Friday, December 5, 2025

খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ

খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ! ১ মাসের ব্যবধানে প্রাণ গেল ২০ জনের। এছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে দুর্ঘটনার মারা গেছে আরো ৫ জন। আহত হয়েছেন শতাধিক।

মহাসড়কটির বারোবাজারে মর্মান্তিক বাস-ট্রাক দুর্ঘটনায় নিহত ১২ জনের মধ্যে ৬ জনই শিক্ষার্থী। তারা যশোর এমএম কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল।

গত মাসের ১৩ জানুয়ারি এই মহাসড়কটির শৈলকুপার মদনডাঙ্গাতে ট্রাকে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে ৮ শ্রমিক মারা যায় আর চলতি মাসের১০ ফেব্রুয়ারী বারোবাজারে ঝরল ১২ জনের প্রাণ।

একের পর এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস।  শোকের মাতম শেষ হতে না হতেই  নতুন করে শুরু হচ্ছে  নতুন মাতম।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের দারিদ্র মনোজিত দাস তার ছেলে সনতন দাস কে সুদে টাকা নিয়ে পড়ালেখা করিয়ে আসছিলেন  ভবিষ্যতে সংসারের হাল ধরবে সে আশায়। যশোর এমএম কলেজের মাস্টার্স শেষ বর্ষের মেধাবী শিক্ষার্থী সনাতন দাস। দেড় বছর আগে বিয়ে হয় তার। তবে মহা সড়ক কেড়ে নিল সনাতনের প্রাণ, ঘরে থাকল তার ৬ মাসের একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান । কান্নায় ভেঙে পড়ে বারবার জ্ঞান হারানো সনাতনের বাবা মনোজিত বিলাপ করছিলেন আর বলছিলেন সুদে করে টাকা নিয়ে ছেলের পড়ালেখা চালানোর কথা।

কালীগঞ্জের সুন্দরপুরের কৃষক ইসাহাক আলীর ছোট ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান কল্লোল  এসআই হিসাবে পুলিশে কর্মরত। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পোষ্টিং তার। বাবাকে বলেছিলেন ভিডিও মোবাইল কিনে দেবে যাতে মা ও বাবার সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলতে পারেন। সে স্বপ্ন তার স্বপ্নই রয়ে গেল।

প্রত্যক্ষদর্শী বারোবাজারের যুবক অনিক রহমান জানান, বাসটি ওভার টেকিং করছিল আর গতি ছিল বে-পরোয়া।  এদিকে গত মাসে শৈলকুপার মদনডাঙ্গাতে ট্রাকের সঙ্গে নসিমনের সংঘর্ষে ৮ জন নিহতের ঘটনা সম্পর্কে সেখানকার প্রত্যক্ষদর্শী রাস্তার পাশের ব্যবসায়ী এরশাদ হোসেন জানান, সড়কটির ভাঙা অংশের পাশ দিয়ে ট্রাকটি যেতে গিয়ে বিপরীত দিকের নসিমনের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে নসিমন চাপায় ৮ জন মারা যায়।

এদিকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ নিহত অন্যান্যদের বাড়িতে বাড়িতেও চলছে একই রকমের আহাজারি।

প্রশ্ন উঠেছে হাইওয়ে পুলিশ আর ট্রাফিকের কার্যক্রম নিয়ে।  সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরে নিষ্কৃতার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। তাই, মৃত্যু ফাঁদ হিসেবে খ্যাত ১শ কিলোমিটারের বেশি খুলনা-কুষ্টিয়া মহা সড়কে বেপরোয়া যান চলাচল বন্ধের আহ্বান সাধারণ মানুষের।

এদিকে একের পর এক এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সড়কে প্রাণহানী চলতে থাকায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত শুরু করেছে। সড়ক পরিবহন আইন অমান্যকারী, ফিটনেস বিহীন গাড়ি, চালকের লাইসেন্স না থাকা, ওভার টেকিং, ওভার স্পিডসহ নানা অনিয়মে জড়িতদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে।

এই অভিযান পরিচালনাকারী ঝিনাইদহের ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ভূমি  মোহাম্মদ আব্দুল্লা আল মামুন ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, ডিসি সরোজ কুমার নাথের নির্দেশে এই অভিযান শুরু হয়েছে। অব্যহত দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জানিয়ে বলেন,  মহাসড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহনে অভিযান চলবে।

ঝিনাইদহের ডিসি সরোজ কুমার নাথ জানিয়েছেন, মহাসড়কটিতে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার  খবর পাওয়া মাত্র হতাহত পরিবারের স্বজনদের সাধ্যমতো সহযোগীতা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বারোবাজারের দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে দেখা হবে বাস-ট্রাকের কার গতিবিধি কেমন ছিল, কে দায়ী।  সড়ক পরিবহন আইনে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।  এছাড়া দুর্ঘটনা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত শুরু করা হয়েছে।

বুধবার এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ৯ জন, পরে হাসপাতালে আরো একজন ও আহত একজনকে বাড়ি নিয়ে গেলে সেও মারা যায়। বৃহস্পতিবার ভোরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে আরো একজন মারা যায়। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ঝিনাইদহের ৮জন, মাগুরার ১জন, যশোরের ১জন, চুয়াডাঙ্গার ২জন মারা গেছে।

অনলাইন ডেস্ক

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর