যশোরে এক যুবককে ছুরিকাঘাত করে জখম ও টাকা এবং সোনার গহনা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ওয়ার্ড যুবদল সভাপতিসহ নয়জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। মামলার পর এবার জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে ঘটনাটির তদন্ত শুরু হয়েছে।

সাইফুল রামনগর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি ও বলাডাঙ্গা শ্রীকান্তনগর গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে সাইফুলের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন বলাডাঙ্গা গ্রামের আকরাম হোসেনের স্ত্রী রেবেকা খাতুন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন একই গ্রামের নজরুল মোল্লা, আরিফুল ইসলাম, ইসমাইল, সিহাব, ইমরান, ইমন, নয়ন ও আশিক। তবে এ মামলায় এখনো কাউকে আটক করা হয়নি।

বাদী রেবেকা খাতুনের অভিযোগ, তার ছেলে নাইমুল হোসেন একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। অন্যদিকে আসামিরা মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। নাইমুল এসব কাজে বাধা দেওয়ায় তাদের সঙ্গে শত্রুতা শুরু হয়। এর জেরে আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে হুমকি দিয়ে আসছিলেন।

গত ২৭ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে নাইমুল বলাডাঙ্গা গোবিন্দ মোড়ে বসে ছিলেন। এ সময় সাইফুলসহ অন্য আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার ওপর হামলা চালায়। সাইফুল নাইমুলকে একের পর এক ছুরিকাঘাত করে, অন্যরা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে পকেটে থাকা ৪৯ হাজার ৫০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। রেবেকা খাতুন ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে আহত করা হয় এবং তার গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়। পরে তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামিরা হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়।

রেবেকা খাতুন জানান, নাইমুল হোসেন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলের দুঃসময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন। ৫ আগস্টের পর সাইফুলসহ তার সহযোগীরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। বিষয়টি তিনি দলীয় নেতাদের জানান। তার বিরুদ্ধে তদন্ত টিমও পাঠানো হয়। সেসময় তার বিরুদ্ধে কথা বললে এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না বলে হুশিয়ারি দেওয়া হয়। পরে সবাই চুপ হয়ে যান। অন্যদিকে দলীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ দেয়ায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সাইফুল। সম্প্রতি তার ছেলেকে ছুরিকাঘাত করে জখম করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করার পর সাইফুল নানা হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন।
বাধ্য হয়ে রেবেকা শুক্রবার রাতে জেলা বিএনপির পার্টি অফিসে যান। এ সময় খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নিজে তাদের সমস্যার কথা শোনেন এবং আশ্বস্ত করেন। পরে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জেলা যুবদলকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ

দেন।
এ বিষয়ে যশোর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনছারুল হক রানা বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। রাতে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে যুবদল নেতা খোরশেদ আলম বাবু, তানভীর রায়হান তুহিন ও আবুল কালাম আজাদের সমন্বয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কাজও শুরু করেছেন। অপরাধের সঙ্গে সাইফুলের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই দেবাশীষ জানান, প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। সাইফুলসহ অন্য আসামিরা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, সাইফুলের বিরুদ্ধে এর আগেও মাদকসহ নানা অপরাধের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। মাদকসহ আটকও হয়েছেন, এমনকি জেলও খেটেছেন। মাদকসহ আটকের একটি ভিডিও একসময় ভাইরালও হয়েছিল।
সাকিব হাসান







