সবুর আল আমীন, কপিলমুনি(খুলনা): কপিলমুনিসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে বাঁশ ও বেতশিল্প বিলুপ্ত প্রায়। পরিবেশ বিপর্যয় তথা উপকুলীয় এলাকায় ঘুর্ণিঝড় আইলা, সিডর, নার্গিস ইত্যাদির কারণে এলাকাসমুহ প্লাবিত হওয়ায় লোনা পানির প্রভাব।
বাঁশ ও বেত চাষে প্রয়োজনীয় পুঁজি ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারনে বিলুপ্ত হতে বসেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। অন্যদিকে প্লাষ্টিকের বাজার জমজমাট হওয়ায় এ পেশায় নিয়োজিতরা বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পন্য ও অন্যান্য দ্রব্যের সাথে পাল্লা দিতে না পারায় তাদের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে।
যার কারনে গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব শিল্প। তার সাথে অত্র এলাকার বাঁশ শিল্পের কারিগরদের ভাগ্যে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। অনেকে তাদের পূর্ব পুরুষের পেশাকে আঁকড়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এক সময় কপিলমুনি এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কদর ছিল খুব বেশী। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তা আর বিশেষ চোখে পড়ে না। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাঁশ ও বেত শিল্পীরা তাদের বাপ দাদার পৈত্রিক পেশাকে ছেড়ে অন্যান্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
হাতে গুনা কয়েকজন শিল্পের কারিগররা নিরুপায় হয়ে ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রাখার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একসময় বাঁশের তৈরি কুলা, খাচা, চালনী, চাটাই, ডোল, ডালা, খাদি, ঝুড়ি, পলো, চেয়ার, পাখা, টোপা প্রভৃতি বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো। এলাকার গ্রামগুলোতে এসব শিল্পের চাহিদা ছিল অনেক বেশি, যার চাহিদা পূরণেও সক্ষম ছিল এ শিল্পে নিয়োজিতরা।
বিগত কয়েক বছর ধরে এ শিল্পের অবস্থা অত্যান্ত নাজুক। এ পেশায় দক্ষ শিল্পীদের পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম দুরবস্থা। যার ফলে কুটির শিল্পের উপর নির্ভরশীল পরিবারে চলছে দুর্দিন। বেকার হয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
অন্যদিকে আগের তুলনায় পরিমাণ মত বাঁশের জন্ম বা উৎপাদন সঠিকভাবে হচ্ছে না। কালের পরিবর্তে যে বাঁশ ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হত বর্তমানে সেই বাঁশের মূল্য ২৫০/৩০০ টাকা। অথচ বাঁশজাত পন্যের দাম সে পরিমাণে বাড়েনি। অন্যদিকে বাঁশের ব্যাপক চাহিদা থাকার কারণে বংশবৃদ্ধির আগেই তা উজাড় করে কাটা হচ্ছে এসব বাঁশ।
আশির দশকে গ্রামের বেশীর ভাগ ঘরবাড়িই বাাঁশের সাহায্য তৈরি করা হতো। একটি ঘর তৈরি করতে বাঁশ লাগত প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি। সে সময় প্রত্যেকটি গ্রামে বড়বড় বাঁশঝাড় ও বেত বাগান দেখা যেত। কিন্তু এখন তা আর চোখে পড়ে না। কারন, বাঁশঝাড় ও বেতবাগান পরিস্কার করে সেখানে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন বাড়ি। অপর দিকে শহরে গড়ে উঠেছে বড় বড় পাকা দালান ।







