Saturday, December 6, 2025

শনিবার বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশ , সারাদেশের দৃষ্টি খুলনায় 

খুলনা প্রতিনিধিঃ-চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে দৃষ্টি এখন সবার। প্রতিদিন নিত্য-নতুন মোড় নিচ্ছে ঘটনা-দুর্ঘটনার। ফলে আঞ্চলিকতা ছাড়িয়ে সারাদেশের দৃষ্টি এখন খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে। বিভাগের ১০ জেলার ৫৯টি উপজেলা থেকে যোগ দেবেন নেতাকর্মীরা। আগামীকাল শনিবার নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে অনুষ্ঠিতব্য এ গণসমাবেশ সফলে দিন-রাত প্রচার-প্রচারণা, প্রস্তুতিসভা, লিফলেট বিতরণ ও প্রচার মিছিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। ফলে দীর্ঘদিন পর চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে দলটির তৃণমূলে। এর মধ্যে, গতকাল দুপুরে অভিমান ভুলে বিএনপি’র কর্মসূচিতে ফিরেছেন সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার অনুসারীরা।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকে খুলনা অঞ্চলের অন্তত ১৮টি রুটের আন্তঃজেলা পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। চলবে শনিবার পর্যন্ত। আবার, নেতা-কর্মীদের বাড়ি-বাড়ি তল্লাশী, গণআটক, প্রচারে বাধা ও মাইক ভাঙচুরসহ গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে নানান অভিযোগ তুলছে বিএনপি।

সূত্রমতে, আগামীকাল শনিবার দুপুর ২টায় নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে অনুষ্ঠিতব্য খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনার সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দিক-নির্দেশনামূলক বক্তৃতা করবেন।

এদিকে, প্রায় ১১ মাস পর দলের কর্মসূচিতে যোগ দিলেন খুলনা মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ পাঁচ থানা ও নগর বিএনপি’র সাবেক নেতারা। বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে শনিবার বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেন তারা। পরে সমাবেশ সফল করতে নগরীতে লিফলেট বিতরণ করেন মঞ্জু-মনি ও সাবেক নেতারা। দলের কর্মসূচিতে ফেরায় কর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।

অন্যদিকে, কৌতুহলও বেড়েছে দলটির ভিতর ও বাইরে; শনিবারের গণসমাবেশে কোথায় বসবেন বিএনপি’র সাবেক প্রতাপশালী এই নেতা! ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর খুলনা মহানগর বিএনপি’র ৩ সদস্যের আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা হলে বাদ পড়েন মঞ্জু ও তাঁর অনুসারীরা।

চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের পর এবার বিএনপি’র গণসমাবেশে জনসমাগম ঠেকাতে আরেক ধাপ এগিয়ে খুলনা। খুলনায় বাস চলাচল বন্ধের কৌশল নিয়েছে ‘খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি’। গত বুধবার দুপুরে সংগঠনটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলেছে, ‘সড়ক ও মহাসড়কে অবৈধভাবে নছিমন, করিমন, মাহেন্দ্র, ইজিবাইক ও বিআরটিসি’র গাড়ি চলাচল করছে। আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রশাসন যদি সড়কে ওই অবৈধ যান চলাচল ও কাউন্টার বন্ধ না করে, তাহলে পরবর্তী দুই দিন ২১ ও ২২ অক্টোবর মালিক সমিতির সব রুটের গাড়ি বন্ধ থাকবে।’জানা গেছে, ২২ অক্টোবরের সমাবেশ উপলক্ষে ১৮টি উপ-কমিটি করে ব্যাপক জনসমগমের প্রস্তুতি নিয়েছে। এ লক্ষ্যে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও উপজেলায় প্রস্তুতি সভা, প্রচার-প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ ও প্রচার মিছিল হয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে জেলা ও উপজেলায় কয়েক লাখ প্রচারপত্র বিলি করা হয়। সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ও সমর্থক অংশ নেবেন বলে আশা করছেন দলের নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশ সমন্বয় করছেন। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশ শতভাগ শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হবে। আর পরিবহন বন্ধ করে শহীদ জিয়ার সৈনিকদের দমিয়ে রাখা যায় না, যাবে না। শনিবারের গণসমাবেশ হবে, গণমানুষের সমাবেশ; পরিণত হবে বিশাল জনসমুদ্রে।

খুলনা জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, “খুলনার নয়টি উপজেলা, দু’টি পৌরসভায় গণসমাবেশ সফলের প্রস্তুতি সভা ও লিফলেট বিতরণ করতে যেয়ে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। আওয়ামী সরকার পতন আন্দোলনের একদফার দাবিতে রাজপথে নামতে প্রস্তুত সবাই। শুধু দলীয় নেতা-কর্মীরা নয়, সাধারণ মানুষ মুখিয়ে আছে খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নেবার অপেক্ষায়।”

মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেন, “জ্বালানী তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ জনদাবি আদায়ের আন্দোলনে আমাদের পাঁচজন নেতা-কর্মী শহিদ হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রহসনের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্রের মূল্যহ্রাস, বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ে এ ধরনের গণসমাবেশ খুলনাতে এটাই প্রথম। শনিবার খুলনার গণসমাবেশ, এদেশের আপামর গণমানুষের সমাবেশ। বিভাগীয় এ গণসমাবেশ সফলে খুলনাবাসীর একান্ত সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন তিনি।”

প্রসঙ্গত, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পাঁচজন নিহতের প্রতিবাদে, সারাদেশে হামলা-মামলার প্রতিবাদে এবং দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবিতে প্রতিটি বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর