Friday, December 5, 2025

কোটি টাকা হাতানো মিন্টু দম্পতির প্রতারণা চলছেই: সংবাদ সম্মেলনে শাস্তির দাবি ভুক্তভোগীদের

যশোরের রেলগেট চোরমারা দিঘিরপাড় এলাকার মিজানুর রহমান মিন্টু ও তার স্ত্রী কুমারি বৃষ্টি রানী ওরফে বৃষ্টি বেগম ওরফে মারিয়া নূর বৃষ্টির প্রতারণা ও হয়রানিমূলক কার্যক্রম চলছেই। নাটোরে আস্তানা গেড়ে বিশাল বেতনে কানাডাসহ বড় বড় দেশে পাঠানোর নামে ভিসা প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েও ক্ষ্যান্ত হননি তারা। উল্টো ভুক্তভোগী ও পাওনাদারদের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দেয়াসহ মনগড়া কাগজপত্র তৈরি করে উপস্থাপন করছেন। ‘চোরের মায়ের বড় গলা’ করার মতো আস্ফালন দেখিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়ে যশোর, নাটোর, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার শ’ শ’ যুবকের সাথে প্রতারণা করে চলেছেন। প্রতারণায় অভিযুক্ত হয়ে ক’দিন আগে এই দম্পতি আটক হলেও স্ত্রী বৃষ্টি জামিন পেয়ে যথেচ্ছ কাজ করে চলেছেন। নিজের ও স্বামীর প্রতারণা বলয় ব্যবহার করে সহজ সরল লগ্নিকারী বিদেশ গমনেচ্ছুকদের হয়রানি করছেন, মিথ্যা মামলায় জড়াচ্ছেন। এসব থেকে প্রতীকার পেতে ওই দম্পতি ও তাদের সাগরেদদের কঠোর শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

কোটি টাকা হাতানো মিন্টু দম্পতির প্রতারণা চলছেই: সংবাদ সম্মেলনে শাস্তির দাবি ভুক্তভোগীদেরমামলা ও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে দেশ জুড়ে প্রতারণায় লিপ্ত হয় মিজানুর রহমান মিন্টু ও বৃষ্টি খাতুন দম্পতি। তাদের বিরুদ্ধে যশোর ও নাটোর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ এবং মামলা হয়। এর আগে পর্তুগাল পাঠানোর নামে ৪০ জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন মিজানুর রহমান মিন্টু ও বৃষ্টি খাতুন। এই প্রতারক দম্পতির কবলে পড়ে ৪৪ পরিবারের স্বপ্ন ভেঙেছে। নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযুক্ত মিজানুর রহমান মিন্টু যশোর শহরের চাঁচড়া চোরমারা দিঘিরপাড় এলাকার আবুল কালামের ছেলে। টাকা হাতিয়ে মিন্টু ও তার স্ত্রী বৃষ্টি নাটোরে আস্তানা গেড়ে নানামুখি ষড়যন্ত্র ও নয়া প্রতারণায় লিপ্ত হন।

যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা পাস করা বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুল্লা গ্রামের নাজমুল হক মুন্নুর ছেলে নাঈমুল হক নাবিল (২৩) উন্নত জীবনের আশায় কানাডায় পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন।

তার দাবি, ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য মায়ের জমি বিক্রি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা থেকে নেয়া ঋণের মোট ১৫ লাখ টাকা তুলে দেন মিন্টুর হাতে। মিন্টু সেই টাকা নিয়ে যশোরের কার্যালয় গুটিয়ে নাটোরে গিয়ে নতুন কার্যালয় খুলেছেন। এখন পাসপোর্ট-ভিসাও দিচ্ছেন না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানের বিদেশ গমনেচ্ছুকদের ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এরমধ্যে গত ২৭ সেপ্টেম্বর যশোরের কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন নাবিলের ভগ্নিপতি শেখ হাসানুর রহমান।

এর আগে অভিযোগকারীদের আরেকজন যশোর সদর উপজেলার সিরাজসিংহা গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে বাবলুর রহমান মিন্টুর বিরুদ্ধে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নাটোর সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

বৈধ পথে শ্রমিক ভিসায় কানাডায় পাঠানোর নামে চার যুবকের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যশোর থেকে পালিয়ে যান নাটোরে। সেখানে সদর উপজেলার বড় হরিশপুর এলাকায় ইউরো ভিসা হেল্প সেন্টার বিডি নামের একটি নতুন অফিস খুলে নয়া প্রতারণা শুরু করেন মিজানুর রহমান মিন্টু দম্পতি। টাকা ফেরত চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া শুরু করে ওই চক্রটি। এরপর ১৫ অক্টোবর শেখ হাসানুর রহমানের মামলার অভিযুক্ত ওই মিন্টু ও বৃষ্টিকে নাটোর থেকে ধরে এনে যশোর কোতোয়ালি থানা পুলিশ জেলহাজতে পাঠায়।

ওই দিন শ’ শ’ ভুক্তভোগী আদালত চত্বর ও প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হয়। তখন শহরের প্রধান আলোচনার বিষয় ছিল এই মিন্টু-বৃষ্টি প্রতারক চক্র। তবে, অল্প দিনেই জামিন পেয়ে যায় প্রতারক চক্রের বৃষ্টি। আর জামিন পেয়েই শুরু করেছে হয়রানি ও নয়া প্রতারণা। টাকা পাওয়া ভুক্তভোগীরা যারা টাকা দাবি করছেন বা টাকার জন্য মামলা করেছেন তাদের নামে মিথ্যা কাগজ তৈরি করেছে এই চক্র।

এসব নিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন ভুয়া স্ট্যাম্প করছে নোটারি পাবলিকসহ। সরকারি কাগজও জাল করেছে। কানাডা ভ্রমণ প্রত্যাশী চারজনসহ প্রায় ৩০ জনের নামে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করছে ওই দম্পতি চক্র। ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ায় তাদের টাকাও গেল, ভবিষ্যৎ যেনো গেল, এখন আবার কোটে দৌড়াদৌড়ি। ভুয়া ভিসা, ভুয়া স্ট্যাম্প, ভুয়া চুক্তিপত্র, ভুয়া বি,এম, ই, টি কার্ড, ভুয়া প্লেনের টিকিট বানিয়ে নয়া প্রতারণা করছে।

জামিনের সুযোগ নিয়ে চক্রের হোতা বৃষ্টি বেশি সাহস সঞ্চয় করছেন। কেউ কিছু বললেই আইসিটি মামলা দেয়ারও হুমকি দিচ্ছেন এবং অনেকের নামে মামলাও করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম সান্টুসহ বিভাজন, হৃদয় মিয়াসহ তিনজন অপুসহ দু’জন, বাবলুসহ চারজন, এছাড়াও অনেককেই আসামি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী নাঈমুল হক নাবিল জানান, যশোর থেকে ভুয়া প্রেগন্যান্সি এবং মিন্টু স্বামী নয় এমন দাবি করে জামিন নিয়েছেন বৃষ্টি। নাটোরের ডাক্তার তাপস গোস্বামী টাকা পেয়েছেন মর্মে স্ট্যাম্প করেছেন। যেটা আসলে ভুয়া, ডাক্তার তাপস এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না সইও তার না। এই পর্যন্ত যত মামলা বা স্ট্যাম্প এর কোনো সই আসল সইয়ের সাথে মেলেনা। তবুও মামলা করেই যাচ্ছেন। প্রতারণা মামলা থেকে বাঁচার জন্য এবং অর্থ আত্মসাৎ করতেই জালজালিয়াতি করছেন।

টাকা, পাসপোর্ট সবই রয়েছে ওই চক্রের হাতে, যা ফেরত চান ভুক্তভোগীরা। তারা মিন্টু-বৃষ্টির দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান। জামিনের শর্ত খেলাপ করে ভিকটিমদের হুমকি দিচ্ছে ওই বৃষ্টি। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে শেখ হাসানুর রহমানের সাথে একটি গাড়ি প্রতারণা করেছে। ভুঁইফোড় বানোয়াট কাগজ বানিয়ে হয়রানি করে চলেছে শেখ হাসানুর রহমানের পরিবারকে।

এদিকে একটি অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা নাটোর সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, তথ্য পেয়েছেন, মিজানুর রহমান দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর নামে অফিস খোলেন। এরপর ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে হাতিয়ে লাপাত্তা হন। কিছুদিন পর আরেক জেলায় গিয়ে নতুন অফিস খোলেন। যশোরেও তিনি একই কাজ করেছেন। নাটোরের একটি বাড়িতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে তিনি অফিস করেছেন। ওই বাড়ির মালিকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছেন, দিনের বেলায় অফিসটি বন্ধ থাকে। রাতে দু’ থেকে তিন ঘণ্টার জন্য অফিস খোলা হয়।

আরো পড়ুন

সর্বাধিক পঠিত

এই বিভাগের আরো খবর