্রথম ক্রিকেট খেলা শুরু করে। ২০১০ সালে জাতীয় স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মেয়েদের ক্রিকেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে মেয়েদের ক্রিকেট ক্রমান্বয়ে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে বিভিন্ন জেলায়। ক্রিকেটে মেয়েদের আগ্রহ সৃষ্টির ফলে ক্লেমন আছিয়া ক্রিকেট একাডেমি এগিয়ে আসে। তারা ২০১০ সালেই মেয়েদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। একাডেমির প্রশিক্ষক এহসানুল হক সুমন ও আসাদুল্লাহ খান বিপ্লবের তত্ত্বাবধানে তারা দ্রুত ক্রিকেটের কলাকৌশল রপ্ত করে নিজ আলোয় আলোকিত হতে শুরু করে। তৈরি হয় একাধিক প্রমিলা ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, তুলিকা, ঝিলিক, সুলতানা খাতুন, প্রয়াত সুরাইয়া জান্নাতী তিন্নি, সানজিদা আক্তার মেঘলা, জেবা, রচনা প্রমুখ। ২০১৮ সালে টি-২০ বিশ্বকাপ দলের স্ট্যান্ডবাই তালিকায় ছিলেন যশোর রাজারহাটের সুলতানা খাতুন। শ্রীলংকা সফর করেছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে শহরের খড়কি শাহ আব্দুল করিম রোডের রুবাইয়া হায়দার ঝিলিক। অনূর্ধ্ব-১৪ দলের হয়ে পাকিস্তান সফর করেছেন চাঁচড়া ডালমিল এলাকার সানজিদা আক্তার মেঘলা। এছাড়া, বিভাগীয় দলে খেলেছেন প্রয়াত সুরাইয়া জান্নাতি তিন্নি, তুলিকা, জেবাসহ কয়েকজন। ২০১৭ সালে ক্লেমন আছিয়া ক্রিকেট একাডেমি মেয়েদের ক্রিকেট থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এর মাধ্যমে মেয়েদের ক্রিকেট দূরে সরে যেতে থাকে। বর্তমানে মেয়েদের ক্রিকেটের অনুশীলন নেই। এ জেলায় হাতেগোনা যে ক’জন মেয়ে ক্রিকেটে টিকে রয়েছেন তারা ঢাকা কেন্দ্রিক। সেখানেই তারা বিভিন্ন একাডেমিতে অনুশীলন করে থাকেন। এছাড়া দু’জন রয়েছেন বিকেএসপিতে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ দলের ক্রিকেটার সানজিদা আক্তার মেঘলা জানান, জেলা ক্রিকেট বন্ধ করায় মেয়েরা ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে ক্রিকেটের জন্যে যতটা সুবিধা রয়েছে মেয়েদের ক্ষেত্রে তা নেই। অনেক মেয়ে ক্রিকেটে আসতে আগ্রহী। দরকার আগ্রহীদের উৎসাহ দিয়ে মাঠে আনা। কিন্তু সেই কাজটি কেউ করছেন না। জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট পরিষদ যদি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের নিয়ে টুর্নামেন্ট এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মেয়েদের স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু করে তাহলে মেয়েরা আরও বেশি ক্রিকেটে আগ্রহী হয়ে উঠবে। ক্লেমন আছিয়া ক্রিকেট একাডেমির প্রশিক্ষক এহসানুল হক সুমন বলেন, মেয়েদের ক্রিকেটে সম্ভাবনা রয়েছে ব্যাপক। পাশাপাশি রয়েছে নানা সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও। যা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সেই কারণে মেয়েদের প্রশিক্ষণ থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে হয়েছে। তবে, পরিকল্পনা আছে মেয়ে শিশু যারা তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত তাদের নিয়ে কাজ করার।জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্রিকেট পরিষদের সম্পাদক সোহেল মাসুদ হাসান টিটো জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে সমন্বয় করে আমরা মেয়েদের ক্রিকেট আবারও জাগ্রত করার পরিকল্পনা করছি।দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের কথাও জানান তিনি। বলেন, ইতিপূর্বে যারা মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছেন তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করবো।
রাতদিন নিউজঃ







