Friday, December 5, 2025

যশোরের বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক শামস-উল-হুদার ৩৪-তম মৃত্যুবার্ষিকী কাল

আবিদ হাসান : যশোর ক্রীড়াঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র শামস্ উল হুদা। যার নামে আমাদের যশোরের স্টেডিয়ামের নামকরণ। শামস্ উল হুদা যশোর ক্রীড়াঙ্গনে একটি নাম, একটি প্রতিষ্ঠান। ফুটবল-ক্রিকেটার তৈরি, টিম গঠন আর অবকাঠামো নির্মাণ সব ক্ষেত্রেই তার কর্মের ছাপ জ্বলজ্বল করছে। ক্রীড়াঙ্গনে দীর্ঘ ৫৬ বছর সেবা দেয়া এই মানুষটির নামে ‘যশোর শামস্ উল হুদা স্টেডিয়াম’ নামকরন করে তাই গর্বিত হয়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। একই সঙ্গে ‘শামস্ উল হুদা গোল্ডকাপ ফুটবল’ টুর্নামেন্ট ও ‘শামস্ উল হুদা ফুটবল একাডেমী’ তারই স্বীকৃতির সাক্ষর বহন করে।
যশোরের বাঘারপাড়ার জহুরপুর গ্রামে শেখ আবুল বারী ও আশরাফুননেছা দম্পত্তির কোলে ১৯১৮ সালে জন্মেছিলেন শামস্ উল হুদা। দু’ভাই পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। আর তিনি পাঁচ ছেলে ও ছয় কন্যার জনক। যশোর সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন থেকে তার প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু। তবে পরে ভর্তি হন জিলা স্কুলে। প্রাথমিকের গন্ডি শেষ করে তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ হাটপুল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং যশোর এমএম কলেজে আইএ ভর্তি হন। এখান থেকে আইএ এবং বিএ পাস করে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি পাকিস্তান মুসলিম ইন্সুরেন্স’র খুলনা বিভাগীয় ম্যানেজার ছিলেন।
শামস্ উল হুদা দলে গোল রক্ষক হিসেবে খেলতেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ১৯৩০ সালে সম্মিলনী ইনস্টিটিউটের হয়ে ফুটবল খেলে দক্ষতার পরিচয় দেন। আর এই নৈপূন্যতার কারণে তৎকালীন ‘চিত্ররঞ্জন ক্লাব’ তাকে ক্লাবে খেলার সুযোগ দেয়। পরবর্তীতে তিনি জেলা দল ও যশোর ফুটবল লিগে টাউন ক্লাব, যতীন্দ্র মোহন ক্লাব ও ইয়ং মুসলিম ক্লাবে নৈপূন্যতার সঙ্গে খেলেন। ১৯৩৯ সালে জিলা স্কুলে অধ্যয়নকালে আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতায় অল বেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য ছিলেন। শামস উল হুদা খেলোয়াড় অপেক্ষা ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বেশি সফলতা পান। তিনি ‘ইয়ং মুসলিম ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করে ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে তার সহযোগিতায় গঠিত হয় ‘যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থা’। এর দুই বছর পর থেকে আমৃত্যু তিনি সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যশোর ক্রীড়াঙ্গনকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। তাই তো টিনের বেড়া ঘেরা যশোরের একমাত্র স্টেডিয়াম আজকে দেশের অন্যতম স্টেডিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তবে এর পেছনে রয়েছে তার অক্লান্ত শ্রম ও ত্যাগ। শুধু তাই নয়, ১৯৫৯ সালে স্টেডিয়ামের ভিত্তি প্রস্তরের সময় তিনি নিজের বাড়ির ভাঙ্গা ইট দিয়ে সহায়তা করেন।
এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে দান অনুদান এনে স্টেডিয়ামের ক্রীড়া কাজকে এগিয়ে নেন। তার চেষ্টায় যশোরে বিশাল স্টেডিয়াম ছাড়াও নির্মিত হয়েছে জিমনেসিয়াম, এ্যাথলেট হোস্টেল ও ব্যায়মাগার। শামস্ উল হুদা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্ব পালনকালে জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলায় যশোর অনেক সফলতা পায়। এছাড়া যশোরে অনুষ্ঠিত হয় অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলা। তার সুদক্ষ পরিচালনায় যশোর জেলা ফুটবল ১৯৭৬ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ওই বছর ঢাকার বাইরে সর্বপ্রথম যশোরে জাতীয় এ্যাথলেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। তিনি জেলা ক্রীড়া সংস্থার পাশাপাশি অনেক জাতীয় দায়িত্বও পালন করেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি জাতীয় ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন বোর্ড, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ও খুলনা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ছিলেন।
স্বাধীনতা পূর্বকালে তিনি ‘ইস্ট পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন’র সদস্য ছিলেন। ক্রীড়াঙ্গনের পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। ছাত্রজীবনে মুসলিম স্টুডেন্ট লীগ পরবর্তীতে মুসলিম লীগের জেলা সহ-সভাপতি হন। এছাড়া তিনি যশোরইনস্টিটিউট, শিল্পকলা একাডেমি, রেডক্রিসেন্ট ও যশোর ক্লাবের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি এনএম খান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মাহামুদুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা সমিতি, বিএভিএস, উপশহর কলেজ’র সভাপতি দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ‘যশোর রেলওয়ে’, মহিলা কলেজ, নব কিশলয় কিন্ডার গার্ডেন স্কুল, মোমিন গার্লস স্কুল, ও যশোর আলিয়া মাদ্রাসার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন।১৯৭৭-৭৮ এ বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৭ এতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করে। ১৯৮৭ সালের ১৪ ফ্রেবুয়ারি তিনি পৃথিবী ছেড়ে চিরবিদায় নেন।
আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর