যশোরের তানযীমুল উম্মাহ প্রি-হিফয মাদরাসার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনাকে পুঁজি করে প্রতিষ্ঠানের কাছে কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। টাকা না দিলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করা ও বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার
চালানোর হুমকি দেয় একটি চক্র। প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ টাকা না পাওয়ায় শেষমেশ সেই অপপ্রচারই করেছে তারা। এছাড়া নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর হাত ভাঙেনি, তবুও অকারণে বেন্ডেজ করে প্রচার করা হয়েছে যে “হাত ভেঙে ফেলা হয়েছে”। মাদরাসা সম্পর্কে মনগড়া নানা অভিযোগ তুলে সুনাম ক্ষুণ্ন করা হয়েছে বলেও দাবি প্রতিষ্ঠানটির। এসব অভিযোগ এনে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে রাতদিন নিউজে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। সঙ্গে পাঠানো হয়েছে শিক্ষার্থীর হাতে কোনো ভাঙন নেই— এমন একটি মেডিকেল রিপোর্ট। যশোরের তানযীমুল উম্মাহ প্রি-হিফয মাদরাসার ৫টি ব্রাঞ্চের প্রধান আজমল হোসেন সাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ১২ নভেম্বর সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে হিফয শিক্ষক আব্দুস সামীর অসাবধানতাবশত টান দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থী রাইয়ান হাত ফসকে নিচে পড়ে যায় এবং হাতে হালকা আঘাত পায়। বিষয়টি জানতে পেরে দায়িত্বশীলরা সঙ্গে সঙ্গে রাইয়ানকে হাসপাতালে পাঠান এবং অভিভাবককে অবহিত করেন। অভিভাবক এক্সরে রিপোর্ট না দেখেই শিশুটির হাতের কনুই ‘চটে গেছে’ বলে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল রিপোর্টে প্রমাণিত হয়— রাইয়ানের হাতে কোনো ভাঙন বা ফ্র্যাকচার ছিল না। ঘটনার পরপরই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা বিবেচনায় অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুস সামীরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং পরে ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া ওই শাখার প্রধান
সাইফুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করে যে, ঘটনার পর শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও তৃতীয় পক্ষ মাদ্রাসায় এসে ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টিকে বড় করে উপস্থাপন করে এবং প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্ষতিপূরণের নামে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করলে তারা বিভিন্ন গণমাধ্যমে মাদরাসায় ‘টর্চার সেল’ আছে বলে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা শুরু করে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে অভিভাবক ও
সাধারণ মানুষের মনে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, তার জন্য প্রতিষ্ঠান আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শাখা প্রধান সাইফুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছিলেন পিয়াল ও মাহমুদ নামে দুইজন। তারাই মূলত মারমুখী আচরণ ও উগ্র ব্যবহার করেছেন। চাঁদাদাবির নেপথ্যে রয়েছেন তারা।
তবে, আহত শিক্ষার্থী রাইয়ানের বাবা রাসেল আহমেদ সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলেছিল ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়াবে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমি বলেছি— আমাকে কোটি টাকা দিলেও মীমাংসায় রাজি হব না। আমি বিচার চাই।” তিনি আরও দাবি করেন, পিয়াল ও মাহমুদ তার নিকট আত্মীয় হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষের পাঠানো বিবৃতির তথ্যকে তিনি মনগড়া ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন।
বিশেষ প্রতিনিধি







