মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধিঃ মণিরামপুর উপজেলার কদমবাড়ীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার শেখ আবুল খায়ের ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু মুসা লিটনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। শিক্ষক উপস্থিতি, কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং অর্থসংক্রান্ত অভিযোগকে ঘিরে প্রতিষ্ঠানজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ অক্টোবর (শুক্রবার) শিক্ষক ও কর্মচারীদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছুটির দিনে সভা আয়োজন নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।
জানা যায়, সভাপতি আবু মুসা লিটন সাতক্ষীরা একটি বেসরকারি এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন। অপরদিকে সভাপতির দাবি, সুপার শেখ আবুল খায়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে তা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি নিয়মিতভাবে ক্লাস নেন না এবং দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন। এসব বিষয় নিয়েই সভাটি আয়োজন করা হয় বলে জানান সভাপতি।
শুক্রবারে সভা আয়োজনের কারণ জানতে চাইলে সভাপতি বলেন, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই শুক্রবার দিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ওই সভায় সহকারী শিক্ষিকা (আইসিটি) রত্না জেসমিন উপস্থিত না থাকায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সুপার শেখ আবুল খায়েরের স্বাক্ষরিত নোটিশে বলা হয়, ১৭/১০/২০২৫ ইং তারিখ শুক্রবার সকাল ১০টায় অফিস কক্ষে কমিটি ও শিক্ষক-কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই আপনি উপস্থিত ছিলেন না। কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা ৩০/১০/২০২৫ তারিখের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে হবে।
রত্না জেসমিন এ বিষয়ে বলেন, সেদিন সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় মাদ্রাসায় যেতে পারিনি এবং সভাপতি, সুপার ও সহঃসুপার সাথে মোবাইল ফোনে অসুস্থ্যতার কথা জানানো হয়েছিল। তাছাড়া সভা করেছে ১৭ তারিখে আর আমাকে নোটিশ দিয়েছে ২৮ তারিখে।
বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুক্রবারে সভা আয়োজন করা অস্বাভাবিক, কারণ দিনটি সাধারণত ছুটির দিন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক মহলে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
সুপার শেখ আবুল খায়ের সভাপতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সভাপতির সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি একটি বেসরকারি এজেন্ট ব্যাংকের সাথে যুক্ত আছেন এবং নিজের সুবিধার্থে শুক্রবার সভার দিন নির্ধারণ করেছেন। আমি নিয়মিতভাবে ক্লাস নিই এবং কোনো আর্থিক অনিয়মে জড়িত নই। সভাপতির নির্দেশেই রত্নাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সভাপতি আবু মুসা লিটন বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য সভা ডেকেছি। আমি বলেছি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া যাবে না, এ কথা বলাতেই আমি খারাপ হয়ে গেছি। আগে শিক্ষকরা অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে ভাগাভাগি করতেন। আমি সেটা বন্ধ করেছি। এখন মাদ্রাসার উন্নয়ন হচ্ছে।
স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, সুপার ও সভাপতির দ্বন্দ্বে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তারা দ্রুত তদন্ত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার আহ্বান জানিয়েছেন।
আর কে-০১







